হুগলি, 15 মার্চ : বিজেপির প্রার্থীতালিকা ঘোষিত হতেই হুগলি জেলাজুড়ে ছড়াচ্ছে বিক্ষোভের আগুন ৷ কোথাও দলীয় কার্যালয়ে তালা ঝোলালেন বিক্ষুব্ধ বিজেপিকর্মীরা ৷ কোথাও আবার দলেরই সহকর্মীদের হাতে মার খেতে হল স্থানীয় নেতাকে ৷ ভাঙচুর, রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ থেকে শুরু করে আত্মহত্যার হুমকি ৷ বাদ গেল না কিছুই ৷
89 বছর বয়সেও তৃণমূলের টিকিটে ভোটে লড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন সিঙ্গুরের মাস্টারমশাই ৷ তাঁর সেই মনোবাঞ্ছা পূর্ণ করেননি তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায় ৷ একুশের নির্বাচনে তৃণমূলের টিকিট পাননি রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য ৷ বদলে সিঙ্গুর থেকে প্রার্থী করা হয়েছে রবীন্দ্রনাথের ঘোরতর বিরোধী হিসাবে পরিচিত বেচারাম মান্নাকে ৷
এই অবস্থায় রাতারাতি দল বদলে মাস্টারমশাই এখন বিজেপিতে ৷ পদ্ম শিবিরে নাম লেখাতেই মিলেছে কাঙ্ক্ষিত ধন ৷ সিঙ্গুর থেকেই তাঁকে প্রার্থী করেছে বিজেপি ৷ কিন্তু শীর্ষ নেতৃত্বের এই সিদ্ধান্ত মানতে পারছেন না সিঙ্গুর-সহ হুগলির নিচুতলার বিজেপি কর্মীরা ৷ তাঁদের সাফ কথা, স্রেফ টিকিটের খাতিরে রং বদলানো এই বৃদ্ধকে দলের প্রার্থী করা চলবে না ৷ প্রার্থী করতে হবে কর্মীদের পছন্দের কোনও নেতাকেই ৷
হুগলিজুড়ে বিক্ষোভ বিজেপি কর্মীদের ৷ এই দাবিকে সামনে রেখেই সোমবার হুগলির নানা প্রান্তে বিক্ষোভ দেখান বিজেপির কর্মীরা ৷ এমনকী, সিঙ্গুরে প্রার্থী বদলের দাবিতে হুগলিতে দলের সাংগঠনিক কার্যালয়ের গেটে তালাও ঝুলিয়ে দেন তাঁরা ৷ একইসঙ্গে মনোমালিন্য শুরু হয় দেবব্রত বিশ্বাসকে নিয়েও ৷ প্রসঙ্গত, মাস্টারমশাইয়ের মতো দেবব্রত বিশ্বাসও তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন ৷ তাঁর দলবদলে ঘোরতর আপত্তি রয়েছে বিজেপি কর্মীদের ৷ উপরন্তু তাঁরা জানতে পারেন সপ্তগ্রামে এই দেবব্রতকেই প্রার্থী করার কথা ভাবছে দল ৷ এতে আগুনে ঘি পড়ে ৷
ঘটনার প্রতিবাদে প্রথমে রাস্তা অবরোধ করেন বিজেপি কর্মীরা ৷ ঘটনার রেশ গড়ায় সোমবার সন্ধে পর্যন্ত ৷ জেলায় দলের সাংগঠনিক সভাপতি গৌতম চট্টোপাধ্য়ায়ের সঙ্গে এক প্রস্থ আলোচনা হয় বিক্ষুব্ধদের ৷ কিন্তু তাতে কোনও রফাসূত্র বের হয়নি ৷ এতে আরও উত্তেজিত হয়ে পড়েন বিক্ষুব্ধরা ৷ জেলা সভাপতি বেরিয়ে যেতেই শুরু হয় ভাঙচুর ৷ কার্যালয়ের ভিতরের আসবাব ও জানলার কাচ ভাঙচুর করেন বিজপির কর্মীরা ৷ যত রাগ গিয়ে পড়েন পোলবায় দলের মণ্ডল সভাপতি সোমনাথ মৈত্রর উপর ৷ তাঁকে ধরে উত্তম মধ্যম দেন বিক্ষুব্ধরা ৷ কোনও রকমে কার্যালয়ের ভিতরে ঢুকে রক্ষা পান তিনি ৷ হামলাকারীদের একটাই দাবি, অবিলম্বে সপ্তগ্রাম বিধানসভা কেন্দ্রে রাজকুমার পাঠকের নাম প্রার্থী হিসাবে ঘোষণা করতে হবে ৷
আরও পড়ুন :গড়বেতায় দলীয় প্রার্থীকে নিয়ে কোন্দল বিজেপির অন্দরে
বিজেপি কর্মীদের বিক্ষোভ, রাস্তা অবরোধ করতে দেখা যায় হরিপালেও ৷ গোপীনগর মোড়ে বৈদ্যবাটি -তারকেশ্বর রোডের উপর আগুন জ্বালিয়ে প্রতিবাদ কর্মসূচিতে সামিল হন তাঁরা ৷ দাবি ছিল, সমীরণ মিত্রের প্রার্থীপদ খারিজ ৷ প্রসঙ্গত, এই সমীরণও তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন সদ্য ৷
এমনকী, বিতর্ক তৈরি হয়েছে লকেট চট্টোপাধ্য়ায়ের প্রার্থীপদ নিয়েও ৷ চুঁচূড়ায় বিজেপির টিকিটে লড়াইয়ে নামছেন হুগলির বর্তমান সাংসদ ৷ অথচ দলের কর্মীদের অভিযোগ, মোটা টাকা দিয়ে প্রার্থীপদ খরিদ করেছেন লকেট ৷ যার প্রতিবাদে মগরার কাঁটাপুকুরে বিক্ষোভ দেখান স্থানীয় বিজেপি কর্মীরা ৷
দিকে দিকে যখন এমন ঘটনা ঘটছে, তখনও কর্মীদের এই অসন্তোষকে পাত্তা দিতে রাজি হননি হুগলির সাংগঠনিক সভাপতি গৌতম চট্টোপাধ্য়ায় ৷ তাঁর সাফাই, পরিবার বেড়েছে, তাই কিছু সমস্য়া হচ্ছে ৷ দলীয় কর্মীদের দাবিদাওয়া শীর্ষ নেতৃত্বকে জানানো হবে ৷ তারাই যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার নেবে ৷