পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / sports

পঞ্চাশ বসন্ত পেরিয়ে ভারতীয় ক্রিকেটে আজও বিরাজমান দ্রাবিড়ীয় সভ্যতা

Happy Birthday Rahul Dravid: টেস্ট অভিষেকের প্রথম দিন থেকে রাহুল দ্রাবিড় সবসময় লাইম লাইটের পেছনে । 2003 সালে অধিনায়কের অনুরোধে উইকেটরক্ষক হয়েছেন । ব্যাট হাতে তিনি সবসময় মধুসূদন দাদা । বোর্ড প্রেসিডেন্টের কাছ থেকে সিনিয়র দলের দায়িত্ব নেওয়ার প্রস্তাবে পিছিয়ে যাননি । চ্যালেঞ্জ নিয়েছেন । নিজস্ব ক্রিকেটীয় দর্শন রোহিত-কোহলিদের মধ্যে প্রবেশ করিয়েছেন । তাই নিখুঁত অর্কেষ্ট্রার মত বাজছে টিম ইন্ডিয়া ।

Etv Bharat
Etv Bharat

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Jan 11, 2024, 3:36 PM IST

Updated : Jan 11, 2024, 8:16 PM IST

হায়দরাবাদ, 11 জানুয়ারি:ক্রিকেট জেন্টলসম্যান গেম । গোদা বাংলায় ভদ্রলোকের খেলা । সবুজ গালিচায় নেমে বারবার এই প্রবাদের নয়া সংজ্ঞা দিয়েছেন ইন্দোরের এক যুবক, নাম রাহুল শরদ দ্রাবিড় । মৃদুভাষী, শান্তশিষ্ট জ্যামিই ছিলেন বোলারদের কাছে বিভীষিকা । আক্রমণাত্মক কিংবা মারকুটে নন, উইকেটের সামনে সদা শান্ত রাহুল ।

সাতের দশকে হেলমেট ছাড়া খেলতে হত ব্যাটারদের । সামলাতে হত বিধ্বংসী ক্যারিবিয়ান পেসারদের । সুনীল গাভাসকার বলেছিলেন, হাতে ব্যাট থাকলে বল গায়ে লাগার কোনও প্রশ্নই নেই । বর্ণাঢ্য কেরিয়ারে সে পণটাই করেছিলেন 'দ্য ওয়াল' । উইকেটের সামনে এমন বর্ম তুলে দাঁড়াতেন, জ্যামির নামই হয়ে গিয়েছিল 'দ্য ওয়াল' । শুধু ব্যাটারই নয়, স্লিপে দাঁড়ানো দ্রাবিড়কে সমীহ করতেন তাবড় তাবড় ব্যাটাররাও । অনিয়মিত উইকেটরক্ষক রাহুল আন্তর্জাতিক কেরিয়ারে তালুবন্দি করেছেন 406 বার ।

টেস্ট অভিষেকের প্রথম দিন থেকে রাহুল দ্রাবিড় সবসময় লাইম লাইটের পেছনে

2003 বিশ্বকাপে চূড়ান্ত টিমম্যান, ফাইনালে হারলেও বীরেন্দ্র সেহওয়াগের সঙ্গে বড় জুটি গড়েছিলেন দ্রাবিড় (57 বলে 47) । সচিন-সৌরভের ব্যর্থতার দিনে দলকে খানিক এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন পঞ্চ পাণ্ডবের অন্যতম । 2007 বিশ্বকাপে শুধু ব্যাটার নয়, অধিনায়কের দায়িত্ব বর্তেছিল রাহুল দ্রাবিড়ের কাঁধে । যদিও জঘন্য পারফর্ম্যান্সে গ্রুপ পর্যায় থেকেই ছিটকে গিয়েছিল 'মেন ইন ব্লু', হারতে হয়েছিল বাংলাদেশের কাছেও ।

কোচ রাহুল:

খেলোয়াড় হিসেবে যতটা বন্দিত, দ্রোণাচার্যের ভূমিকায় ততটাই প্রশংসিত দেশের অন্যতম সফল ব্যাটার । এনসিএ প্রধান হিসেবে তৃণমূল স্তর থেকে খেলোয়াড় তুলে আনায় পারদর্শী দ্রাবিড়কে অনুর্ধ-19 দলের দায়িত্ব দিয়েছিল বিসিসিআই । তাঁর হাত ধরে তখন তৈরি হচ্ছেন শুভমন গিল, ঈশান পোড়েলের মতো ক্রিকেটাররা ৷ বিশ্বকাপ সফরে অজেয় থেকে ট্রফি হাতে তুলেছিল পৃথ্বী শয়ের দল ৷ বিশ্বকাপের স্কোরকার্ডে চোখ রাখলেই ছবিটা পরিষ্কার হবে । বিশাল বিশাল ব্যবধানে প্রতিপক্ষকে উড়িয়ে দিয়েছিল অনুর্ধ্ব-19 দল । সেবার অস্ট্রেলিয়াকে 100 রানে, পাপুয়া নিউগিনিকে 10 উইকেটে, জিম্বাবোয়েকে 10 উইকেটে, বাংলাদেশকে 131 রানে হারায় ভারত ৷ সেমিফাইনালে তো পাকিস্তানকে দাঁড়াতেই দেননি গিলরা ৷ পাকিস্তানকে তাঁরা হারান 230 রানে ৷ আর তারপর ফাইনালে অস্ট্রেলিয়া 8 উইকেটে ধরাশায়ী ।

ভারতীয় ক্রিকেটে আজও দ্রাবিড়ীয় সভ্যতা বিরাজমান

তারপরেই বড়দের দলের হেডস্যরের দায়িত্ব পান রাহুল । কানের পাশে চুলে একটু পাক ধরেছে ৷ বয়সটা পৌঁছে গিয়েছে হাফ-সেঞ্চুরির কাছাকাছি ৷ এই রাহুল একদিন দলের জন্য হাতে তুলেছিলেন কিপিং গ্লাভস ৷ তেমনই এবার তুলে নেন হেডস্যরের দায়িত্ব ৷ প্রশাসকের চেয়ারে বসে সেদিন সেই কাজটা করেছিলেন বোর্ড প্রেসিডেন্ট সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় । ভারতীয় ক্রিকেটকে ফের সাফল্যের আলোয় নিয়ে আসতে কোচের চেয়ারে বসিয়ে ছিলেন দ্রাবিড়কে । টেস্ট ও ওডিআই, দুই ফর্ম্যাটেই দলকে এক নম্বর ব়্যাংকিংয়ে পৌঁছে দিয়েছিলেন । সদ্য বিশ্বকাপে দুরন্ত ফল করেছে 'মেন ইন ব্লু' । ফাইনালে অজিদের কাছে হারতে হলেও গোটা বিশ্বকাপে অপ্রতিরোধ্য ছিল ভারতীয় দল । তারপরেই দ্রাবিড়ের চুক্তি ফের বাড়িয়েছে বোর্ড ।

অচেনা দ্রাবিড়:

ক্রিকেটের সব ফর্ম্যাট থেকেই অবসর নিয়ে ফেলেছেন । শৈশবের ক্লাব বিইউসিসি (ব্যাঙ্গালোর ইউনাইটেড ক্রিকেট ক্লাব) কর্ণাটক স্টেট ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের টুর্নামেন্টে কার্যত ধুঁকছে । দ্রাবিড়ের কাছে অনুরোধ গেল, অবনমনের সীমায় থাকা দলের বিপদে পাশে দাঁড়াতে । স্টুয়ার্ট বিনির সঙ্গে জুটি বেঁধে সপ্তাহান্তে ক্লাবের হয়ে খেলেন দ্রাবিড় । অবসরের পর সাধারণত খেলোয়াড়রা পরিবারের সঙ্গে সময় কাটান । সেখানে সপ্তাহান্তে 30-40 কিলোমিটার গাড়ি চালিয়ে মাঠে যেতেন দ্রাবিড় । শুধু তাই নয়, দুরন্ত সেঞ্চুরিতে দলকে অবনমন থেকে বাঁচান ।

একনজরে দ্রাবিড়নামা:

  • প্রথম ভারতীয় হিসেবে টেস্ট ক্রিকেটে পাঁচটি ডবল সেঞ্চুরির মালিক । যার প্রত্যেকবার আগেরবারের স্কোরকে ছাপিয়ে গিয়েছেন 'দ্য ওয়াল' ।
  • প্রথম ভারতীয় যিনি টানা চার টেস্ট ইনিংসে সেঞ্চুরি করেছেন ।
  • টেস্ট ইতিহাসে প্রথম অনিয়মিত উইকেটরক্ষক যিনি উইকেটের পিছনে 200টি ক্যাচ নিয়েছেন ।
  • টেস্ট ইতিহাসের প্রথম ব্যাটসম্যান যিনি তাঁর সময়ের প্রতিটি টেস্ট খেলা দেশের বিরুদ্ধে সেঞ্চুরি করেছেন ।
  • খেলোয়াড় হিসেবে 2003 বিশ্বকাপের ফাইনাল । অধিনায়ক হিসেবে 2007 বিশ্বকাপে দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করা রাহুল সফল কোচের ভূমিকাতেও ।
  • হেডস্যর হিসেবে বিশ্বসেরা করেছেন অনুর্ধ-19 দলকে ।
  • তাঁর কোচিংয়েই 2023 বিশ্বকাপের ফাইনালে পৌঁছেছিল ভারতীয় দল ।

চিরকালই তিনি 'সেকেন্ড বয়' ৷ সচিন-সৌরভদের ঊজ্জ্বল আলোর পাশে নীরবে নিজের কাজ করে যাওয়া ক্লাসের 'গুড বয়' ৷ যদিও টেস্ট হোক বা ওয়ান ডে, তাঁকে দলের ক্রাইসিস ম্যানেজার হতে হয়েছে বারবার ৷ 2001 সালের ইডেন হোক বা 2003 সালের অ্যাডিলেড ৷ কোচের ভূমিকাতেও দক্ষ কম্পোজারের মতো দলকে বিনিসুতোয় নীরবে নিভৃতে বেঁধে রাখছেন ব্যান্ডমাস্টার রাহুল দ্রাবিড় । স্বভাবসিদ্ধ বিনম্র অঙ্গুলিহেলনে । ফলে খেলোয়াড় বা কোচ, দুই ভূমিকাতে বিশ্বকাপ অভিযানে তীরে এসে তরী ডুবলেও এখনও 'মিঃ ডিপেন্ডেবল' দ্রাবিড়ই ।

আরও পড়ুন:

  1. ‘ভূমিকা বদলেছে, দ্রাবিড় একই আছে’, সতীর্থকে দরাজ সার্টিফিকেট সৌরভের
  2. রাহুল দ্রাবিড়, যিনি ভারতীয় দলকে এক দুর্ভেদ্য দুর্গে পরিণত করেছেন
  3. কোচ তো মাঠে নেমে রান করবেন না, আমার দায়িত্ব পাশে থাকা: রাহুল দ্রাবিড়
Last Updated : Jan 11, 2024, 8:16 PM IST

ABOUT THE AUTHOR

...view details