ওয়াশিংটন, 24 সেপ্টেম্বর : মুখোমুখি দেখা গেল নরেন্দ্র মোদি-কমলা হ্যারিসের ৷ বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউজে (White House) প্রথম সাক্ষাতে হ্যারিসকে প্রশংসায় ভাসালেন প্রধানমন্ত্রী (Prime Minister Narendra Modi) ৷ বললেন, "আপনার আমেরিকার ভাইস প্রেসিডেন্ট হওয়া একটা ঐতিহাসিক ঘটনা ৷ বিশ্বে অনেকেই আপনাকে দেখে উৎসাহিত বোধ করেন ৷" এর আগে জুন মাসে ভারতের কোভিড-19 পরিস্থিতি নিয়ে কমলা হ্যারিসের ( US Vice President Kamala Harris ) সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছিল মোদির ৷
এদিন কমলা হ্যারিসের সঙ্গে দেখা করে মোদি জানান, ভারত আর আমেরিকার মধ্যে সহযোগিতার সম্পর্ক ‘স্বাভাবিক’ (natural partners) ৷ বৈঠকে দু'দেশের মধ্যে কৌশলগত অংশীদারিত্ব (strategic partnership), বিশ্বের বেশ কিছু সাধারণ বিষয় যেমন গণতান্ত্রিক পরিস্থিতির বর্তমান সংকট, আফগানিস্তান এবং ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল (Indo-Pacific) নিয়ে আলোচনা হয় ৷
সাংবাদিকদের সামনে কমলা হ্যারিসের উপস্থিতিতে মোদি বলেন, "ভারত আর আমেরিকার মধ্যে সহযোগিতার সম্পর্ক হওয়াটা খুব স্বাভাবিক ৷ আমাদের মূল্যবোধ একই রকম, ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থও এক ৷" এর সঙ্গে তিনি মনে করিয়ে দেন, ভারত আর আমেরিকার গণতন্ত্র বিশ্বের বৃহত্তম ও সবচেয়ে পুরনো ৷ দু'দেশের মধ্যে মূল্যবোধ, সহযোগিতা আর সমন্বয় ধীরে ধীরে বাড়ছে ৷ তিনি বলেন, "আমি সম্পূর্ণ আত্মবিশ্বাসী যে প্রেসিডেন্ট বাইডেন আর আপনার নেতৃত্বে দু'দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক একটা নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে ৷" তিনি ভাইস প্রেসিডেন্টকে ভারতে আসার আমন্ত্রণ জানান ৷ প্রসঙ্গত উল্লেখ্য কমলা হ্যারিসের মা (Shyamala Gopalan) ভারতীয়, তামিলনাড়ুতে থাকতেন ৷
আরও পড়ুন : Narendra Modi : ভারত-মার্কিন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক দৃঢ় করার বার্তা দিয়ে ওয়াশিংটনের পথে মোদি
জো বাইডেনের প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত হওয়ার গুরুত্ব প্রসঙ্গে মোদি বলেন, "যখন আমাদের গ্রহ খুব কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি, সেই সময় আপনারা দু'জনে আমেরিকার দায়িত্বভার নিয়েছেন ৷ খুব কম সময়ের মধ্যে আপনারা অনেক কিছুর মোকাবিলা করার কৃতিত্ব অর্জন করেছেন ৷ সেটা কোভিড-19 হোক, জলবায়ু পরিবর্তন বা কোয়াড ৷"
ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে চিনের আধিপত্য বিস্তার প্রসঙ্গে কমলা হ্যারিস বলেন, "আমেরিকা সব সময় উন্মুক্ত এবং স্বাধীন ইন্দো-প্যাসিফিকের উপর জোর দিয়েছে ৷" ভারত, আমেরিকা এবং অন্য শক্তিশালী দেশগুলি বারে বারে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলকে চিনের আগ্রাসন থেকে মুক্ত করার কথা জানিয়েছে ৷ বিশ্বে দেশগুলির মধ্যে এখন সংযোগ আরও বেড়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, "আমরা আজ কোভিড-19, জলবায়ু সংকটের মতো চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি ৷ ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল নিয়ে আমরা একই রকম চিন্তাভাবনা করছি, যা গুরুত্বপূর্ণ ৷"
জলবায়ু সংকটে ভারতের ন্যাশনাল হাইড্রোজেন মিশনের (National Hydrogen Mission) কথা মনে করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, "দু'দেশই জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে একে অপরের মধ্যে সমন্বয়ের গুরত্বের কথা স্বীকার করেছি ৷ প্রধানমন্ত্রী পুনর্ব্যবহারযোগ্য শক্তির (renewable energy) দিকে ভারতকে নিয়ে যাচ্ছেন এবং সম্প্রতি ন্যাশনাল হাইড্রোজেন মিশন চালু করেছেন ৷ এমনকি জলবায়ুর স্থায়িত্বের কথা মাথায় রেখে জীবনযাপনের ধরন বদলানোর উপরও জোর দিচ্ছেন ৷"
ভারতে কোভিড-19 পরিস্থিতি যখন খুব খারাপ ছিল, সেই সময় কমলা হ্যারিসের সঙ্গে মোদির ফোনে কথা হয়েছিল ৷ সে দিনের কথা মনে করে মোদি বলেন, "কোভিড-19 সংক্রমণের সাংঘাতিক ঢেউয়ের সময় একটা কঠিন যুদ্ধ চলছিল ৷ আমার মনে আছে, সেই সময় আপনি পাশে থাকার কথা জানিয়েছিলেন ৷" সেই কথাগুলো যেন পরিবারের কেউ বলছেন, এতটাই আন্তরিক ছিল জানান প্রধানমন্ত্রী ৷ তিনি বলেন, "সে সময় যে শব্দগুলো আপনি ব্যবহার করেছিলেন, তাতে মনে হয়েছিল আপনি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন ৷ আমি সব সময় সে কথাগুলি মনে রাখব আর আমাদের অন্তরের গভীর থেকে আপনাকে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি ৷" মোদি জানান, ভারত যখন করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ের সঙ্গে লড়ছিল, সে সময় আমেরিকার সরকার, আমেরিকার কোম্পানিগুলি এবং আমেরিকায় বসবাসকারী ভারতীয়রা সেই লড়াইয়ের মোকাবিলায় ভারতের পাশে দাঁড়িয়েছিল ৷ ভারতীয় বংশোদ্ভূত 40 লক্ষ মানুষ দু'দেশের মধ্যে বন্ধুত্বের সেতু বন্ধন হিসেবে রয়েছে, জানান মোদি ৷
আরও পড়ুন : Ghana on Covishield : ভারতের কোভিশিল্ড ব্রাত্য ইউরোপে, রাষ্ট্রসংঘে কড়া সমালোচনা ঘানার প্রেসিডেন্টের
ভাইস প্রেসিডেন্ট হ্যারিস ভারতকে আমেরিকার ‘খুবই গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী’ (very important partner) হিসেবে উল্লেখ করে নয়া দিল্লির ভ্যাকসিন রফতানিকে স্বাগত জানান ৷ এ বছর এপ্রিলে দেশে করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময় ভারত দেশের বাইরে ভ্যাকসিন পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছিল ৷ এই সোমবার কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী ফের 'ভ্যাকসিন মৈত্রী'র (Vaccine Maitri) মাধ্যমে ভ্যাকসিন পাঠানোর কথা ঘোষণা করেছেন ৷ আর পাশাপাশি কোভ্যাক্স (COVAX) প্রকল্পে অন্য দেশগুলিকে ভ্যাকসিন পাঠানোর প্রতিশ্রুতি পূরণ করার কথাও জানিয়েছেন ৷
কমলা হ্যারিস দু'দেশের গণতন্ত্র রক্ষার কথা জানিয়ে বলেন, "বিশ্বজুড়ে গণতন্ত্র সংকটের মুখে, হুমকির মুখে ৷ সব দেশের গণতান্ত্রিক নীতিগুলি মেনে চলা খুবই জরুরি ৷ নিজের ঘরে গণতন্ত্রকে মজবুত করতে যা করা উচিত, তা বজায় রেখে চলা এবং দেশের মানুষের স্বার্থে গণতন্ত্রকে রক্ষা করা অবশ্য কর্তব্য ৷"
বিদেশ সচিব (Foreign Secretary) হর্ষবর্ধন শ্রিংলা (Harsh Vardhan Shringla) জানিয়েছেন, কমলা হ্যারিস নিজে জঙ্গি কার্যকলাপে পাকিস্তানের নাম উল্লখে করেছেন ৷ হ্যারিস জানিয়েছেন, বহু জঙ্গি গোষ্ঠী সেখানে কাজ করছে ৷ তিনি পাকিস্তানকে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও জানিয়েছেন ৷ যাতে এই জঙ্গি গোষ্ঠীগুলি আমেরিকা বা ভারতের নিরাপত্তাকে প্রভাবিত করতে না পারে ৷
আজ শুক্রবার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের (President Joe Biden) সঙ্গে দেখা করার কথা রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর ৷ পাশাপাশি কোয়াড গোষ্ঠীর নেতাদের (Quad Leaders' Summit) সঙ্গেও বৈঠকে অংশ নেবেন মোদি ৷