ঢাকা, 5 জানুয়ারি:অন্নদাশঙ্কর রায় লিখেছেন, "যতদিন রবে পদ্মা-যমুনা-গৌরি-মেঘনা বহমান, ততদিন রবে কীর্তি তোমার শেখ মুজিবুর রহমান।" এবার বাংলাদেশের দ্বাদশ সাধারণ নির্বাচনের আগে আরও একবার জাগ্রত মুজিব-আবেগ। দেশের সাধারণ নির্বাচন 7 জানুয়ারি । সংসদের মোট 350টি আসনের মধ্যে 300টি আসনে ভোট নেওয়া হবে। বাকি 50টি আসন সংরক্ষিত মহিলাদের জন্য। নির্বাচনে জয়ী দল বা জোট ওই সদস্যদের মনোনীত করবে। শেখ হাসিনার আওয়ামি লিগের ক্ষমতায় ফেরার সম্ভাবনা উজ্জ্বল বলেই মত রাজনৈতিক মহলের একটা বড় অংশের। সেটা হলে চতুর্থবার প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন বঙ্গবন্ধু-তনয়া। তবে ভোটের আগে 'পদ্মাপাড়ের বৃত্তান্ত' অবশ্য খুব একটা ভালো নয় ৷ বিরোধীদের দাবি গণতন্ত্রের কণ্ঠরোধ করা হয়েছে ৷ তথ্য় বলছে, বড় জয় পাওয়া মোটের উপর নিশ্চিত হলেও একাধিক আর্থিক এবং রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতেই হবে হাসিনাকে ৷
2014 এবং 2018 সালেও বিরোধীদের কার্যত হাওয়ায় উড়িয়ে ক্ষমতায় আসেন হাসিনা ৷ তবে তাতেও যে আওয়ামি লিগ নিশ্চিন্তে আছে তেমনটা ভাবার বিশেষ সুযোগ নেই ৷ এবারের ভোটের আগে বেশ কিছু অপ্রীতিকর ঘটনার সাক্ষী থেকেছে বাংলাদেশ ৷ একের পর এক বিরোধী দলের নেতা গ্রেফতার হয়েছেন ৷ তাছাড়া সরকার বিরোধী জমায়েত থেকে শুরু করে বিরোধীদের জনসভায় যোগ দেওয়ায় একসঙ্গে বহু সাধারণ মানুষকে গ্রেফতার করা হয়েছে ৷ উঠেছে রাষ্ট্রযন্ত্রের অপব্যবহারের বিস্তর অভিযোগ ৷ স্বভাবতই এ নিয়ে ক্ষোভও আছে দেশে।
অর্থনৈতিক পরিস্থিতিও সুখকর নয় ৷ সাম্প্রতিক কিছু তথ্য় থেকেই সেটা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে ৷ একটি পরিসংখ্যান বলছে, বৈদেশিক মুদ্রার ভাণ্ডার 20 বিলিয়ন ডলারের তলায় নেমে গিয়েছে ৷ অন্যদিকে, আন্তর্জাতিক বাজারে দেনার পরিমাণ 3.56 বিলিয়ন ডলার ৷ আর্থিক পরিস্থিতি ঠিক কতটা খারাপ তা ব্যাঙ্কের অবস্থা থেকেও অনুমান করা যায় ৷ অনাদায়ী ঋণের পরিমাণ বাড়তে বাড়তে মোট ঋণের 10.11 শতাংশে পৌঁছে গিয়েছে ৷ সরকারিভাবে মুদ্রাস্ফীতি 9 শতাংশের চেয়ে বেশি ৷ কিন্তু সূত্রের দাবি, আদতে মুদ্রাস্ফীতি 11 শতাংশের চেয়ে কম নয় ৷ নগদে টান পড়ায় একাধিক ব্যাঙ্কে বড় অঙ্কের লেনদেন স্থগিত রাখতে হয়েছে ৷ দেশের অন্যতম বড় ব্যবসার ক্ষেত্র হল পোশাক ৷ তাতেও মন্দার ছাপ স্পষ্ট ৷ সবমিলিয়ে এস অ্য়ান্ড পি, মুডিজ এবং ফিচের মতো সংস্থার রেটিংয়ে অনেকটাই পিছিয়ে গিয়েছে বাংলাদেশ ৷
হাসিনার দলের কাছে এখন সবথেকে বড় চ্যালেঞ্জ ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে নিয়ে আসা ৷ এর আগে 2014 সালে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় একাধিক অভিযোগ তুলে ভোট বয়কটের ডাক দিয়েছিল খালেদা জিয়ার দল বিএনপি ৷ তাদের দাবি ছিল, নির্বাচনে প্রার্থী দিতে বাধা দিচ্ছে শাসক শিবির ৷ সেই অভিযোগের ছায়া যাতে এবার না পড়ে তার জন্য 'গোঁজ প্রার্থী' দিয়েছে আওয়ামি লিগ ! কিন্তু এত কিছুর পর অভিযোগ মুক্ত ভোট আয়োজন করতে ব্যর্থ হাসিনা প্রশাসন!