পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / international

2021-র গ্রীষ্মের গরমে বাংলার ভোট না প্রতিবেশী দেশ—কোনটা আগে ? - নাগরিকত্ব

বর্তমান পরিস্থিতিতে বাংলার অনেকেই দৃষ্টি থাকবে হরিচাঁদ ঠাকুরের ওড়াকান্দি মন্দিরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির পদক্ষেপ নিয়ে, তাঁর সফর নিয়ে । আর সন্দেহ নেই বাংলার নির্বাচনের প্রেক্ষিতে এই সফর অন্য মাত্রা গ্রহণ করেছে । আলোচনায় দীপঙ্কর বসু ৷

Bengal polls or Neighbourhood first
বাংলার ভোট না প্রতিবেশি দেশ

By

Published : Mar 26, 2021, 3:39 PM IST

গ্রীষ্মের এই দাবদাহ ৷ প্রতিবেশী আগে না নির্বাচন ৷

বাংলায় আট দফার বিধানসভা নির্বাচন । যার প্রথম দফার আগের দিনই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করলেন । উপলক্ষ, বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন একই সঙ্গে বাংলাদেশের জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ পালন । প্রধানমন্ত্রী মোদি তাঁর এই দুই দিনের সফরে বেশ কিছু সরকারি অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন । যাবেন বেশ কয়েকটি ধর্মীয় স্থানে শ্রদ্ধা জানাতে ।

অতিমারির ভয়াবহতা এবং লকডাউন পরবর্তী সময় এটাই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রথম কোনও রাষ্ট্রীয় সফর । অনুপ্রবেশ, বাণিজ্যিক সম্পর্ক বা তিস্তা জলবণ্টন- এই বিষয়গুলি নিয়ে দুই দেশের মধ্যে একাধিকবার অমীমাংসীত আলোচনা হয়েছে । সন্দেহ নেই, আগামী দিনে আরও হবে । সেই প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রীর এই সফর অত্যন্ত তাত্পর্যপূর্ণ-গুরুত্বপূর্ণও বটে । পাশাপাশি চিনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশেয়েটিভ (বিআরআই)-এর মতো বিষয়ে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ নিয়ে ভারত ভাবিত । নয়াদিল্লি বিশেষ ভাবে এই দিকটায় নজর রাখছে ।

এত কিছু বাদ দিলে, 27 মার্চ যখন বাংলায় যখন প্রথম দফার নির্বাচন, তখন মোদির বাংলাদেশে উপস্থিতি অন্য দিক থেকেও তাত্পর্যপূর্ণ । এবং যে কারণেই প্রতিবেশি সাতক্ষীরা এবং গোপালগঞ্জে মোদির পরিকল্পিত এই সফর । সাতক্ষীরার এক ছোট গ্রাম ইশ্বরীপুরের যশোরেশ্বরী মন্দিরে পুজো দেওযার কথা রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর । এর পর গোপালগঞ্জের ওড়াকান্দির একটি মন্দিরেও পুজো দেবেন তিনি । যশোরেশ্বরী মন্দিরটি বাংলাদেশের প্রসিদ্ধ হিন্দু মন্দির । প্রতিদিন বহু মানুষের সমাগম হয় এখানে । স্বাভাবিক ভাবেই এখানে জড়িয়ে রয়েছে হিন্দু ভাবাবেগ । তবে ওড়াকান্দি কেন ? এই স্থানটির গুরুত্বই বা কী ।

এই ওড়াকান্দি হল মতুয়া সম্প্রদায়ের প্রবক্তা হরিচাঁদ ঠাকুরের জন্মস্থান । ইনি সেই হরিচাঁদ ঠাকুর, যিনি দেশ ভাগের সময় ভারতে চলে এসেছিলেন এবং বাংলার অস্পৃশ্যদের উন্নয়নের জন্য কাজ করেছিলেন বলে জানা যায় । তাঁদের সংগঠিত করার কাজটাও শুরু করেছিলেন তিনি । মতুয়া সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, দলিত বা নমশূদ্রদের সংগঠিত করার কাজ করেছিলেন । হরিচাঁদের মৃত্যুর পর সেই দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন তাঁর ছেলে গুরুচাঁদ ঠাকুর । তাঁকেও নমশূদ্র এবং দলিত সম্প্রদায়কে সংগঠিত করার কৃতিত্ব দেওয়া হয় ।

এবার প্রশ্ন, কেন প্রধানমন্ত্রী তাঁর সফরকালে মতুয়াদের পবিত্র স্থান ওড়াকান্দি মন্দিরটি পরিদর্শনের জন্য এতটা ঝুঁকছেন ? কেন তিনি এতটা আগ্রহী । এর উত্তরটা লুকিয়ে আছে পশ্চিমবঙ্গের 2.5 কোটি ভোটারের মধ্যে, যাঁরা দেশ ভাগের সময় বাংলাদেশ থেকে ভারতে চলে এসেছিলেন । এর মধ্যে এক কোটিরও বেশি রয়েছেন মতুয়া সম্প্রদায়ের ভোটার । আর ভোটের এই মরসুমে গেরুয়া দলের কাছে এই ভোট ব্যাঙ্ক অতি গুরুত্বপূর্ণ ।

পরিসংখ্যান বলছে, ইন্দো-বাংলা সীমান্তবর্তী এলাকায় বেশ কিছু সংখ্যাক হিন্দু শরণার্থী রয়েছেন । বাংলার ভোট ব্যাঙ্কের ক্ষেত্রে তাঁরা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । মতুয়া সম্প্রদায়ের একটা বড় অংশ যাঁরা 1971 সালে দেশ ভাগের সময় এ-দেশে চলে এসেছিলেন, তাদের ভোট কম করে তিরিশটি বিধানসভা আসনের ক্ষেত্রে অতি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে । এটা এমনই একটা সংখ্যা যা বিজেপি-তৃণমূল বা বাম-কংগ্রেসের সংযুক্ত মোর্চার জোট—কেউ-ই উপেক্ষা করতে পারে না ।

শুধু তাই নয়, 2019 সালে এই মতুয়া সম্প্রদায়ের ভোট ব্যাঙ্ককে হাতিয়ার করেই লোকসভা ভোটের বৈতরণী পার হয়েছিল বিজেপি । বনগাঁ এবং রানাঘাটের মতো দুটি আসন দখলও স্বাদও পেয়েছিল বিজেপি । আর তার পর থেকেই মতুয়া ভোট ব্যাঙ্ককে পুরোপুরি নিজেদের দখলে আনতে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে বিজেপি ।

কিন্তু, এটাও মনে রাখতে হবে, লোকসভায় নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পাস হওযার পর 15 মাস কেটে গিয়েছে । কিন্তু, কেন্দ্রীয় সরকার এখনও এ বিষয়ে আইন প্রয়োগের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করে উঠেত পারেনি । আর তার ফলে মতুয়া সম্প্রদায় অস্থির-অসতুষ্ট হয়ে উঠেছে । তাঁদের মনে এই ধারনা তৈরি হচ্ছে, নাগরিকত্বের বিষয়ে বিজেপি তাদের ঠকিয়েছে এবং ক্রমেই অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিচ্ছে ।

তৃণমূল নেত্রী তথা বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে এই ভোট পর্বে প্রধামনন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের তিক্ততা অত্যন্ত বেড়েছে । ভোট প্রচার কালে পরিস্থিতি ক্রমেই তপ্ত হয়েছে । সবাই প্রমান করার চেষ্টা করেছেন তাঁরা মতুয়াদের বন্ধু । মোদি বা মমতা উভয় প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন তাঁরা মতুয়াদের জন্য অনেক কিছু করেছেন । বা করার পরিকল্পনা আছে । বস্তুত, 2016 সালে যে ভাবে মতুয়া সমর্থন তিনি পেয়েছিলেন, তা নিশ্চিত করতে বহু কার্যকর পদক্ষেপ করছেন-করেছেন তৃণমূল নেত্রী । মোদির এই ওড়াকান্দি সফর নিঃসন্দেহে মতুয়া ভোট ব্যাঙ্ককে কাছে টানার এবং ভোটের সমীকরণ পরিবর্তনের একটা প্রচেষ্টা-সেটা ভাল ভাবেই জানেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ।

দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক অংশীদারিত্বের চুক্তি (সিইপিএ) নিয়ে সুস্পষ্ট আলোচনার পথ তৈরিতে প্রধানমন্ত্রীর এই সফর কার্যকর ভূমিকা নিতে পারে, তাতে সন্দেহ নেই । মোদি হাসিনার মধ্যে আলোচনা উভয় দেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ককে অন্য মাত্রায় নিয়ে যেতে পারে । তবে, বর্তমান পরিস্থিতিতে বাংলার অনেকেই দৃষ্টি থাকবে হরিচাঁদ ঠাকুরের ওড়াকান্দি মন্দিরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির পদক্ষেপ নিয়ে, তাঁর সফর নিয়ে । আর সন্দেহ নেই বাংলার নির্বাচনের প্রেক্ষিতে এই সফর অন্য মাত্রা গ্রহণ করেছে ।

  • (লেখক ইটিভি ভারতের নিউজ কো-অর্ডিনেটর )

ABOUT THE AUTHOR

...view details