হায়দরাবাদ, 19 ডিসেম্বর : স্বাধীনতা, সাম্য ও আত্মনিয়ন্ত্রণের মূল নীতির ওপর নির্মিত, বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন মার্কিন গণতন্ত্রের ইমারত এবার সবথেকে টালমাটাল অবস্থার মধ্যে দিয়ে গেছে । নভেম্বরে দেশের 46তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জো বাইডেন আট কোটি ভোটে জিতেছেন । অনিশ্চয়তা দেখা দেয়, যখন দ্বিতীয়বার প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প হার স্বীকার করতে অস্বীকার করেন । কিন্তু ট্রাম্পের অতি উৎসাহকেও হার মানতে হয়, যখন বাইডেন ইলেক্টোরাল কলেজ থেকেও 306টি ভোট নিশ্চিত করে ফেলেন । জয়ের পর বাইডেন ট্যুইট করেন, "অ্যামেরিকায় রাজনীতিবিদরা ক্ষমতা দখল করেন না - মানুষ সেটা তাঁদের হাতে দেয় । এই দেশে গণতন্ত্রের শিখা বহুদিন আগেই জ্বলে উঠেছিল । আর আমরা জানি যে কোনও কিছুই তা সে মহামারী হোক বা ক্ষমতার অব্যবহার, সেই শিখাকে নেভাতে পারবে না ।"
তিনি অ্যামেরিকার জনতার কাছে আবেদন করেন বিভেদের পৃষ্ঠা উলটে দিয়ে জাতীয় ঐক্য বজায় রাখতে । বাইডেন জানান যে তাঁর অগ্রাধিকারের তালিকায় রয়েছে কোভিড মোকাবিলায় ব্যাপকহারে টিকাকরণ, গরিবদের আর্থিক সাহায্য ও অর্থনীতির পুনরুজ্জীবন । ভোটের দৌড়ে নেমে ট্রাম্প প্রাণপণ চেষ্টা করেন, গায়ের রঙের ভিত্তিতে মার্কিন সমাজকে বিভক্ত করতে । পরাজয় সত্ত্বেও যে রেকর্ড পরিমাণ ভোট তিনি পেয়েছেন, তার থেকেই এই বিষয়টাই স্পষ্ট হয় । বাইডেন জয় চুরি করেছেন, ট্রাম্পের এই অযৌক্তিক অভিযোগের কারণে ওয়াশিংটনের পথে ঘাটে খণ্ডযুদ্ধ পর্যন্ত বেধে যায় । একজন মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পের ব্যবহার অভূতপূর্ব, যখন তিনি সেইসব আধিকারিকদের কটূক্তি করেন, যাঁরা বলেছিলেন যে ভোটে কোনও বেনিয়ম হয়নি । তিনি বিচারব্যবস্থাকেই শুধু সমালোচনা করে ক্ষান্ত হননি, পাশাপাশি তাঁর মতো করে যারা চলতে চাননি, বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে সেইসব ব্যক্তিদের অপসারিতও করেন তিনি । তাঁর আচরণ কোভিড মহামারীর থেকেও বেশি বিপজ্জনক ছিল । ট্রাম্পবাহিনী চেষ্টা করেছিল যাতে 16টি ইলেক্টোরাল ভোট বদলে মিশিগানে নির্বাচনের অভিমুখ বদলে দেওয়া যায় । ফলাফল বদলাতে অস্বীকার করে মিশিগানের রিপাবলিকান স্পিকার বলেন, "আমি আমাদের নিয়ম, প্রথা, প্রতিষ্ঠানকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে ট্রাম্পের পক্ষে প্রস্তাব আনার কথা ভাবতেও পারি না।" স্পিকার আশঙ্কা প্রকাশ করেন, যদি বেনিয়মকে প্রশ্রয় দেওয়া হয়, তাহলে দেশকে হারাতে হতে পারে । তাঁর কথা থেকেই স্পষ্ট যে ট্রাম্প কতটা নিচে নেমেছিলেন । চার বছর আগে ইকোনমিস্ট পত্রিকার করা একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছিল, ট্রাম্পের পুনর্নির্বাচনকে বিশ্বের পক্ষে সবথেকে বড় বিপদ মনে করা হচ্ছে ।