কলকাতা, 10 সেপ্টেম্বর : তখন তার বয়স মাত্র তিন দিন । ওজন ছিল 1.3 কেজি । কোরোনায় আক্রান্ত হওয়ায় ভরতি করা হয় কলকাতা আনন্দপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে । এরপর COVID-19 ভাইরাসের সঙ্গে প্রায় দু-সপ্তাহ লড়াই চলে ওই সদ্যোজাতর । অবশেষে 21 দিনের মাথায় কোরোনাকে হারিয়ে বিশ্বের সব থেকে কম ওজনের কোভিড যোদ্ধার শিরোপা পেল উত্তর কলকাতার এই সদ্যোজাত ।
আনন্দপুরের ওই বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক সুমিতা সাহা জানিয়েছেন, "বিশ্বে এর আগে এত কম ওজনের কোনও শিশু কোরোনাকে জয় করতে পারেনি । এর আগে UK-তে কোরোনা আক্রান্ত 1.5 কেজির এক শিশুর সুস্থ হয়ে ওঠার রেকর্ড রয়েছে । তবে কোরোনা পজ়িটিভ অবস্থায় আমাদের কাছে যখন এই শিশুটিকে নিয়ে আসা হয়েছিল তখন তার ওজন ছিল মাত্র 1.3 কেজি । বয়স ছিল 3 দিন । এরপর শিশুটিকে সুস্থ করে বুধবার 32 দিন বয়সে তাকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয় । এখন ওর ওজন হয়েছে 1.9 কেজি । সেই হিসেবে এই শিশুটি এখন কোভিড জয়ী হিসেবে বিশ্বে সব থেকে কম ওজনের শিশু ।"
জরুরি ভিত্তিতে কলকাতার অন্য একটি বেসরকারি হাসপাতালে সিজ়ারিয়ান সেকশনে যমজ শিশুর জন্ম দেন উত্তর কলকাতার এক মহিলা । সুস্থ হয়ে ওঠা এই শিশুটি ওই মহিলারই সন্তান । তবে জন্মের তিন দিনের মধ্যেই আরেক শিশুর মৃত্যু হয় । সদ্যোজাতর মায়েরও কোভিড পজ়িটিভ ধরা পড়েছে । হাসপাতাল সূত্রে খবর, এই শিশুটির 21 দিনের মাথায় কোরোনার রিপোর্ট নেগেটিভ আসে । তবে কোরোনার জেরে তার হার্টের পেশিতে সমস্যা দেখা দেয় । এই সমস্যার জেরে শিশুটিকে বাঁচানো সম্ভব হবে কি না তা নিয়েও চিন্তা ছিল । তবে আপাতত সে সুস্থ হয়ে 32 দিন বয়সে বাড়ি ফিরে যায় ।
এই শিশুটিকে যখন আনন্দপুরের হাসপাতালে ভরতি করা হয়, তখন তার মা-কে অন্য একটি হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল । চিকিৎসক সুমিতা কোলে জানিয়েছেন, "শিশুটিকে যখন কোভিড পজ়িটিভ অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয় তখন তার শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল । তাকে অক্সিজ়েনের সাপোর্ট দেওয়া হয়েছিল । ফ্লুইড দেওয়া হচ্ছিল । প্রিম্যচিওর্ড বেবির ক্ষেত্রে এগুলি সাধারণ বিষয় । তবে এই শিশুটির ক্ষেত্রে 21-22 দিন পর্যন্ত অক্সিজ়েনের সাপোর্ট দিতে হয়েছিল । এরপর শিশুটির শারীরিক অবস্থার ধীরে ধীরে উন্নতি হয় । শিশুটির বয়স যখন 16 দিন, তখন একবার কোভিড টেস্ট করা হয়েছিল । তখনও তার রিপোর্ট পজ়িটিভ আসে । এরপর 21 দিন বয়সে ফের পরীক্ষা করা হয় । তার রিপোর্ট নেগেটিভ আসে । এরপর শিশুটিকে আইসোলেশন NICU (নিওনেটাল ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট) থেকে নরমাল NICU-তে স্থানান্তর করা হয়।"
কোরোনা জয়ী বিশ্বের সব থেকে কম ওজনের শিশু ওই দিনই কলকাতার অন্য একটি বেসরকারি হাসপাতালে শিশুটির মায়ের COVID-19 টেস্টের রিপোর্টও নেগেটিভ আসে । তবে, শিশুটির COVID-19 টেস্টের রিপোর্ট নেগেটিভ এলেও, তার হার্ট রেট বেড়ে যায় । চিকিৎসক সুমিতা সাহা বলেন, "পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা যায়, কোনও ইনফেকশনের কারণে নয়, হার্ট রেট বেড়ে যাওয়ার কারণ, ওর COVID-19-এর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত মায়োকার্ডাইটিস হচ্ছে।" তিনি জানিয়েছেন, "মায়োকার্ডাইটিস অর্থাৎ, হার্টের পেশিতে একটা উইকনেস দেখা দেয় । এই কারণে হার্ট ফেলিওর, এমনকী মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে । এই অবস্থায় এই শিশুটির চিকিৎসা শুরু হয় । অবশেষে এই শিশুটিকে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছেন তাঁরা । বুধবার এই শিশুটির 32 দিন বয়সে হাসপাতাল থেকে ছুটি দেওয়া হয় । চিকিৎসক সুমিতা সাহা জানিয়েছেন, "এই শিশুটি এখন সুস্থ । ভালো আছে।"
তবে কীভাবে এই শিশুটি COVID-19-এ আক্রান্ত হয়ে থাকতে পারে? চিকিৎসক সুমিতা সাহা বলেন, "যত দিন এগোচ্ছে COVID-19-এর বিষয়ে নতুন নতুন তথ্য পাওয়া যাচ্ছে । এক সময় মনে করা হত, প্লাসেন্টার মাধ্যমে গর্ভস্থ শিশুর শরীরে COVID-19-এর সংক্রমণ ঘটতে পারে না । জন্মের পরে মায়ের কাছ থেকে হয়ত কোনও শিশুর শরীরে COVID-19-এর সংক্রমণ ঘটতে পারে । এখন দেখা যাচ্ছে, প্লাসেন্টার মাধ্যমেও গর্ভস্থ শিশু COVID-19-এ আক্রান্ত হতে পারে । গর্ভস্থ অবস্থায় এই শিশুটি COVID-19-এ আক্রান্ত হয়েছে বলে মনে হচ্ছে । কারণ, সিজ়ারিয়ান সেকশনের পরে এই যমজ শিশুকে মায়ের কাছ থেকে আলাদা করে রাখা হয়েছিল । মা COVID-19 পজ়িটিভ ছিলেন বলে গর্ভস্থ অবস্থায় এই শিশুটি COVID-19-এ সংক্রমিত হয়ে থাকতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।"