মালদা, 26 নভেম্বর : পুরাতন মালদায় শুরু হয়েছে বিজেপি ও তৃণমূলের তরজা ৷ গেরুয়া শিবিরের দাবি, তৃণমূল তাদের দলের জনপ্রতিনিধির উপর হামলা চালায় । অপহরণের চেষ্টা করে (BJP leader allegedly abducted in Malda) । অন্যদিকে তৃণমূলের বক্তব্য, এর সঙ্গে তাদের কোনও যোগ নেই । এই ঘটনা বিজেপির গোষ্ঠীকোন্দলের ফসল ।
বিধানসভা নির্বাচনের আগে দলীয় প্রার্থীর উপর গুলি চালানোর ঘটনায় জড়িত থানার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছিল পুরাতন মালদার সাহাপুর এলাকার বিজেপি নেতা নিতাই মণ্ডলকে । যদিও পরে আদালতের নির্দেশে জামিনে মুক্ত হন তিনি । তবে সেই ঘটনার প্রেক্ষিতে নিতাইকে দল থেকে বহিষ্কার করার কথা ঘোষণা করেন বিজেপির জেলা সভাপতি গোবিন্দচন্দ্র মণ্ডল । দল থেকে বহিষ্কৃত হয়েও নিতাই অবশ্য নিজেকে বিজেপি হিসাবেই দাবি করতেন । এলাকায় বিজেপির কর্মসূচিতেও তাঁকে দেখা যায় । এবার বিজেপিরই এক পঞ্চায়েত সদস্যের (BJP panchayat member) উপর হামলা ও তাঁকে অপহরণের চেষ্টার অভিযোগে আবার তাঁকে গ্রেফতার করল মালদা থানার পুলিশ ।
সাহাপুরের নাগেশ্বরপুরের বাসিন্দা পূজা মণ্ডল (ঘোষ) সাহাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের নির্বাচিত সদস্য । কিছুদিন ধরে অনাস্থা এনে এই পঞ্চায়েত দখল করার চেষ্টা করছে তৃণমূল । তারই প্রেক্ষিতে গতকালের ঘটনা বলে মনে করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা । এনিয়ে তাঁরা শাসকদলের বিরুদ্ধেই অভিযোগের আঙুল তুলেছেন । যদিও মালদা থানার আইসিকে পূজা বয়ান দিয়েছেন, 23 নভেম্বর ন’মাসের বাচ্চাকে নিয়ে তিনি স্থানীয় ছাতিয়ান মোড় এলাকায় তাঁর বাবার বাড়িতে যান । গতকাল রাতে তাঁর স্বামী রাহুল ঘোষ তাঁদের শ্বশুরবাড়ি ফিরিয়ে আনতে গিয়েছিলেন । সেই সময় বিজেপির কিছু লোকজন বাবার বাড়িতেই স্বামী-সহ তাঁকে আটকে রাখে । বাইরে বেরোলে তাঁদের খুনের হুমকি দেয় । তিনি ফোনে মালদা থানায় খবর দিলে পুলিশ সেখানে যায় । বিজেপির দুষ্কৃতীরা পুলিশের সঙ্গেও ঝামেলায় জড়িয়ে পড়ে । পুলিশের উপর হামলা চালায় । শেষ পর্যন্ত পুলিশ তাঁদের উদ্ধার করে নিয়ে যায় ।
এই ঘটনার সঙ্গে পুলিশ-তৃণমূল যোগের অভিযোগ তুলেছেন বিজেপির জেলা সহ-সভাপতি তাপসকুমার গুপ্ত । বলেন, "পূজা মণ্ডল (ঘোষ) সাহাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতে আমাদের নির্বাচিত সদস্য । বেশ কিছুদিন ধরে তাঁর উপর দল পরিবর্তনের চাপ আসছিল । সেই চাপ সহ্য করতে না পেরে তিনি স্বামী-সন্তানকে নিয়ে বাপের বাড়িতে যান । গতকাল রাত সাড়ে 10টা নাগাদ পূজাদেবীর শ্বশুরমশাই মালদা থানার পুলিশকে জানান, গ্রামের কিছু লোকজন তাঁর ছেলে ও বউমাকে আটকে রেখেছে । পুলিশ যেন তাঁদের উদ্ধার করতে সাহায্য করে । তখন আমাদের কিছু নেতা-কর্মী সেখানে ছিলেন । তাঁদের সামনেই তৃণমূলের লোকজন পূজাদেবীকে তাদের সঙ্গে নিয়ে যাবে বলে জানায় । আমাদের কর্মীরা তাদের বাধা দেন । সেই সময় মালদা থানার আইসির নেতৃত্বে পুলিশ সেখানে যায় । পুলিশের সামনেই তৃণমূলীরা পূজাদেবীকে বাড়ি থেকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে । আমাদের কর্মীরা পূজাদেবীর ইচ্ছে অনুযায়ী কাজ করতে বলেন । পুলিশ কোনও কথা না শুনে আমাদের কর্মীদের উপর লাঠিচার্জ করে । সেই সুযোগে তৃণমূলের লোকজন পূজা মণ্ডলকে তাদের হাতে নিয়ে নেয় । তাদের মদত দিয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে আমাদের পাঁচজনকে গ্রেফতার করে । এই রাজ্যে এখন তৃণমূলেরই জমানা । তারা পুলিশকে চালিত করছে । সাহাপুর গ্রাম পঞ্চায়েত আমাদের । পূজা মণ্ডলের শ্বশুরমশাইয়ের সহযোগিতায় এবং বিভিন্ন চাপ দিয়ে পুলিশ সেই পঞ্চায়েত তৃণমূলের হাতে তুলে দেওয়ার চেষ্টা করছে । আমরা চাই, দলদাস হিসাবে নয়, নিরপেক্ষ হিসাবেই পুলিশ ঘটনার তদন্ত করুক ।"
মালদায় পুলিশের বিরুদ্ধে তৃণমূলের সঙ্গে আঁতাতের অভিযোগ তুলেছে গেরুয়া শিবির যদিও যুব তৃণমূলের জেলা সম্পাদক সুদর্শন হালদারের বক্তব্য, "এটা বিজেপির নিজেদের মধ্যে ঘটনা । এর সঙ্গে তৃণমূলের কোনও যোগ নেই । আর একজন মহিলা সমস্যায় পড়লে মানুষ তাঁকে অবশ্যই সাহায্য করবেন । ওই মহিলা নিজেই থানায় অভিযোগ জানিয়েছিলেন । তাই পুলিশ সেখানে গিয়ে তাঁকে উদ্ধার করেছে । এই ঘটনায় কিছু মানুষ পুলিশের সঙ্গে শাসকদলের যোগ খুঁজছে । কিন্তু এর সঙ্গে শাসকদলের কোনও সম্পর্ক নেই । তবে এক মহিলার উপর বিজেপির লোকজনের চড়াও হওয়াটা খুব লজ্জাজনক । আমরা এর প্রতিবাদ জানাচ্ছি । গোটা দেশেই বিজেপি এমন ঘটনা ঘটাচ্ছে । ত্রিপুরাতেও দেখা গিয়েছে । এরা ক্ষমতার অপব্যবহার করছে । আমরা ধিক্কার জানাচ্ছি ।"
এদিকে আজ পুলিশি হেফাজতে থাকা নিতাই মণ্ডল বলেন, "বিজেপির পঞ্চায়েত সদস্যকে জোর করে তুলে নিয়ে গিয়ে তৃণমূল পঞ্চায়েত দখল করার চেষ্টা করেছে । আমরা প্রতিবাদ করায় পুলিশ আমাদের মেরেছে, গ্রেফতার করেছে । আমরা এর প্রতিবাদ জানাচ্ছি ।" যদিও এই ঘটনায় এখনও পুলিশের কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি ।
আরও পড়ুন : TMC Leader Accused : বৃদ্ধ দম্পতির বসতভিটে বিক্রির অভিযোগ তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে