পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / international

মিউনিখে যেন মরুভূমির নিস্তব্ধতা, অভিজ্ঞতা শোনালেন হুগলির আভানা - corona in the world

শহরের গুরুত্বপূর্ণ আফিসগুলোতে কর্মচারীরা সকাল থেকেই ভিড় জমাতেন । সেই সব আফিসগুলি শুধু দাঁড়িয়ে আছে, দেখা নেই কোনও কর্মচারীর । মিউনিখের যে মেট্রো স্টেশনগুলি সর্বদা ভিড়ে থিক থিক করত সেখানেও দেখা নেই কোনও যাত্রীর ।

image
মিউনিখ থেকে আভানা

By

Published : Apr 16, 2020, 1:44 PM IST

Updated : Apr 19, 2020, 4:11 PM IST

কোরোনা আক্রান্ত গোটা বিশ্ব । কোরোনার প্রকোপ থেকে রেহাই পায়নি জার্মানিও । কোরোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে সেই দেশেও । সেখানে আটকে পড়েছেন হুগলির মেয়ে আভানা মাইতি । জার্মানির মিউনিখ শহরে একটি ব্রিটিশ সংস্থায় ফিনান্সিয়াল কন্ট্রোলার পদে কর্মরত তিনি । 2015 সাল থেকেই আছেন মিউনিখ শহরে । যদিও তাঁর বাবা-মা বর্তমানে থাকেন হুগলিতে । বিশ্বজুড়ে এই ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যেই জার্মানির মিউনিখ শহর থেকে ভিডিয়ো বার্তায় ETV ভারতের প্রতিনিধির সঙ্গে অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিলেন আভানা ।

আভানার কথায়, চেনা শহরটা হঠাৎ করেই অচেনা হয়ে উঠেছে । এই তো কয়েকদিন আগেও কোলাহল পূর্ণ জার্মানির মিউনিখে এখন মরুভূমির নিস্তব্ধতা । 2015 সাল থেকে এখানে আছি । শহরের প্রতিটি রাস্তা, অলি-গলি আমার চেনা । কয়েকদিন আগেও এক মুহূর্তের জন্যেও থামতে দেখিনি এই শহরটাকে । হঠাৎ করেই সেই শহরই খাঁ খাঁ করছে । মানুষের মধ্যে ব্যস্ততা নেই, হুড়োহুড়ি নেই, নেই আফিস যাওয়ার তাড়া । শহরের মধ্যেই অবস্থিত একটি ইন্টারন্যাশনাল স্কুল । যেখানে সকাল থেকে ছাত্র-ছাত্রীদের কোলাহলে মুখর হয়ে থাকত স্কুল প্রাঙ্গন । সেখানেই এখন জন-মানব শূন্য । প্রশাসনের তরফে অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে সমস্ত স্কুল-কলেজ ।

মিউনিখ থেকে হুগলির আভানা

শহরের গুরুত্বপূর্ণ আফিসগুলোতে কর্মচারীরা সকাল থেকেই ভিড় জমাতেন । সেই সব আফিসগুলি শুধু দাঁড়িয়ে আছে, দেখা নেই কোনও কর্মচারীর । মিউনিখের যে মেট্রো স্টেশনগুলি সর্বদা ভিড়ে থিক থিক করত সেখানেও দেখা নেই কোনও যাত্রীর । সাধারণ দিনে যে রাস্তা দিয়ে যেত অসংখ্য গাড়ি আজ সেখানই হাতে গোনা কয়েকটি গাড়ি দেখা যাচ্ছে । যাদের গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে তাঁরা ছাড়া বাইরে বেরোচ্ছেন না কেউই ।

কয়েকদিন আগেই আমার জন্মদিন ছিল । সপ্তাহের ছুটির দিন দেখে একটি ঘরোয়া পার্টির আয়োজন করেছিলাম আমার বাড়িতে । অফিসের কিছু সহকর্মী ও কয়েকজন বন্ধু-বন্ধব আমন্ত্রিত ছিল সেই পার্টিতে । কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত সেইদিনই দেশজুড়ে লকডাউন ঘোষণা করে জার্মানি সরকার । বিকাল থেকেই রাস্তায় পুলিশ ও দমকল বাহিনী ঘুরতে থাকে । আতঙ্কিত হয়ে পড়ে স্থানীয়রা । একপ্রকার বাধ্য হয়েই বন্ধ করে দিতে হয় সেই পার্টি । শহরের একটি শপিংমল পেপ । সারাদিন লোকারণ্য থাকত মল । সেই মলও আজ ফাঁকা । সরকারের তরফে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে মল । শুধুমাত্র কয়েকটি প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দোকান খোলা আছে এখানে ।

আগে শহরের পুলিশকে কোনওদিন এত শক্তভাবে পরিস্থিতি সামালতে দেখিনি । মিউনিখের রাস্তায় দাঁড়িয়ে রয়েছে পুলিশ । ঘরের বাইরে বিনা প্রয়োজনে বেরোলেই করা হচ্ছে ফাইন । তবে ভারতের তুলনায় এখানে জনবসতি অনেক কম । মানুষ এখানে নিউক্লিয়ার ফ্যামেলিতে থাকে । এমনকী ইট্যালির তুলনায় এখানে স্বাস্থ্যব্যবস্থা আরও উন্নত । তাছাড়া কঠোরভাবে পালন করা হচ্ছে লকডাউনও ।

এদিকে প্যানডেমিকের প্রকোপ শুরু হতেই, বেড়েছে প্যানিক শপিং । আতঙ্কে মানুষ বেশি বেশি করে জিনিস কিনে ঘরে মজুত করেছে শুরু করেছে । বাজারে মাস্কের আকাল । স্যানিটাইজ়ারও নেই বাজারে । যদিও আমি আগেই কয়েকটি দোকান ঘুরে স্যানিটাইজ়ার কিনে রেখেছিলেম । কিন্তু অনেক খুঁজে মাস্ক পায়নি ।

আশা এখন শুধু একটাই । আবার সবকিছু স্বাভাবিক হবে । মিউনিখ আবার তার পুরানো রূপ ফিরে পাবে । আবার ভিড় বাড়বে মেট্রো সেটেশনগুলিতে । স্কুল-কলেজে আবার ফিরবে ছাত্র-ছাত্রীর দল । আবার স্বাভাবিক হবে পৃথিবী ।

Last Updated : Apr 19, 2020, 4:11 PM IST

ABOUT THE AUTHOR

...view details