কলকাতা, 25 ফেব্রুয়ারি : মোটা টাকা নিয়ে সারোগেট মা হওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন । করেছিলেন চুক্তি । গর্ভে স্থাপিত হয় ভ্রূণ । কিছুদিন সব ঠিকঠাক ছিল । তারপর রীতিমতো ভ্যানিশ হয়ে যান । পুলিশের তৎপরতায় 20 ফেব্রুয়ারি গ্রেপ্তার হয় ওই মহিলা । কিন্তু, বহু জিজ্ঞাসাবাদেও ভ্রুণ রহস্যের সমাধান হচ্ছিল না । রীতিমতো নাছোড়বান্দা হয়ে ওঠে নিউ আলিপুর থানার পুলিশ । আর তাতেই পর্দা ফাঁস হল বড়সড় প্রতারণার ।
সন্তানের মুখ দেখতে চেয়েছিলেন দম্পতি । তাঁরা দু'জনেই তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থায় কর্মরত । দক্ষিণ কলকাতার অভিজাত এলাকায় থাকেন । বহুদিন ধরেই নিউ আলিপুরের একটি নামী ফার্টিলিটি ক্লিনিকের সাহায্য নিচ্ছিলেন ওই দম্পতি । অবশেষে শহরের নামী বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শে ঠিক হয়, 'ইনভিট্রো ফার্টিলাইজেশন' করার । সেইমতো একটি ত্রিপাক্ষিক চুক্তি হয় । ওই দম্পতির পাশাপাশি চুক্তিতে সই করেন ক্লিনিকের ম্যানেজমেন্ট এবং সারোগেট মাদার হতে চাওয়া কাশ্মীরা মোল্লা । কাশ্মীরা দক্ষিণ 24 পরগনার মথুরাপুরের দহখণ্ডের বাসিন্দা । মোট 8 লাখ টাকার চুক্তি হয় । 3 লাখ 75 হাজার টাকা দেওয়ার পর ওই দম্পতির জাইগোট থেকে তৈরি ভ্রুণ গত বছর 7 জুলাই স্থাপন করা হয় কাশ্মীরার শরীরে । তারপর থেকে ওই দম্পতি প্রায় রোজই সারোগেট হাউজ়ে কাশ্মীরার সঙ্গে দেখা করতেন । সবকিছু ঠিকঠাকই চলছিল । কিন্তু 10 ডিসেম্বর কাউকে কিছু না বলে সারোগেট হাউজ় থেকে পালিয়ে যায় সে । ওই দম্পতি নিজেদের মতো করে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ খবর শুরু করেন । কিন্তু খোঁজ পাওয়া যায়নি । তারপরেই তাঁরা নিউ আলিপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন ।
তদন্তে নেমে নিউ আলিপুর থানার পুলিশ কাশ্মীরের মোবাইল ফোন ট্র্যাক করা শুরু করে । দক্ষিণ 24 পরগনার বিভিন্ন অঞ্চলে তার টাওয়ার লোকেশন পাওয়া যায় । কিন্তু, ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে আর কোনওভাবেই কাশ্মীরার ফোন কাজ করছিল না । এবার শুরু হয় হিউম্যান ইন্টেলিজেন্সের কাজ । কাশ্মীরার নতুন নম্বর জোগাড় করা হয় । সেই সূত্র ধরে 20 ফেব্রুয়ারি SSKM হাসপাতাল থেকে গ্রেপ্তার করা হয় কাশ্মীরাকে ।
তদন্ত শেষ করার জন্য ভ্রূণের হদিশ পাওয়ার দরকার ছিল তদন্তকারীদের । শুরু হয় জিজ্ঞাসাবাদ । কাশ্মীরা জানায়, সারোগেট হোম থেকে সোজা মথুরাপুরের বাড়িতে চলে যায় সে । সেখানে পড়ে গিয়ে তার মিসক্যারেজ হয়ে যায় । তখন সেই ভ্রুণ সে নদীর জলে ভাসিয়ে দেয় । বারবার জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে একই তত্ত্ব আওড়াতে থাকে কাশ্মীরা ।