কলকাতা, 12 জুলাই :একুশের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি-র ভরাডুবির জের ৷ পশ্চিমবঙ্গে সংগঠনের নেতৃত্বে বড়সড় রদবদল ঘটাল রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘ (RSS) ৷ কার্যকর্তাদের দীর্ঘদিনের দাবি মেনে নেতৃত্বে আনা হল বাঙালি মুখ ৷ নাগপুরের নির্দেশে আরএসএস-এর পূর্ব ক্ষেত্র প্রচারক হলেন রমাপদ পাল ৷ এতদিন এই পদে ছিলেন প্রদীপ জোশি ৷ এছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পেলেন জলধর মাহাতো এবং প্রশান্ত ভট্ট ৷
বিজেপি সর্বদাই আরএসএসের সঙ্গে সমন্বয় রেখে চলে ৷ ভারতীয় জনতা পার্টির পরিচালনার প্রতিটি স্তরেই কার্যত নজরদরি চালায় আরএসএস ৷ পদ্ম শিবিরের নেতৃত্বেও আরএসএসের প্রভাব সর্বত্র লক্ষ্যণীয় ৷ সূত্রের খবর, ইদানীংকালে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির পালে হাওয়া লাগলেও আরএসএস-এর সংগঠন তেমন মজবুত ছিল না ৷ বদলে তৃণমূল কংগ্রেস থেকে দলে দলে নেতা, কর্মীরা বিজেপিতে যোগ দেওয়ায় দলের চরিত্রই কার্যত পাল্টে যায় ৷ আলগা হয়ে যায় আরএসএসের রাশ ৷ আর তার ফলেই এই পরাজয় বলে মত আরএসএস নেতৃত্বের ৷
আরও পড়ুন :সঙ্ঘ ঘনিষ্ঠ নেতাদের সামনে রেখে বঙ্গ-বিজেপির সংগঠন সাজানোর পরিকল্পনা আরএসএস-এর
উপরন্তু, বিজেপির গায়ে সেঁটে দেওয়া দেওয়া অবাঙালি দলের তকমা ৷ একই কথা খাটে আরএসএসের ক্ষেত্রেও ৷ এমনকী সংগঠনের কর্মীদেরও একাংশ মনে করেন, নেতৃত্বে কোনও বাঙালি মুখ না থাকায় আরএসএসের সঙ্গে অধিকাংশ বাঙালিই নিজেকে একাত্ম করতে পারেন না ৷ তাই দীর্ঘদিন ধরেই রাজ্যস্তরে কোনও ভূমিপুত্রকে নেতা হিসাবে মনোনয়নের আবেদন জানানো হচ্ছিল ৷ সেই দাবি মেনেই প্রথমবারের জন্য আরএসএসের পূর্ব ক্ষেত্র প্রচারক হিসাবে একজন বাঙালিকে দায়িত্ব দেওয়া হল ৷ যা নজিরবিহীন ৷
অন্যদিকে, প্রদীপ জোশিকে বাংলার দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হল ৷ বদলে তাঁকে আরও বড় দায়িত্ব দিয়ে পাঠানো হচ্ছে দিল্লিতে ৷ প্রদীপ জোশি আরএসএসের নয়া অখিল ভারতীয় সহ-সম্পাদক হচ্ছেন ৷ অন্যদিকে, আরএসএস ও বিজেপির সমন্বয়ের দায়িত্ব থেকে সরে গেলেন কৃষ্ণগোপাল ৷ তাঁর জায়গায় দায়িত্বে এলেন অরুণ কুমার ৷ সংঘের প্রচার প্রমুখের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি নতুন এই দায়িত্বও পালন করবেন তিনি ৷
আরও পড়ুন :আরএসএস-এর আদর্শে অনুপ্রাণিত হতে শুভেন্দু-সৌমিত্র-অর্জুনদের বিশেষ পাঠ
বিজেপি সূত্রে খবর, বিধানসভা নির্বাচনে দলের পরাজয়ের পরই রাজ্যে আরএসএস-এর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে প্রশ্ন তোলে নাগপুর ৷ সংঘ প্রধান মোহন ভাগবত নিজে বাংলার এই ফলাফল নিয়ে ঘনিষ্ঠ মহলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন ৷ প্রসঙ্গত, এবারের নির্বাচনে বিজেপি-র প্রার্থীতালিকায় বাড়তি গুরুত্ব পান তৃণমূল থেকে আসা ‘দলবদলু’রা ৷ প্রশ্ন উঠছে, তখন কেন আরএসএস এই তালিকা মেনে নিয়েছিল ? এখন বিষয়টি কাটাছেঁড়া শুরু হয়েছে ৷ এমনকী, তৃণমূল থেকে আসা এই ‘দলবদলু’দের অনেকেই ভোটের প্রচারে বড় দায়িত্বে ছিলেন ৷ আরএসএস মনে করছে, এতে হিতে বিপরীত হয়েছে ৷ মানুষ এই প্রচারকদের ভালভাবে নেয়নি ৷ যার জের গড়িয়েছে ইভিএমে ৷ বিষয়টি নিয়ে আগেই প্রদীপ জোশির কাছে রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়ছিল নাগপুর ৷ সূত্রের খবর, সেই রিপোর্টে খুশি নয় আরএসএস শীর্ষ নেতৃত্ব ৷
বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, ইতিমধ্যেই দলে আরএসএস ঘনিষ্ঠদের গুরুত্ব বাড়ানোর কড়া নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ৷ নেতৃত্বেও আরএসএসের পছন্দের লোকেদের বেশি করে জায়গা দিতে বলা হয়েছে ৷ এর পাশপাশি, ভোটমুখী বাংলায় কীভাবে বিজেপির সংগঠনের রাশ আরএসএসের হাত থেকে তৃণমূলপন্থীদের হাতে গেল, তাও জানার চেষ্টা চলছে ৷ এর জন্য ইতিমধ্যেই অভ্যন্তরীণ তদন্ত শুরু করেছে আরএসএস ৷