কলকাতা, 14 অক্টোবর : কোরোনা আবহে দুর্গোৎসব। বিশেষজ্ঞরা অনেকেই বলছেন, শারদ উৎসবে কলকাতায় পরিচিত দৃশ্য ফিরে এলে তা আত্মঘাতী হতে পারে । লাফিয়ে বাড়তে পারে আক্রান্তের সংখ্যা । কোরোনার সংক্রমণ যাতে ব্যাপক আকার না নেয়, তার জন্য ইতিমধ্যেই রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে জারি করা হয়েছে নির্দেশিকা । কলকাতা পুলিশও পুজো কমিটিগুলির সঙ্গে বৈঠক কী কী নিয়ম মানতে হবে তা জানিয়ে দিয়েছে । এই পরিস্থিতিতে কলকাতার অন্যতম জনপ্রিয় দুর্গাপুজো কমিটির সিদ্ধান্ত, দর্শকহীন শারদ উৎসব পালনের । আজ সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারের পুজো কমিটির কর্মকর্তারা এমনই জানালেন ।
দর্শনার্থী ছাড়া পুজো সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারে - দুর্গাপুজো 2020
পুজোর সময় কোরোনার সংক্রমণ বেড়ে যেতে পারে । সেই আশঙ্কায় দর্শনার্থীদের ভার্চুয়ালি প্যান্ডেল হপিংয়ে জোর দিচ্ছেন পুজো কমিটির কর্তারা ।
গত বছরও দুর্গাপুজোর একমাস আগে হই হই রব ছিল পরিচিত ছবি । মণ্ডপের কারিগররা ডেরা বেঁধেছিলেন পুজোর তিনমাস আগে থেকে । কারিগরদের হাতে মহালয়াতে রূপ পেয়েছিল নবদ্বীপের নির্মীয়মাণ শ্রী চৈতন্য দেবের মন্দির । মণ্ডপের ভিতরে ছিল বারো ফুটের সোনার প্রতিমা । যা তৈরি করতে খরচ হয়েছিল আনুমানিক 17 কোটি টাকা । যা দর্শন করতে পঞ্চমীর দিন থেকে ভিড় জমিয়েছিলেন কয়েক লাখ মানুষ ।
সে সব এখন স্মৃতি । কোরোনা পরিস্থিতির শুরুর দিকে যখন অন্য পুজো উদ্যোক্তরা দোলাচলে ছিলেন, তখন সন্তোষ মিত্র স্কোয়ার জানিয়ে দিয়েছিল, পুজো হবে। এবছর কলকাতার অন্যতম বিগ বাজেটের এই পুজো 85 তম বর্ষে পা দেবে । প্রতিমা শিল্পী মিন্টু পাল । কুমোরটুলি যখন বায়না না পেয়ে হতাশ, এগিয়ে গিয়েছিল সন্তোষ মিত্র স্কোয়ার। প্রখ্যাত প্রতিমা শিল্পী মিন্টু পালের হাতে বায়না তুলে দিয়েছিলেন উদ্যোক্তারা। এই পুজো কমিটির সম্পাদক সজল ঘোষ সেদিন বলেছিলেন, “এবছর পুজো ছোটো হবে নাকি বড় হবে সেটা আমরা জানি না । কিন্তু পুজো করতেই হবে । কোরোনা নামক অসুরের সংহার কামনাতেই পুজো করতে হবে । সেটা যদি খুব ছোটো করেও করতে হয় হবে ।" দুর্গাপুজোকে ঘিরে পশ্চিমবঙ্গে 50 হাজার কোটি টাকার বাজার তৈরি হয়। সে প্রসঙ্গে তিনি বলেছিলেন, "শারদ উৎসব না হলে বাজারটা পুরো ধ্বংস হয়ে যাবে । তাতে চরম ক্ষতি হয়ে যাবে পুজোর সঙ্গে জড়িয়ে থাকা প্রান্তিক কয়েক হাজার মানুষের । আবার যদি অসুখটা থেকে যায় তবে বড় করে পুজো করার কোনও অর্থ হয় না । কিন্তু এই মুহূর্তে আমরা আশঙ্কার দোলাচলে থাকা কুমোরটুলির পাশে তো দাঁড়াতেই পারি । তাই আমরা অগ্রিম দিচ্ছি প্রতিমা শিল্পীর কাছে ।"
পুজো উদ্যোক্তারা চান না এবার বিধিনিষেধ ভেঙে মানুষজন আসুক মণ্ডপে । চান প্যান্ডেল হপাররা মেনে চলুন সরকারি বিধি নিষেধ। যদিও ঐতিহ্যের এই পুজোয় এবার মণ্ডপ তৈরি হতে চলেছে বদ্রীনাথ ধামের মণ্ডপের আদলে । প্রতিমা হবে যথারীতি সাবেকি । কিন্তু বাংলার মানুষের মনোরঞ্জন করে চলা পুজো কমিটির উদ্যোক্তারা চুপচাপ বসেও নেই। তাদের এবারের স্লোগান, “ হেঁটে নয়, নেটে দেখুন।" একই সঙ্গে তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবার বহিরাগত সব মানুষের জন্য মণ্ডপের দরজা বন্ধ রাখার । এ প্রসঙ্গে সজল বলেন, “ আমরা চাই না মহামারি অতি মহামারির রূপ নিয়ে শহর কলকাতার পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়ে যাক। তাই কঠিন হলেও সিদ্ধান্তটা নিতেই হল।"