কলকাতা, 29 জানুয়ারি : একজন মা হয়ে নিজের শিশুকন্যাকে মেরে ফেলল কেন ? এই নিয়েই ভাবছেন লালবাজারের তদন্তকারী অফিসাররা । জন্মের পর নিজের শিশুকন্যাকে মাতৃদুগ্ধ পান করানো নিয়ে তীব্র আপত্তি ছিল সন্ধ্যা মালোর । পুলিশি তদন্তে এমন তথ্য উঠে আসছে । আবার খুনের পিছনে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কও সন্দেহ করা হচ্ছে ।
বেলেঘাটার সন্ধ্যা মালোর মাতৃদুগ্ধ পান করানো নিয়ে তীব্র অনীহা ছিল। অথচ তার দু'মাসের মেয়ে সানানা বারবার কান্নাকাটি করত । মাতৃদুগ্ধ পান করতে চাইত শিশুটি । বিষয়টি নিয়ে তীব্র আপত্তি ছিল সন্ধ্যার । 15 দিন ধরে এই নিয়ে সন্ধ্যার ভিতর তৈরি হয়েছিল মানসিক টানাপোড়েন । পুলিশি জেরায় এমনই জানিয়েছে বেলেঘাটায় খুনে অভিযুক্ত মা । পুলিশের দাবি, মাতৃদুগ্ধ পান করানো নিয়ে অনীহার জেরে সে দু'মাসের ফুটফুটে মেয়েকে খুন করে থাকতে পারে ।
প্রশ্ন উঠছে , যে শিশুকন্যাকে নিয়ে গোটা পরিবারের সবাই খুব সুখী ছিল তাকে নিয়ে এতটা বিষাদ কেন তৈরি হল মায়ের মনে ৷ নানা সূত্র মারফত সন্ধ্যার এক প্রেমিকেরও সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে। তার সঙ্গে নাকি প্রতিদিনই কথা হত সন্ধ্যার। এই বিষয়টিও খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা। তবে লালবাজারে এক পুলিশকর্তার বক্তব্য, যদি সন্ধ্যার বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক থেকেও থাকে তবে তার জন্য শিশুকে খুন করতে যাবে কেন? তার 9 বছরের আরও একটি পুত্রসন্তান রয়েছে । যদি সন্তানকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিয়ে প্রেমিকের সঙ্গে ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখে সন্ধ্যা, তবে তার আক্রোশে থাকত ওই পুত্রসন্তানের উপরেও । সন্ধ্যার শ্বশুরবাড়ির লোকজন জানিয়েছেন, ওই পুত্রসন্তানের প্রতি মায়ের অপত্য স্নেহ খুবই বেশি। তাই বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের জেরে খুন, এ বিষয়টি এখনই মেনে নিতে চাইছে না পুলিশ। যদিও তদন্তের কারণে এই দিকটিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে সূত্রের খবর ।
এই বিষয় নিয়ে কী বলছেন মনোবিদরা ? ডাঃ কেদার বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "নিজের শিশুকন্যাকে খুনের পিছনে তিন-চার রকম কারণ থাকতে পারে ।মহিলাটির ব্যবহারের পূর্বের রেকর্ড দেখতে হবে । শিশু জন্মের আগে তিনি আচরণে ভায়োলেন্ট হতেন কি না ৷ কখনও কোনও ভাঙচুর করেছেন কি না । দ্বিতীয়ত, প্রসবের পর পোস্টপার্টাম অবসাদ অনেকের হয় । তাদের মধ্যে এক ধরনের হ্যালুসিনেশন আসে। এটা এক হাজারের মধ্যে 10 থেকে 15 জনের হয় । তারা মনে করে বাচ্চাটা আমার নয় । এরকম ক্ষেত্রে মায়ের মনে হয় এই শিশু নিয়ে সংসারে অশান্তি হতে পারে । এমনকী তাদের অডিটরি হ্যালুসিনেশন হয় । আচরণ বিধির ডিস অর্ডারও হতে পারে । আবার ত্রিকোণ প্রেমও হতে পারে ।"
পুলিশ সূত্রে খবর, অপহরণের গল্প প্রথম থেকেই তদন্তকারীদের কাছে বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়নি । পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে সন্ধ্যাকে । পুলিশের খটকা ছিল যদি ছাদে আগে থেকেই বাড়ির পরিচারিকা ছিল তবে দরজা না খুলেই সন্ধ্যা জানিয়ে দিতে পারত, ছাদ খোলা আছে । সন্ধ্যার মাথায় অল্প আঘাতের চিহ্ন ছিল। সে পুলিশকে জানিয়েছিল, মাথায় আঘাত লাগার পরে অজ্ঞান হয়ে যায় । তদন্তকারীরা সন্ধ্যার কাছে জানতে চান যদি সরাসরি কপাল দেওয়ালের সঙ্গে ধাক্কা লাগে তাহলে তার চশমা অক্ষত থাকল কী করে? আর তাতেই ভেঙে পড়ে ওই শিশুর মা। বলে, শিশুকন্যাকে খুন করেছে সে । প্রাথমিকভাবে সে জানিয়েছে, শিশুকন্যাকে নিয়ে রীতিমত ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল । আর সেই কারণেই নিজের মেয়েকে খুন করে ম্যানহোলে ঢুকিয়ে দিয়েছিল । পুলিশ তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। বোঝার চেষ্টা করছে, ঠিক কোন কারণে নিজের মেয়েকে খুন করল মা। আর এই জন্য একজন মনোবিশেষজ্ঞ রেখে তাকে জেরার প্রক্রিয়া শুরু করেছে পুলিশ।