কলকাতা : গতকাল মাঝরাতে কলকাতা তথা দেশের অন্যতম পরিচিত মহিলা ফ্যাশন ডিজ়াইনার শর্বরী দত্তর মৃতদেহ উদ্ধার হয় বাথরুম থেকে । এই খবর নাড়িয়ে দিয়েছে শুধু তারকাদের নয়, সাধারণ মানুষকেও । সঙ্গে সঙ্গে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে, কীভাবে, কেন এই মৃত্যু ?
কলকাতায় নিজের ব্রডস্ট্রিটের বাড়িতে ছেলে-পুত্রবধূ-নাতি-নাতনিদের সঙ্গে থাকতেন শর্বরী । স্বামী গত হয়েছেন বহু বছর আগে । নিজে থাকতেন গ্রাউন্ড ফ্লোরে । উপরতলায় থাকত ছেলে-বউমা, নাতি, নাতনিরা । আপাতভাবে দেখে মনে হবে, সুখেই থাকতেন তিনি । তবে ইন্ডাস্ট্রিতে কান পাতলে শোনা যায়, দূর থেকে যেটাকে সুন্দর বলে মনে হয়, সেটা হয়তো সুন্দর নাও হতে পারে । হতে পারে, রেশমের কাপড়ের উল্টো পিঠের মত । যার কোনও শ্রী নেই, সজ্জা নেই, নেই কোনও যত্নও । তেমনই আভাস আমরা পেলাম বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে কথা বলে ।
একমাত্র সন্তান অমলীন দত্ত ও পুত্রবধূ কনকলতা দত্তর সঙ্গে নাকি খুব একটা বনিবনা ছিল না শর্বরীর । এও শোনা যায়, কোনও একটি আইনি জটিলতার মধ্যেও জড়িয়ে পড়েছিলেন শর্বরী ।
শর্বরী দত্তর মৃত্যু নিয়ে উঠছে একাধিক প্রশ্ন !
শর্বরী দত্তর মৃত্যু নিয়ে উঠছে একাধিক প্রশ্ন । একজন মানুষ, যাঁর এত নামডাক, এত প্রতিপত্তি, এত শুভাকাঙ্ক্ষী যাঁর, তাঁকে কিনা ঘণ্টার পর ঘণ্টা পড়ে থাকতে হল শৌচাগারে ? কেউ টেরও পেল না ! যখন খবর পেল, ততক্ষণে সব শেষ । এমনটা হল কেন ? একাধিক মহল থেকে উঠে আসছে এই প্রশ্ন ।
বিশ্বস্ত সূত্রে শর্বরী দত্তের এক ঘনিষ্ঠ আমাদের জানিয়েছেন, "আমরা সকলেই জানি, শর্বরীদির বাড়ির পরিস্থিতি কীরকম । তিনি বাড়িতে কী কী পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছেন । সবাই সবটাই জানি আমরা । সারাদিন কেটে যাওয়ার পরে রাত্রিবেলা সকলে বিষয়টা জানতে পারে, যে তিনি মৃত অবস্থায় পড়ে আছেন । এই বিষয়টা বাইরের লোকের কাছে অদ্ভুত হলেও, আমরা যাঁরা ঘনিষ্ঠ ছিলাম, আমাদের কাছে অদ্ভুত নয় । কারণ, এরকমই ট্রেটমেন্ট পেতেন উনি । আমার বারবার নিজের মনে হচ্ছে, আমি জানতে পারলে ছুট্টে চলে যেতাম । আগেরবার, আমাকে ফোনে বলেছিলেন পেটে ব্যথা । আমি সব ছেড়ে গিয়ে দিদিকে প্রথমে হাসপাতালে ভরতি করেছিলাম । এবার যে কিছুই করতে পারলাম না, ওঁকে যে এভাবে চলে যেতে হল, এই শোক থেকে বেরিয়ে আসতে পারছি না । আমি নিজে দেখেছি, অনেক কষ্ট পেয়েছেন, অনেক দুঃখ পেয়েছেন । আমি আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলাম পাশে থাকার । কিন্তু আমি তো ঘরের ভিতরে ঢুকতে পারি না । আমি বাইরের লোক ।"
এদিকে পুলিশ সূত্রে আমরা জানতে পারি, গত মঙ্গলবার শেষবার তাঁকে দেখা যায় । রাতের খাবার খাওয়ার সময় তাঁর সঙ্গে অন্যদের দেখা হয় । তারপর থেকে আর দেখা যায়নি শর্বরীদিকে । ফোনেও পাওয়া যায়নি । অবশেষে খবর দেওয়া হয় পুলিশকে । তাঁরাই মধ্যরাতে গিয়ে দেহ উদ্ধার করে বাথরুম থেকে । তদন্তকারীদের প্রাথমিক অনুমান, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েই মৃত্যু তাঁর । গায়ে কোনও আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি । তবে দেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে শর্বরীর নিথর দেহকে ।