পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / city

প্রেসিডেন্সিতে ভরতিতে কারা আগ্রহী ? আগেই জানাতে হবে পড়ুয়াদের

বর্তমানে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিষয়ের স্নাতক কোর্সগুলিতে ভরতি হওয়ার থেকে মুখ ফেরাচ্ছে বহু মেধাবী পড়ুয়া । বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট বলছে, তৃতীয় মেধাতালিকার ভিত্তিতে ভরতির প্রক্রিয়ায় বাংলা ও অর্থনীতি বিভাগে একজনও ভরতি হয়নি । এ ছাড়াও অন্য বিভাগগুলিতেও এখনও খালি রয়েছে বহু আসন ।

Presidency University
Presidency University

By

Published : Oct 6, 2020, 11:51 PM IST

কলকাতা, 6 অক্টোবর : প্রেসিডেন্সি নামটাই যথেষ্ট । কারণ এই বিশ্ববিদ্যালয় তথা তদানীন্তন প্রেসিডেন্সি কলেজে নিজের পাঠজীবন কাটিয়েছেন অনেকেই । গত বছর পর্যন্তও প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়াদের ভরতি হওয়ার উৎসাহ ছিল চোখে পড়ার মতো । অনেকেই আসনসংখ্যা সীমিত হওয়ায় শেষ পর্যন্ত ভরতি হতে না পেরে মুখভার করে বাড়ি ফিরেছিলেন । কিন্তু, সেসব আজ অতীত । বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিষয়ের স্নাতক কোর্সগুলিতে ভরতি হওয়ার থেকে মুখ ফেরাচ্ছে বহু মেধাবী ছাত্র-ছাত্রী । বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট বলছে, তৃতীয় মেধাতালিকার ভিত্তিতে ভরতির প্রক্রিয়ায় বাংলা ও অর্থনীতি বিভাগে একজনও ভরতি হয়নি । এ ছাড়াও অন্যান্য বিভাগগুলিতেও এখনও খালি রয়েছে বহু আসন । এই পরিস্থিতিতে আসনসংখ্যা ভরতির জন্য মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ । যুক্ত করা হচ্ছে নতুন প্রক্রিয়া । যেখানে ভরতিতে ইচ্ছুক পড়ুয়াদের জানাতে হবে "আমি আগ্রহী"।

চলতি বছর প্রথম মেধাতালিকার ভিত্তিতে ভরতি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পরই সামনে আসে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভরতির বেহাল দশা । প্রথম মেধাতালিকার ভিত্তিতে বাংলা বিভাগে চার জন ভরতি হয়েছিলেন তো আবার ইংরেজিতে আট জন । 16টি কোর্স মিলিয়ে মোট 665টি আসনের মধ্যে মাত্র 179টি আসনে পড়ুয়া ভরতি হয়েছিল । দ্বিতীয় মেধাতালিকার ভিত্তিতে ভরতি প্রক্রিয়া শেষের পরেও একই চিত্র বজায় থাকে । দেখা যায়, প্রথম মেধাতালিকার ভিত্তিতে ভরতি হওয়ার পর বাকি থাকা আসনগুলিতে বাংলায় একজন, ইংরেজিতে ছ'জন, গণিতে চারজন, রাষ্ট্রবিজ্ঞানে চারজন, এই রকম সংখ্যাতেই ভরতি হয়েছে পড়ুয়ারা ।

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আশা করেছিল, পরবর্তী কয়েকটি মেধাতালিকার ভিত্তিতে ভরতির পর বদলাবে সেই চিত্র । ভরে যাবে সব আসন । কিন্তু, সব আশাই সার । বদলায়নি কিছুই । অব্যাহত রয়েছে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র ভরতির বেহাল দশা । প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট বলছে, তৃতীয় মেধাতালিকার ভিত্তিতে বাংলায় ও অর্থনীতিতে একজন পড়ুয়া ভরতি হয়নি । আবার ইংরেজিতে নয় জন, ভূগোলে আট জন, জিওলজিতে চার জন, হিন্দিতে তিন জন, ইতিহাসে চার জন, গণিতে সাত জন, দর্শনশাস্ত্রে এক জন, ফিজ়িক্সে দুজন, রাষ্ট্রবিজ্ঞানে এক জন, সোশিওলজিতে চার জন, স্ট্যাটিস্টিক্সে তিন জন, কেমিস্ট্রিতে দুজন এবং জীবন বিজ্ঞানে 16 জন পড়ুয়া ভরতি হয়েছে । সবমিলিয়ে মোট তিনটি মেধাতালিকার ভিত্তিতে ভরতির পরেও প্রতিটি বিভাগেই খালি রয়েছে বহু আসন ।

বাংলায় মোট 38টির মধ্যে তিনটি মেধাতালিকার ভিত্তিতে এখনও পর্যন্ত মাত্র পাঁচ জন পড়ুয়া ভরতি হয়েছেন । একইভাবে ইংরেজিতে 38টি আসনের মধ্যে 23টি, ভূগোলে 28টি আসনের মধ্যে 17টি, জিওলজিতে 31টি আসনের মধ্যে 23টি, ইতিহাসে 46টি আসনের মধ্যে 22টি, হিন্দিতে 30টি আসনের মধ্যে 15টি, জীবন বিজ্ঞানে 116টি আসনের মধ্যে 75টি, গণিতে 53টি আসনের মধ্যে 25টি, দর্শনশাস্ত্রে 20টি আসনের মধ্যে সাতটি, ফিজিক্সে 53টি আসনের মধ্যে 25টি, রাষ্ট্রবিজ্ঞানে 31টি আসনের মধ্যে দশটি, সোশিওলজিতে 32টি আসনের মধ্যে 16টি, স্ট্যাটিস্টিক্সে 28টি আসনের মধ্যে 14টি, কেমিস্ট্রিতে 22টি এবং ইকোনমিকসে মোট 53টি আসনের মধ্যে 31টি আসনে পড়ুয়া ভরতি হয়েছেন ।

ভরতির এই চিত্রের বর্তমানে চলা অনলাইন ভরতি ব্যবস্থাকেই বারবার কাঠগড়ায় তুলেছে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ । তৃতীয় মেধাতালিকার ভিত্তিতে কম সংখ্যক ছাত্র ভরতির পরও একই যুক্তি দেয় তারা । তাদের বক্তব্য, অন্যান্য বার একেবারে আসনসংখ্যার তুলনায় ছয়গুণ প্রার্থীদের ডাকা হত । তাদের মধ্যে উপস্থিত ও যোগ্যদের যতগুলো আসন রয়েছে ততগুলোতে পরপর যতজন হত ততজনকে ভরতি করে নেওয়া হত । ফলে আসনগুলো একবার বা দুইবারের কাউন্সেলিংয়েই ভরতি হয়ে যেত । এবার যতগুলো আসন ততজনেরই তালিকা প্রকাশ করা হচ্ছে । তাঁদের মধ্যে কেউ হয়ত অন্য কোথাও ভরতি হয়ে গেছেন তাঁদের নথিতে হয়ত গন্ডগোল আছে । এই সবের কারণেই ভরতি সংখ্যা কম‌ ।

এই ফাঁকা থাকা আসনগুলি পূরণের জন্য উদ্যোগ নিয়েছে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ । ইতিমধ্যেই তারা চতুর্থ মেধাতালিকা প্রকাশ করে দিয়েছে । কিন্তু, তার ভিত্তিতেও কত পড়ুয়া ভরতি হবেন তা নিয়ে সন্দিহান বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ । তাই পঞ্চম মেধাতালিকা প্রকাশের আগে সম্পূর্ণ মেধাতালিকায় থাকা পড়ুয়াদের মধ্যে যাঁরা প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভরতি হতে আগ্রহী, তাঁদের তা জানাতে বলা হয়েছে ।

সম্প্রতি প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে বলা হয়েছে, ওয়েটিং তালিকায় থাকা প্রার্থীদের মধ্যে যাঁরা প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক স্তরে ভরতি হতে আগ্রহী তাঁদের আগামী 8 ও 9 অক্টোবর অনলাইনে রিপোর্টিং করতে হবে । শুধুমাত্র যে সকল প্রার্থীরা রিপোর্ট করবেন তাঁদেরকেই পরবর্তী ভরতি প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করার জন্য বিবেচনা করা হবে । অর্থাৎ, অনলাইন রিপোর্টিং করলেই মেধার ভিত্তিতে পঞ্চম মেধাতালিকা থেকে শুরু করে পরবর্তী মেধাতালিকাগুলিতে স্থান পাবেন প্রার্থীরা ।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দেবজ্যোতি কোনার বলেন, "আমরা ছোটো ছোটো চারটি তালিকা প্রকাশ করে দিয়েছি । এরপর ওয়েটিং লিস্টে থাকা প্রার্থীদের মধ্যে নির্দিষ্ট সংখ্যক প্রার্থীদের নথি আপলোড করতে বলা হবে । প্রথমে নথি যাচাই করে দেখা হবে কারা ভ্যালিড প্রার্থী । তারপরে আসনসংখ্যার ভিত্তিতে জেনারেল মেরিট ব়্যাঙ্ক অনুযায়ী পরপর প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশ করা হবে । বাকি যাঁরা রিপোর্ট করবেন তাঁদের ওয়েটিং লিস্টে পাঠিয়ে দেওয়া হবে । ফলে, আসল প্রার্থীরা বেরিয়ে আসবে। এটা প্রথম থেকে করলে অনেক নথি যাচাই করতে হত । এটা হয়ে গেলে আগের মতো একটা রাউন্ড কাউন্সেলিং সম্পূর্ণ হবে । চতুর্থ মেধাতালিকার পর কতগুলো আসন ফাঁকা থাকে সেটা দেখে তারপরেই রিপোর্টিংয়ের জন্য প্রার্থীদের ডাকা হবে।"

ABOUT THE AUTHOR

...view details