কলকাতা, ১০ মার্চ : সামনে ছিল আই লিগ জেতার হাতছানি। ১৬ বছরের খরা কাটানোর সুযোগ। জিততেই হত ইস্টবেঙ্গলকে। আর হারতে বা ড্র করতে হত চেন্নাইকে। কিন্ত, কোঝিকোড়ে ম্যাচ। তাই বুকে আশা নিয়ে ইস্টবেঙ্গল ক্লাব তাঁবুতে জায়ান্ট স্ক্রিনে ম্যাচ দেখানো হয়। প্রিয় দলের খেলা দেখতে লেসলি ক্লডিয়াস সরণির ক্লাবে তিলধারণের জায়গা ছিল না। কিন্তু, শেষপর্যন্ত জিতলেও ক্লাবে মশাল জ্বলল না। চেন্নাইয়ের জয়ে আরও একবার স্বপ্ন ভেঙে গেল লাল-হলুদ শিবিরের।
মশাল নিভতেই কান্না, তীরে এসে তরী ডোবার ট্র্যাডিশন অব্যাহত ইস্টবেঙ্গলের - trophy
চেন্নাইয়ের জয়ে আরও একবার স্বপ্ন ভেঙে গেল লাল-হলুদ শিবিরের। শেষপর্যন্ত জিতলেও ক্লাবে মশাল জ্বলল না। অধরা থাকল আই লিগ খেতাব।
ম্যাচের প্রতিটি মুহূর্তে সদস্য-সমর্থকদের হাসি-কান্না-আফসোস, আবেগের সাক্ষী হয়ে রইল কলকাতা ময়দান। চেন্নাই সিটি তাঁদের প্রতিপক্ষের তুলনায় ধারে ভারে এগিয়ে। তবুও প্রথমে মিনার্ভা পঞ্জাবের গোল করার খবরে লাল-হলুদ সমর্থকদের মধ্যে আশার সঞ্চার হয়েছিল। যে কোনও মূল্যে শেষ ম্যাচ জিততে হবে। ম্যাচের তিন মিনিটেই মিনার্ভার গোলে আশা বেড়েছিল ইস্টবেঙ্গলের। কিন্তু, নিজেদের দলের সুযোগ নষ্টের বহর দেখে আশঙ্কার মেঘ দেখা দিয়েছিল লাল-হলুদ আকাশে। তারই মধ্যে লাল-হলুদ সমর্থকদের চুপ করিয়ে ৬৯ মিনিটে গোল করে গোকুলাম। ঠিক একই সময় ২-১ গোলে এগিয়ে যায় চেন্নাই। ১০ মিনিট পরই জাইমে স্যান্টোস সমতায় ফেরাতে কিছুটা আশার আলো জ্বলে উঠেছিল। ৮৫ মিনিট লাল-হলুদকে এগিয়ে দেন ডানমাওয়াই। লাল-হলুদ সমর্থকরা উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়েছিলেন। একদিকে নিজেদের খেলার দিকে চোখ রাখছিলেন। অপরদিকে, নজর ছিল চেন্নাই ম্যাচে। একইসঙ্গে তাঁরা ইস্টবেঙ্গল ও মিনার্ভার হয়ে গলা ফাটাচ্ছিলেন। মিনার্ভা আর একটা গোল করতে পারলেই কাটত আই লিগ খরা। কিন্তু, অতিরিক্ত সময়ে উলটে গোল করে যায় চেন্নাই। তখন ইস্টবেঙ্গল তাঁবুতে পিন পড়লেও শোনা যেত শব্দ। বিস্ময়ে, দুঃখে কেঁদে ফেলেন অনেকে। সকলেই একমত, আলেয়ান্দ্রো মেনেনদেসের ছেলেরা তাদের কাজটি করেছে। কিন্তু, ফুটবল দেবতা সহায় ছিলেন না।
তবে, শেষ মুহূর্তে ভরাডুবি ইস্টবেঙ্গলের কাছে নতুন বিষয় নয়। এর আগে, ২০০৪-০৫ সালে ইস্টবেঙ্গল, স্পোর্টিং ক্লুব দা গোয়া ও ডেম্পো শেষ ম্যাচ পর্যন্ত খেতাবি দৌড়ে ছিল। কিন্তু, শেষ ম্যাচে ইস্টবেঙ্গল ভাস্কোর কাছে হেরে যায়। টালিগঞ্জ অগ্রগামীকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় ডেম্পো। প্রায় একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয় ২০১০—১১ সালে। ইস্টবেঙ্গল ২২ ম্যাচে ৪৭ পয়েন্টে ও সালগাওকর ২৪ ম্যাচে ৫০ পয়েন্টে দাঁড়িয়ে ছিল। বাকি চার ম্যাচের তিনটিতে জয় দরকার ছিল। কিন্তু, চিরাগ ইউনাইটেড ছাড়া বাকি ম্যাচগুলিতে পয়েন্ট নষ্ট করেছিল ইস্টবেঙ্গল। চ্যাম্পিয়ন হয় সালগাওকর। গত মরশুমে শেষ দুটো ম্যাচে জিতলে চ্যাম্পিয়ন হত ইস্টবেঙ্গল। কিন্তু, লাজং এফসি ও নেরোকার বিরুদ্ধে ড্র করে ফের স্বপ্নভঙ্গ হয়েছিল লাল হলুদের। আর এবার ঘরের মাঠে অপ্রত্যাশিত পয়েন্ট নষ্টের খেসারত দিতে হল ইস্টবেঙ্গলকে। এসব তথ্য শুনতে শুনতেই আরও একটা বছরের অপেক্ষা সম্বল করে ক্লাব তাঁবু ছাড়ছিলেন সমর্থকরা।