কলকাতা:বাঙালি তাঁকে চিনেছে একেন্দ্র সেন হিসেবেই । ফড়িং ছবি দিয়ে বাংলা ছবির জগতে পা রাখা এই মানুষটি আজ কারও কাছে লালমোহন, কারও কাছে আবার ব্যাধ। আবার কারও কাছে রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনও খেতে আসেননি-র সেই বোকাসোকা পুলিশ অফিসারটি । একাধিক চরিত্রে কাজ করলেও অনির্বাণ চক্রবর্তীর নাম আর পদবী দু’টোই বদলে গিয়েছে । আজ অনির্বাণ চক্রবর্তীর নামটা হয়ে গিয়েছে একেন্দ্র আর পদবীটা সেন ।
কিন্তু কীভাবে বাঙালির মতো গোয়েন্দাপ্রিয় জাতিকে জয় করে নিতে পারলেন অনির্বাণ? সে কি শুধু তাঁর অভিনয় গুণ না কি এর নেপথ্যে আছেন সেই গড়পাড়ের ভদ্রলোকটি ? যিনি সবসময় ফেলুদার পাশে থাকেন কিন্তু তাঁকে ছাপিয়ে যেতে পারেন না । তাঁর রসবোধ গল্প বা সিনেমাকে সমৃদ্ধ করে বটে কিন্তু রহস্যের জিয়নকাঠি খুঁজে দেয় না । সেই লালমোহনই কি জিতলেন একেন হয়ে ? প্রশ্নের উত্তর পেতে আমরা যোগাযোগ করেছিলাম পর্দার একেনবাবুর সঙ্গে । আড্ডায় উঠে এল আরও অনেক গল্প ।
প্রশ্ন: এত গোয়েন্দাদের ভিড়েও একেনের সাফল্যের রসায়ণ কী?
উত্তর: বাংলা সাহিত্যে এবং সিনেমায় আমরা যে ধরনের গোয়েন্দাদের দেখে অভ্যস্ত তাঁদের সবাইকেই একটু নায়কোচিত করে তৈরি করা হয়েছে ।খানিকটা হলেও লার্জার দ্যান লাইফ । বাস্তবে কিন্তু সেই চরিত্রগুলো অনেকটাই অন্যরকম । তা সে গোয়েন্দাই হোক না কেন । বাস্তবে তো তাদের নায়কের মতো দেখতে হয় না । কিন্তু সিনেমায় যখন নায়ক অভিনয় করেন তখন তাঁদের নায়কোচিত দেখতে হয়ে যায়। পুলিশকেও দেখতে হয় সেরকম । আর্মি অফিসার বা গোয়েন্দাকেও সে রকমই দেখতে হয়। কিন্তু বাস্তবে তো অনেকটাই ব্যতিক্রম দেখা যায় । তাছাড়া সবচেয়ে বড় কথা হল আমরা যে ধরনের গোয়েন্দা চরিত্র পড়েছি বা দেখেছি একেন সেরকমই একজন এলে তিনি এত জনপ্রিয় নাও হতে পারতেন।
একেনের মধ্যে একটা নতুনত্ব মানুষ পেয়েছেন । তা হল, একেন আদতে এমন একজন মানুষ যাঁকে দেখলে গোয়েন্দা বলে মনেই হয় না । দেখলেই মনে হবে তিনি খুবই সাধারণ একজন বাঙালি মধ্যবিত্ত মানুষ । তাঁর বিভিন্ন কাজের মধ্যে দিয়ে দর্শক নিজেকেই দেখতে পায়। একেন জিতলে তাঁরাও জেতে। আরেকটা বিষয় হল একেনবাবুর গল্প যেভাবে চরিত্রটাকে বলা আছে আর আমরা যেভাবে স্ক্রিনে সেটা তুলে ধরি সেটা একেবারে আলাদা । গল্পের একেনবাবু একটু ক্লামজি একটু অগোছালো চরিত্র তবে সেটা এতো মজার নয় । এই যে মিশেলটা করা হয়েছে যার মধ্যে একটা অগোছালো বিষয় আছে, একটা সাধারণ বাঙালির ব্যাপার আছে আবার একজন অসাধারণ বুদ্ধিমাণ মানুষ আছে । আমার মনে হয় সেটা খুব আনকোড়া লেগেছে সকলের কাছে ।
প্রশ্ন: একেনবাবু দেখতে গিয়ে আমাদের অনেকেরই জনি ইংলিশের কথা মনে পড়ে গিয়েছিল, আপনি যখন অফারটা পান তখন এই ধরনের চরিত্রগুলো আপনার ওপর কোনও প্রভাব ফেলেছিল কী?
উত্তর: না, প্রথমকথা একেনের কোনও গল্প আমার পড়া ছিল না । প্রথম যখন আমি চিত্রনাট্যটা শুনলাম আমার মনে প্রথম যে চরিত্রটার কথা এসেছিলাম তা হল করমচাঁদ । আমরা যখন ছোট ছিলাম তখন দূরদর্শনে করমচাঁদ বলে একটি ধারাবাহিক হত সেখানে একজন গোয়েন্দা ছিলেন যিনি এমনই অগোছালো । সে অর্ধেক খাবার খেয়ে পকেটে রেখে দেয় আবার কারও সঙ্গে কথা বলতে বলতে সেই খাবারই বের করে খায় । সে কী বলে তা কেউ সেভাবে বুঝতে পারে না । সেই অগোছালো চরিত্রটির একটা হালকা ছাপ ছিল আমার মনে । পরেও আমি অনেক খুঁজে দেখার চেষ্টা করেছি তবে তেমন কাউকে পাইনি ।
প্রশ্ন: আপনার একেনবাবু হিসাবে অভিনয়ের আগের অধ্যায়টার কথা যদি একটু বলেন...
উত্তর: আমি খুব ছোট থেকেই অভিনয়ের সঙ্গে যুক্ত । আমার মনে পড়ে প্রথম যখন থিয়েটারে অভিনয় করি তখন আমি ক্লাস ফোরে পড়তাম । তারপর কখনও করেছি কখনও আবার করিনি । কখনও পড়াশোনার জন্য ছেড়েছি কখনও আবার চাকরির জন্য । মাঝে কলকাতার বাইরে পোস্টিং ছিল সেসময় একেবারেই থিয়েটার করা হয়নি । ফিরে এসে আবার থিয়েটার করেছি । এভাবেই চলেছে । তবে আমার থিয়েটারের সঙ্গে যোগাযোগটা একেবারে কখনওই বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়নি । 2017 সালে আমি চাকরিটা ছেড়ে দিলাম । ভেবেছিলাম আমি শুধু থিয়েটারটাই করব ।
প্রশ্ন: আপনার প্রথম সিনেমায় আসা কোন ছবির হাত ধরে?