আফগানিস্তানকে স্বাধীন করতে এবং সেখানে শান্তি প্রতিষ্ঠা করার জন্য 2001 সালে অভিযান শুরু করে অ্যামেরিকা ৷ আল কায়দা এবং তালিবানকে একেবারে শেষ করতে অ্যামেরিকা NATO-র অন্তর্ভুক্ত দেশগুলির সহায়তায় এই অভিযান শুরু করে ৷ যদিও ওবামার শাসনকালে ওসামা বিন লাদেনকে মেরে আল কায়দাকে মাথা-হীন করে দেওয়া গিয়েছিল, কিন্তু তালিবানরা তাদের জঙ্গি কার্যকলাপ থেকে বিরত হয়নি ৷ অ্যামেরিকার প্রাক্তন ভাইস প্রেসিডেন্ট ডিক চেনি একবার জানিয়েছিলেন যে আফগানিস্তানের যুদ্ধের সঙ্গে গাল্ফের যুদ্ধের কোনও মিল নেই ৷ এই যুদ্ধ টানা চলতেই থাকবে ৷ যদিও অ্যামেরিকা তালিবানদের সঙ্গে একটি চুক্তি করে 18 বছরের এই রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ে ইতি টেনেছে ৷ দোহায় অ্যামেরিকা এবং তালিবানের প্রতিনিধিদের মধ্যে স্বাক্ষরিত এই চুক্তির মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদী শান্তি প্রতিষ্ঠার আশা জাগিয়েছে ৷ মূলত চারটি বিষয়ের উপর তৈরি হয়েছে এই শান্তিচুক্তি ৷ তালিবানের তরফে নিশ্চিত করা হয়েছে যে তাদের কোনও সদস্য বা কোনও ব্যক্তি বা কোনও জঙ্গি সংগঠনকে আফগানিস্তানের মাটি ব্যবহার করে অ্যামেরিকা বা তার সহযোগী কোনও দেশের শান্তি বিঘ্নিত করতে দেওয়া হবে না ৷ একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ওই দেশ থেকে নিজেদের বাহিনী সরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে সম্মত হয়েছে অ্যামেরিকা ৷ এই চুক্তির বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল যে আফগানিস্তানে শান্তি প্রতিষ্ঠা, সে দেশের জন্য ভবিষ্যতের একটি রূপরেখা তৈরি এবং তা বাস্তবায়িত করতে যৌথ পদ্ধতি অবলম্বন ৷ এ নিয়ে বিভিন্ন দল আগামী 10 মার্চ থেকে আলোচনা শুরু করতে চলেছে ৷ তবে আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট আসরাফ গনি জানিয়েছেন, এই চুক্তি মোতাবেক এক হাজার তালিবান বন্দীকে মুক্তি দিতে পারবেন না ৷ কারও পক্ষেই অনুমান করা সম্ভব নয় শান্তি চুক্তি আফগানিস্তানকে কোথায় নিয়ে যাবে ৷ কারণ, সেখানে বোমা বিস্ফোরণ এবং কালাশনিকভ থেকে গুলি চালানোই যে স্বাভাবিক ঘটনা ৷
আফগানদের জন্য কী আশার আলো দেখা যাচ্ছে ? - afgan
অ্যামেরিকা তালিবানদের সঙ্গে একটি চুক্তি করে 18 বছরের রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ে ইতি টেনেছে ৷ দোহায় অ্যামেরিকা এবং তালিবানদের প্রতিনিধিদের মধ্যে স্বাক্ষরিত এই চুক্তির মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদী শান্তি প্রতিষ্ঠার আশা জাগিয়েছে ৷ কিন্তু কারও পক্ষেই অনুমান করা সম্ভব নয় শান্তি চুক্তি আফগানিস্তানকে কোথায় নিয়ে যাবে ৷ তবে তালিবানের শাসন শেষ হওয়া খুব জরুরি ।
এর আগে 2019 সালের জুলাইয়ে অ্যামেরিকার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছিলেন যে তিনি তো চান আফগানিস্তানকে পৃথিবীর মানচিত্র থেকে মুছে দিতে ৷ কিন্তু 10 মিলিয়ন মানুষকে হত্যা করা তাঁর উদ্দেশ্য নয় ৷ যদিও ভারত সন্ত্রাসবাদের বাড়বাড়ন্তে অনেক দিন ধরেই বেশ চিন্তিত ছিল ৷ কিন্তু ভারতের চিন্তাকে কখনওই গুরুত্ব দেয়নি অ্যামেরিকা ৷ কিন্তু টুইন টাওয়ারে সন্ত্রাসবাদী হামলা হওয়ার পর থেকেই অ্যামেরিকা এ নিয়ে পদক্ষেপ করা শুরু করে ৷ তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ যুদ্ধক্ষেত্রে সমস্ত গোপন শত্রুকে শেষ করার হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন ৷ যার ফলই 2001 সালে শুরু হওয়া যুদ্ধ ৷ ওই যুদ্ধ কাবুল, কান্দাহার, জালালাবাদ এবং হেরাতের বহু নিরীহ মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছিল ৷ যদিও 2014 সালে এই যুদ্ধ শেষ করার ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছিল রাষ্ট্রসংঘের তরফে ৷ এই যুদ্ধের প্রথম ছ’মাসে সরকারি এবং বিদেশি সেনার হাতে 717 জন নাগরিকের মৃত্যু হয় ৷ তালিবানদের আক্রমণে মারা যায় 531 জন নাগরিক ৷ যুদ্ধ নিয়ে বিশ্লেষণ করার ট্রাম্প 2400 অ্যামেরিকা সেনার শহিদ হয়ে যাওয়া এবং এ নিয়ে লাখ লাখ ডলার নষ্ট করার সমালোচনা করেন ৷ তার পরই তিনি এই যুদ্ধ শেষ করার সিদ্ধান্ত নেন ৷ শক্তিশালী অ্যামেরিকা চাইছে এই আফগান ফাঁদ থেকে বেরিয়ে এসে গোটা বিশ্বে নিজেদের শক্তি পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে ৷ কিন্তু তালিবানদের সেই রক্তাক্ষয়ী হামলা এখনও শেষ হয়নি ৷ চার মাসের মধ্যে অ্যামেরিকা সেনা আফগানিস্তান থেকে সরিয়ে নেওয়া হবে ৷ তারপর যে তালিবানরা ওই দেশের শান্তি বিঘ্নিত করার চেষ্টা করবে না, তা নিয়ে কোনও নিশ্চয়তা নেই ৷
2018 সালের এপ্রিলে নিরাপত্তা পরিষদের রিপোর্ট অনুযায়ী, আল কায়দা তালিবানের সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়েছে এবং তালিবান অন্তত 20 টি জঙ্গি সংগঠনের স্বার্থ সুরক্ষিত করার কাজ করছে ৷ আফগানিস্তানের অর্ধেক অঞ্চলে এখনও তালিবানের শাসন রয়েছে ৷ তাদের বিশ্বাস করে শান্তিচুক্তি করাটা বোকামো ছাড়া আর কিছুই নয় ৷ তালিবানের তরফে যদিও প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে যে অ্যামেরিকার দাবি মতো আফগানিস্তানকে তারা বিশ্বে সন্ত্রাস ছড়ানোর মঞ্চ হিসেবে ব্যবহৃত হতে দেবে না ৷ কিন্তু শান্তি আলোচনার সময়ই তারা জানতে চেয়েছিল, সন্ত্রাসবাদ বলতে ঠিক কী বোঝানো হচ্ছে ৷ যখন রাষ্ট্রসংঘও সন্ত্রাসবাদকে সঠিকভাবে ব্যাখ্যা করতে পারছে না, তখন অ্যামেরিকা কার্যত জোর করে এই শান্তি চুক্তি করল ৷ আর আফগানিস্তানকে তাদের নিজের ভাগ্যের হাতে ছেড়ে দিল ৷ সন্ত্রাসবাদের জন্য ভারতকে অনেক মূল্য চোকাতে হয়েছে ৷ তার পরও তারা আফগানিস্তানকে গড়ে তোলার লাখ্যে সেই দেশের পরিকাঠামো তৈরিতে 75 হাজার কোটি টাকা খরচ করে ফেলেছে ৷ আফিগানিস্তান তালিবানের দখলে চলে গেলে ভারতের কী হতে পারে, তা স্পষ্ট ৷ সারা বিশ্বে 90 শতাংশ হেরোইন আফগানিস্তানকে আসে ৷ মাদক পাচার করেই তালিবানদের 60 শতাংশ রোজগার হয় ৷ ইন্টারন্যাশনাল নারকোটিকস কন্ট্রোল বোর্ড জানিয়েছে, হেরোইন তৈরিতে প্রয়োজনীয় কেমিকালটি ভারত থেকেই যায় ৷ ড্রাগ মাফিয়াদের শেষ করতে ভারতকে অবশ্যই সতর্কভাবে পদক্ষেপ করতে হবে ৷ তাই তালিবানের শাসন শেষ হওয়া খুব জরুরি ।