কলকাতা, 2 জুলাই: বেহাল অবস্থা রাজ্যের প্রাইমারি স্কুলগুলির । গত দশ বছরে বন্ধ হয়ে গিয়েছে প্রায় 7000-এর বেশি স্কুল (Over 7000 primary schools closed in Bengal)। রাজ্যের শিক্ষা দফতরের রিপোর্টে এমনই ভয়ঙ্কর ছবি উঠে এসেছে ।
রাজ্যের শিক্ষা দফতরের(West Bengal Education Department) তথ্য অনুযায়ী, 2012 সালে মার্চ মাসে রাজ্যে 74 হাজার 717টি প্রাথমিক স্কুল ছিল । 2022-র মার্চে এসে সেই সংখ্যা দাঁড়ায় 67 হাজার 699টি । অতএব পরিসংখ্যান অনুযায়ী, রাজ্যে বন্ধ হয়েছে প্রায় 7018টি প্রাইমারি স্কুল । অন্যান্য স্কুলে কমেছে ছাত্রের সংখ্যা । সবচেয়ে বেশি স্কুল কমেছে দক্ষিণ 24 পরগনায় । সেখানে কমেছে 1182টি প্রাথমিক স্কুল । পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রাম মিলে কমেছে 1047টি স্কুল । পূর্ব মেদিনীপুরে 867টি । এইভাবে প্রতি জেলায় স্কুলের সংখ্যা ক্রমশ কমেছে ।
এবিষয়ে বাম ছাত্র সংগঠন এসএফআই-এর রাজ্য সভাপতি সৃজন ভট্টাচার্য বলেন, "পশ্চিমবঙ্গের একুশটি জেলায় প্রাথমিক স্কুল কমে গিয়েছে । গত দশ বছরে পড়ুয়ার সংখ্যা কমে গিয়েছে প্রায় সাত হাজার । দক্ষিণ 24 পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুরের মত জেলায় স্কুলের সংখ্যা প্রায় হাজার খানেক কমে গিয়েছে । প্রাথমিক শিক্ষার এই অবস্থার দায় পুরোপুরি রাজ্য সরকারের । স্কুলের সংখ্যা বা পড়ুয়ার সংখ্যা এতটা কমে যাওয়ার পরেও সরকার একেবারেই উদাসীন । প্রান্তিক অঞ্চলের ছাত্রছাত্রীদের স্কুল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে । বেশিরভাগ শিক্ষক শিক্ষিকারা গ্রামের স্কুল ছেড়ে শহরাঞ্চলের দিকে চলে আসছেন । যেভাবে শিক্ষার মান পড়ে যাচ্ছে, খুবই আশঙ্কিত হওয়ার মত ঘটনা । তবে রাজ্যে মগের মুলুক চলছে, কারোর কোনও মাথাব্যথা নেই । শিক্ষার উন্নতির ব্যাপারে আদৌ ছেলেমেয়েদের উৎসাহিত করা হবে কি না, সেই সম্পর্কেও কোনও ধারণা নেই ।"
আরও পড়ুন :প্রতিকূলতার রেশ কাটিয়ে ছন্দে ফিরছে প্রি-প্রাইমারি স্কুলগুলি
অন্যদিকে শিক্ষাবিদ দেবাশিস সরকার বলেন, "শিক্ষাক্ষেত্রের দিক থেকে দেখতে গেলে এত প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ হয়ে যাওয়াটা জাতীয় ক্ষতি । ভারতবর্ষের এই মুহূর্তে সবথেকে বড় শক্তি নবীন প্রজন্ম । তারা যদি শিক্ষিত হয় তবে তারা যে কোনও দেশের কাছে সম্পদ । কিন্তু তাদের মধ্যে শিক্ষার অভাব দেখা গেলে । সরকারে প্রধান দায়িত্ব হল তাদের শিক্ষার ব্যবস্থা সুনিশ্চিত করা । রোটারি কমিশনের তরফে ডিজিপি-র 6 শতাংশ শিক্ষাক্ষেত্রে বরাদ্দের সুপারিশ করা হয়েছিল । গত বাজেট অধিবেশনে দেখা গিয়েছে, মোট জাতীয় উৎপাদনের মাত্র 3.1 শতাংশ বরাদ্দ হয়েছে প্রাথমিক শিক্ষায় । প্রাথমিক শিক্ষাকে আরও উন্নত করতে যে উদ্যোগ নেওয়া দরকার, তা রাজ্য বা কেন্দ্র কারোর মধ্যেই লক্ষ্য করা যাচ্ছে না । প্রাথমিক শিক্ষার বিকাশ না-ঘটালে দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে তার প্রভাব পড়বে ।"