পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / city

2009-এর পুনরাবৃত্তি ? - নরেন্দ্র মোদির জয়

2009 সালের সঙ্গে এ বারের লোকসভা নির্বাচনে বেশ কিছু মিল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে । সে বছর নির্বাচনে বামেদের বিপর্যস্ত করে তৃণমূল ইঙ্গিত দিয়েছিল, বাংলার ক্ষমতার অলিন্দে পরিবর্তন আসন্ন । সে বার তৃণমূলের ভোট প্রাপ্তির শতকরা হার ছিল 31.18 । যদিও সে বার রাজ্যে 28 টি আসনে তৃণমূল লড়েছিল । বাকি 14 আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল তৃণমূলের তৎকালীন জোটসঙ্গী কংগ্রেস । সে বার কংগ্রেস পেয়েছিল 13.45 শতাংশ ভোট আর তৎকালীন বাংলার শাসকদল বামেদের প্রাপ্ত ভোটের হার ছিল 43.30 শতাংশ । এ বছর এখনও পর্যন্ত পুরো ফল প্রকাশ হয়নি । কিন্তু, প্রাথমিকভাবে যা ট্রেন্ড তাতে শতকরা হার অনেকটাই 2009 সালের মতো । স্বাভাবিকভাবেই কৌতুহল তৈরি হচ্ছে 2021 সালের দিকে নজর রেখে ।

বাংলা

By

Published : May 23, 2019, 8:59 PM IST

কলকাতা, 23 মে : তিনি হয়তো আশঙ্কা করেছিলেন । আর তাই বোধহয় 42টি লোকসভা কেন্দ্রে চরকিপাক খেতে দেখা গেছিল তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে । সেই আশঙ্কাই হয়তো 'বাস্তব রূপ' নিল আজ ।

বাংলার মাটিতে আক্ষরিক অর্থেই গেরুয়া ঝড় । 2009 সালে যেভাবে সবুজ আবিরে মুছে যাওয়ার ইঙ্গিত মিলেছিল বাম দুর্গের, 10 বছর পরে ঠিক যেন সেই ঘটনার ফ্লাশব্যাক । একেবারে 2 থেকে 19 টি আসনে উঠে আসার ইঙ্গিত BJP-র । 2014 সালে লোকসভা নির্বাচনে বাংলার মাটিতে মাত্র 2টি আসন পেয়েছিলেন মোদি-শাহরা ।

এই সংক্রান্ত আরও খবর : দেশবাসী ফকিরের ঝুলি ভরে দিল : মোদি

আজ ফল প্রকাশের প্রথম রাউন্ড থেকেই শুরু হয় গেরুয়া ঝড় । মমতার দাবি ছিল 42-এ 42 । আর ঘড়ির কাঁটা যত এগিয়েছে ততই নেমেছে তৃণমূলের আসন সংখ্যা । প্রাথমিকভাবে যা বোঝা গেছে তাতে 2014 সাল থেকে কমপক্ষে 11-12 টি আসন কম পেতে চলেছে তৃণমূল । আর গতবারের থেকে 16-17 টি আসন বেশি পেতে চলেছে BJP । নিঃসন্দেহে বাংলার মাটিতে যা ঐতিহাসিক ।

এই সংক্রান্ত আরও খবর : মোদিজিকে অভিনন্দন, ভালোবাসা দিয়েই ফিরব : রাহুল

2009 সালের সঙ্গে এ বারের লোকসভা নির্বাচনে বেশ কিছু মিল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে । সে বছর নির্বাচনে বামেদের বিপর্যস্ত করে তৃণমূল ইঙ্গিত দিয়েছিল, বাংলার ক্ষমতার অলিন্দে পরিবর্তন আসন্ন । সে বার তৃণমূলের ভোট প্রাপ্তির শতকরা হার ছিল 31.18 । যদিও সে বার রাজ্যে 28 টি আসনে তৃণমূল লড়েছিল । বাকি 14 আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল তৃণমূলের তৎকালীন জোটসঙ্গী কংগ্রেস । সে বার কংগ্রেস পেয়েছিল 13.45 শতাংশ ভোট আর তৎকালীন বাংলার শাসকদল বামেদের প্রাপ্ত ভোটের হার ছিল 43.30 শতাংশ । এ বছর এখনও পর্যন্ত পুরো ফল প্রকাশ হয়নি । কিন্তু, প্রাথমিকভাবে যা ট্রেন্ড তাতে শতকরা হার অনেকটাই 2009 সালের মতো । স্বাভাবিকভাবেই কৌতুহল তৈরি হচ্ছে 2021 সালের দিকে নজর রেখে ।

এই সংক্রান্ত আরও খবর : রাজনীতির ইনিংসে নেমেই "ম্যান অফ দা ম্যাচ" গম্ভীর

আজকের ভোটের ফল আরও কয়েকটি বিষয়কে স্পষ্ট করল । প্রশ্ন তুলল বেশ কিছু । কেন মাত্র 10 বছরের মধ্যেই তৃণমূলের দিক থেকে মানুষ মুখ ফিরিয়ে নিলেন ? কেনই বা BJP-র প্রতি মানুষের বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরি হল ? বাংলার রাজনীতি নিয়ে যারা চর্চা করেন তাঁরা বেশ কিছু কারণকে তুলে ধরছেন ।

প্রথমত, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কিছু ভুল নীতি । যেমন, সংখ্যালঘুদের কাছে পেতে ইমামভাতা চালু করা বা কোনও ইসলামিক ধর্মানুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে নমাজ পাঠে অংশ নেওয়ার মতো একাধিক ঘটনা । সমালোচকদের মতে এমন পদক্ষেপ সংখ্যালঘুদের কাছে টানার চেষ্টা হলেও তা বুমেরাং হয়েছে দলের পক্ষে । আর এই মেরুকরণকে কাজে লাগিয়েছে BJP । হিন্দু ভোট ব্যাঙ্ককে সম্পূর্ণরূপে নিজেদের কাছে টানতে পেরেছে তারা ।

এই সংক্রান্ত আরও খবর : অভূতপূর্ব জয়ের জন্য নরেন্দ্রভাই মোদিকে শুভেচ্ছা : আদবানি

দ্বিতীয়ত বলা যায় পশ্চিমবঙ্গের কর্মসংস্থান, শিল্পের অচলাবস্থার মতো নেওয়ার ঘটনাকে । গত 10 বছরে SSC-র মতো গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষায় অনেক টালবাহানা দেখা দিয়েছে । পশ্চিমবঙ্গে তেমনভাবে শিল্প আসেনি বলেও অনেকে দাবি করেছেন ।

তৃতীয়ত, ফ্যাক্টর হয়ে উঠেছেন মুকুল রায় । মমতার অন্যতম সৈনিক ছিলেন মুকুল । তাঁকে কান্ডারি করেই একের পর এক ভোটযুদ্ধ টপকেছে তৃণমূল । কিন্তু সেই মুকুল আজ তৃণমূল থেকে ঝড়ে গেছেন । মুকুল শুধু BJP-তে যাননি, একের পর এক তৃণমূল কর্মী-সমর্থককে নিজের দিকে টেনেছেন । মুকুল রায় তৃণমূলকে হাতের তালুর মতো চেনেন । আর মুকুল রায়ের এই 'জ্ঞান'কে পুরদস্তুর কাজে লাগাল BJP । তৃণমূল সংগঠনের দুর্বলতা মুকুল জানতেন । আর তাই খুব সহজেই দল ভাঙানোর কাজটা তিনি করে ফেললেন ।

চতুর্থত, নিচুস্তরের কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ জমছিল দলের প্রতি । একই সঙ্গে বাড়ছিল তোলাবাজি, মস্তানি, জুলুমবাজির মতো অভিযোগও । সাধারণ মানুষ এ সবের বিরুদ্ধে ক্রমেই অসন্তুষ্ট হয়ে পড়ছিলেন । যার ফল স্বাভাবিকভাবেই পড়ল EVM-এ ।

পঞ্চমত, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গ্রহণযোগ্যতা এখনও বর্তমান, সন্দেহ নেই । কিন্তু তাঁর দলের অন্যান্যদের প্রতি কোথাও যেন একটি ক্ষোভ তৈরি হচ্ছিল । পাশাপাশি একের পর এক গোষ্ঠীকোন্দল প্রকাশ্যে আসছিল । বিষয়টি আঁচ করে পুরো ভোট মেশিনারিকে নিজের হাতে নিয়ে ফেলেছিলেন মমতা । প্রচার পর্ব শুরু হতেই মোদি-শাহদের আক্রমণ করার জন্য আর কারও উপর ভরসা রাখতে পারেননি তৃণমূল নেত্রী । 42টি আসনে ঘুরে বেড়িয়েছিলেন । চেষ্টা করেছিলেন দলের অন্দরের ক্ষোভ মেটানোর, লড়াই ফিরিয়ে দেওয়ার । কিন্তু ততক্ষণে বোধহয় দেরি হয়ে গেছে ।

ষষ্ঠ, সারদা, নারদের মতো ঘটনায় ক্রমেই চাপ বাড়ছিল তৃণমূলের উপর । দলের একাধিক শীর্ষ নেতাদের জেলে যেতে হয়েছিল । স্বাভাবিকভাবেই সেই ঘটনা জনমানষে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে । সমীক্ষা বলছে তরুণ প্রজন্ম ক্রমশ আস্থা হারাচ্ছিল তৃণমূলের উপর থেকে । যার একটা অংশ BJP-তে গেছে ।

আর সবশেষে বলা যায় এবার বামের একটি বৃহৎ অংশের ভোট চলে গেছে BJP-র দিকে । গতবার 30 শতাংশ ভোট পেয়েছিল বামেরা তার সিংহভাগই গেছে BJP-র দিকে । 2014 সালে 34টি আসন পেয়েছিল তৃণমূল । শতকরা হার ছিল 39.79 । আর BJP-র খাতায় ছিল মাত্র দুটি আসন । শতকরা 22.96 । যেখান থেকে ঝড়ের গতিতে উঠে এল BJP । এবং তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ল মমতার সাধের দুর্গ ।

এই সংক্রান্ত আরও খবর : অর্জুনের লক্ষ্যভেদ, হার মানলেন মমতাও

সন্দেহ নেই 2021 সাল নয়া চ্যালেঞ্জের সামনে দাঁড় করাল মমতাকে । কীভাবে ড্যামেজ কন্ট্রোল হবে তা হয়তো তৃণমূল নেত্রীই জানেন । ইতিহাস বলছে, মমতা যখনই পথে নেমেছেন লক্ষ মানুষকে পাশে পেয়েছেন । অতি সম্প্রতি রাজীব কুমার ইশুতেও সেই ঘটনা প্রমাণ । এখন দেখার 2021-র আগে ভীত মজবুত করতে কীভাবে ব্লু প্রিন্ট তৈরি করবেন তৃণমূল সুপ্রিমো । কাকে নেবেন তাঁর সঙ্গে ? কীভাবে মোদি ঝড়কে রুখবেন বাংলার মাটিতে । তাই হয়তো আজকের ফলের পর মমতা বলেছেন, পরাজয় মানেই পরাজিত নয় । মমতার এই কথার মধ্যেই হয়তো আগামীদিনে লড়াইয়ের নতুন ইঙ্গিত ।

এই সংক্রান্ত আরও খবর : পরাজয় মানেই পরাজিত নয় : মমতা

ABOUT THE AUTHOR

...view details