পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / city

ক্যাম্পাসে সবুজ বাঁচাতে উদ্যোগী যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় - সহ-উপাচার্য চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য

শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় আমফানের তাণ্ডবে উপড়ে পড়েছে ক্যাম্পাসের গাছ ৷ নষ্ট হয়েছে একাধিক স্থাপত‍্য, রেলিং, সীমানা পাঁচিলের মতো সম্পত্তি । এবার তাই সবুজায়নে উদ্যোগী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ৷

kolkata
নতুন সবুজায়ন দিতে উদ‍্যত যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়

By

Published : Jun 11, 2020, 7:27 AM IST

Updated : Jun 11, 2020, 9:03 AM IST

কলকাতা, 11 জুন: আমফান-তাণ্ডবের পর কেটে গেছে প্রায় 20 দিন । এখনও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করলেই দেখা যায় কমেছে ক্যাম্পাসের দুধারে সবুজের সংখ্যা ৷ তবে , সেগুলি আগের মত সতেজ নয় ৷ সবই উপড়ে পড়ে রয়েছে ৷ আর সেগুলি কোথাও একসঙ্গে স্তুপ করে রাখা হয়েছে । আবার কোথাও রাস্তার উপরেই সারি দিয়ে পড়ে রয়েছে সেগুলি । আমফানে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সবুজ যে পরিমাণে ধ্বংস হয়েছে তার জন্য এখনও আক্ষেপ শোনা যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্দরে । তবে, ইতিমধ্যেই যতটা সম্ভব সবুজ বাঁচানোর মরিয়া চেষ্টা করছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ । নতুন গাছ লাগানোর আগে তাঁরা যে গাছগুলিকে বাঁচানো সম্ভব সেগুলিকে বাঁচানোর উদ‍্যোগ নিয়েছে । বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনীদের সহায়তায় ইতিমধ্যেই 24-25টি গাছকে পুনঃস্থাপন করা হয়েছে । লক্ষ্য 50-টি গাছকে এভাবেই পুনঃস্থাপন করে তাঁদের নতুন প্রাণ দেওয়া ।

ক্যাম্পাসে এভাবেই উপড়ে পড়েছে গাছগুলি ৷

শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় আমফানে গত 20 মে তছনছ হয়ে গেছিল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় । ভেঙে চুরমার হয়ে গেছিল একাধিক স্থাপত‍্য, রেলিং, সীমানা পাঁচিলের মতো সম্পত্তি । কিন্তু, একের পর এক গাছ ভেঙে-উপড়ে পড়ার ছবি বোধহয় সবথেকে বেশি কষ্ট দিয়েছিল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সংযুক্ত মানুষদের । ভেঙে পড়া গাছগুলির কারও বয়স 20, কারও 25, কারও 30 বছর । একদিনের প্রকৃতির রোষে মাটিতে নেমে এসেছিল এতো বছর মাথা উঁচু করে থাকা সবুজগুলি । আমফানে 150-এর বেশি ও আমফান পরবর্তী কালবৈশাখীতে 10-এর বেশি গাছ ভেঙে-উপড়ে গেছে । যে গাছগুলি এখনও আছে , সেগুলি প্রচুর ডাল-পালা ভেঙে গেছিল । আমফানের পর বেশ কয়েকদিন এমন অবস্থা ছিল যে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে গাড়ি চলাচলেও বাঁধা সৃষ্টি হয়েছিল । ধীরে ধীরে এখন ভাঙা গাছগুলি সরিয়ে রাস্তা যানবাহন চলাচল যোগ্য করা হয় । কিন্তু, এত গাছ নষ্ট হয়ে যে অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে তা কী করে পূরণ করা সম্ভব হবে তা ভাবাচ্ছিল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে । সেই ভাবনাচিন্তা থেকেই গঠন করা হয় একটি কমিটি । সেই কমিটির পরামর্শমতো যে গাছগুলিকে বাঁচানো সম্ভব সেগুলিকে পুনঃস্থাপন করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয় । এই কাজে সাহায্য করতে এগিয়ে আসে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনীদের একটি দল । তাঁদের সহায়তায় ইতিমধ্যেই 24-25টি গাছ পুনঃস্থাপন করা সম্ভব হয়েছে বলে জানাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ।

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার স্নেহমঞ্জু বসু এ প্রসঙ্গে বলেন, "কিছুদিন আগেই গাছ অডিট করে আমরা জানতে পেরেছিলাম আমাদের 1800-র উপর বড় বড় গাছ আছে । তার মধ্যে আমফান ঘূর্ণিঝড়ে প্রায় 181-টার উপর গাছ পড়ে গিয়েছিল । প্রচুর বিল্ডিংয়ের উপর পড়ে প্রচুর ক্ষতি হয়েছিল, যাতায়াতের রাস্তা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, কোনও গাড়ি মেন বিল্ডিংয়ে আসতে পারছিল না । তাই আমরা ট্রি ম‍্যানেজমেন্টের জন্য একটি কমিটি গঠন করি । সেই কমিটি গঠন করে আমরা সিদ্ধান্ত নিই, যতটা সম্ভব আমরা ট্রি রিস্টোরেশন করব । আর্কিটেকচারের প্রাক্তন ছাত্র দীপঙ্কর সাহা স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে আমাদের এখানে খুব সাহায্য করছে । তার পরিচালনায় এবং এস্টেট বিভাগের সহায়তায় আমরা ইতিমধ্যেই 25টির উপর গাছকে পুনঃস্থাপন করতে পেরেছি । আমাদের লক্ষ্য 50টার উপর গাছকে পুনঃস্থাপন করা । আমরা চেষ্টা করছি, সব সম্ভব না হলেও যতটা সম্ভব আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সবুজকে ফিরিয়ে আনতে । এই ট্রি ম্যানেজমেন্ট করার এই কমিটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক আশিস মজুমদার, আহ্বায়ক রেজিট্রার স্নেহমঞ্জু বসু । ইস্টার্ন রিজিওনের ন‍্যাশনাল মেডিসিনাল প্ল‍্যান্ট বোর্ডের গবেষক-বিজ্ঞানী সৌমজিৎ বিশ্বাস, ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, এস্টেট বিভাগ, শিক্ষক, অশিক্ষক কর্মচারী সহ আরও অনেকে রয়েছেন এই কমিটিতে ।"

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় বিপুল পরিমাণে সবুজের ক্ষতি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য বলেন, "আমফানে আমাদের এখানে অনেক গাছ পড়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় যে পরিমাণ গাছ রয়েছে তার প্রায় 70 শতাংশ গাছ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে । যাদবপুরে সবুজের এত ক্ষতি আইলার সময়েও হয়নি । এত বড় ক্ষতি খুবই মর্মান্তিক । এত গাছ পড়েছিল যে আমাদের প্রশাসনিক বিল্ডিংয়ে পৌঁছাতেও সমস্যা হচ্ছিল সেই সময় । ধীরে ধীরে সেই গাছগুলো সরানোর ব্যবস্থা করেছি । সঙ্গে গাছ পুনঃস্থাপনেরও একটা উদ্যোগ নিয়েছিলাম । সেটা আংশিকভাবে সফল । সব গাছকে তো পুনঃস্থাপন করা যায় না । আমাদের প্রাক্তন ছাত্রদের একটা দল আছে, তাঁরা উদ্যোগ নিয়ে এই কাজটা বাস্তবায়িত করেছেন । পুনঃস্থাপনের খরচটাও তাঁরাই বহন করেছেন । তাতে এখনও পর্যন্ত আমরা 20-25টা গাছ পুনঃস্থাপন করতে পেরেছি । যদিও যত গাছ পড়েছে তার তুলনায় শতাংশের বিচারে এই সংখ্যাটা খুবই কম । তবুও এই পুনঃস্থাপনের উদ্যোগ নিতে পেরে আমরা যথেষ্ট গর্বিত যে, এই গাছগুলোকে আমরা যথাস্থানে বসাতে পেরেছি ‌।" এছাড়াও তিনি বলেন,"আপাতত পুনঃস্থাপন চলছে । নতুন গাছ রোপন করার জন্য আমাদের যে জায়গাগুলো আছে সেগুলো পরিষ্কার করার দরকার আছে । যা এখনও করা সম্ভব হয়নি । আমরা শুধু রাস্তা পরিষ্কার করেছি । এখনও রাস্তার ধারে প্রচুর গাছের ধ্বংসাবশেষ পড়ে আছে । সেগুলো যতক্ষণ না পরিষ্কার করা হচ্ছে ততক্ষণ নতুন গাছের চারা সেখানে বসানো যাবে না। ফলে, আগে সব পরিষ্কার করা হক । তারপরে আমরা পরিকল্পনা করব যে, কীভাবে কোথায় কোথায় গাছ বসানো যাবে, সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ যে কোন গাছ বসানো যাবে, সেটা নিয়ে আমরা বনবিভাগের সঙ্গে কথা বলে তারপরে আমরা চূড়ান্ত করব । বৃক্ষরোপণ আমরা অবশ্যই করব। গাছ লাগাতেই হবে । কারণ, যে ক্ষতি হয়েছে তা অপূরণীয় । কিছুটা হলেও তা পূরণ করার চেষ্টা আমাদের করতেই হবে ।"

Last Updated : Jun 11, 2020, 9:03 AM IST

ABOUT THE AUTHOR

...view details