কলকাতা, 15 ফেব্রুয়ারি : 2015 সালের শেষে পৌর নির্বাচনে শিলিগুড়ি মডেল দেখিয়ে দিয়েছিল একজোট হয়ে লড়াই করলে তৃণমূল কংগ্রেসের মতো শাসককেও আটকে দেওয়া যায় । কিন্তু 2021 সালে বিধানসভা নির্বাচনে বাম কংগ্রেসের সেই ব্যারিকেড ভেঙে দিয়েছিল বিজেপি । সিপিএমের ঘর ভেঙে সেখানে পদ্ম ফুল ফুটিয়েছিলেন শংকর ঘোষ । এবার পৌরসভায় ঘাসফুলের ঝড়ে অশোকের ব্যারিকেড আর বিজেপির সাজানো বাগান দুই তছনছ হয়ে গেল । শিলিগুড়িতে প্রথমবার ভোটে জিতে বোর্ড গড়তে চলেছে তৃণমূল কংগ্রেস ।
কিন্তু কেন এমন হল (Why BJP Lost in Siliguri Municipal Corporation Election 2022) ! কী জাদুতে ভর করে কয়েকদিন আগে বিধানসভা নির্বাচনে যে তৃণমূল উত্তরবঙ্গের এই অংশে সে ভাবে দাঁত ফোটাতে পারেনি, সেখানেই এবার তাদের ঝুলিতে গিয়েছে 47 শতাংশের বেশি ভোট ! 47 ওয়ার্ডের শিলিগুড়ি পৌরনিগমে তৃণমূল একাই জিতেছে 37টি ওয়ার্ড ।
সকলেই জানতে চান এর পেছনে মূল রহস্যটা কি ! হঠাৎ কী এমন হল, যার কারণে গত বিধানসভা নির্বাচনে ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ি থেকে হেরে যাওয়া তৃণমূলের হেভিওয়েট মন্ত্রী গৌতম দেবকে (TMC Leader Goutam Deb) সামনে রেখে এখানে তৃণমূল জিতল হাসতে হাসতে !
তৃণমূলের প্রাক্তন মন্ত্রী এবং শিলিগুড়ি পৌরনিগমের মেয়র গৌতম দেব বলেন, ‘‘এর পিছনে যদি কারও সাফল্য থাকে, তা হল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) নিরবচ্ছিন্ন উন্নয়নের । করোনার এই দুর্দিনে আমাদের কর্মীদের পাশে থাকা । এখনও অনেক কাজ বাকি । উন্নয়নের পথে কলকাতাই রোল মডেল । তাকে সামনে রেখেই এগোতে চাই ।’’
অন্যদিকে এই পরাজয়ের পর বিজেপি বিধায়ক শংকর ঘোষ (BJP MLA Shankar Ghosh) বলেছেন, ‘‘মানুষ আমাদের চায়নি এবং তাই এই পরাজয় । তবে কাউকে দোষারোপ করতে চাই না ৷ তাই আলাদা করে কোনও একটি নির্দিষ্ট কারও দিকে দোষারোপ ছুঁড়ে দিচ্ছি না । সামগ্রিকভাবে আমাদের সংগঠনের পক্ষে মানুষ আস্থা রাখেনি । আমাদের উত্তরবঙ্গের মাটিতে বিশেষ করে শিলিগুড়ির মতো পৌর এলাকাগুলিতে আরও শক্তিশালী সংগঠন গড়ে তুলতে হবে ।’’
শিলিগুড়ির পরাজয় সম্পর্কে বলতে গিয়ে সিপিএম নেতা তথা রাজ্যের প্রাক্তন পৌর ও নগর উন্নয়নমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য (Former Siliguri Mayor Ashok Bhattacharjee) বলেন, ‘‘এটা সামগ্রিকভাবেই আমাদের পরাজয়, তা মানতেই হবে ।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘একুশের বিধানসভা নির্বাচনে শুধু শিলিগুড়িতে সিপিএম প্রার্থী হিসেবে আমি হেরে যাইনি ৷ বিধানসভা নির্বাচনে হেরে গিয়েছিলেন গৌতম দেবও । তবে আমাদের আশা ছিল বিধানসভা নির্বাচনের পরে এই পৌর নির্বাচনে আমাদের ফলাফল আরও ভালো হবে । নির্বাচনটা যদি 22 শে জানুয়ারির মধ্যে করা যেত তাহলে ফলাফল আরও ভালো হতো । তবে নির্বাচন হতে দেরি হল, এর ফল সবাইকেই মেনে নিতে হবে । তবে এই রায়ের বিষয়ে আমাদের খবর নিতে হবে । কেন হেরে গেলাম, তা আরও ভালোভাবে বিচার-বিশ্লেষণ দরকার ।’’
তবে তৃণমূলের এই জয় যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নের, তা মানতে রাজি নন অশোকবাবু । তাঁর অভিযোগ, মানুষকে কিছু কিছু জায়গায় ভুল বোঝানো হয়েছে । বিশেষ করে বেশ কিছু জায়গায় সংখ্যালঘু ভোটারদের যেভাবে বিভাজন করা হয়েছে, তার সুবিধা পেয়েছে তৃণমূল ।
তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা শিলিগুড়ির এই ফলাফল বিশ্লেষণ করতে গিয়ে বিজেপির রাজ্য ভাগের রাজনীতির কথা বলছেন । তাদের একটা বড় অংশের বক্তব্য, পশ্চিমবঙ্গের মানুষ কোনও ভাবেই রাজ্য ভাগকে সমর্থন করে না । তাই এই পরিণতি । তাদের বক্তব্য, ভুলে গেলে চলবে না একুশের বিধানসভা নির্বাচনের নিরিখেও শুধুমাত্র শিলিগুড়িতে বিজেপির এগিয়ে ছিল ছিল 36 টি ওয়ার্ডে । রাজ্য ভাগের রাজনীতি ক্রমেই তাদের শক্তিক্ষয় করেছে । আর এর ফলে তৃণমূলের প্রতি মানুষের ভোট ঐক্যবদ্ধ হয়েছে । এই ফলাফল তারই প্রতিফলন ।
আরও পড়ুন :BJPs Miserable Result in Municipal Corporation Election 2022 : চার পৌরনিগমে শোচনীয় ফল, বঙ্গ বিজেপি আরও কাহিল