কলকাতা, 11 অগস্ট : খুব দ্রুত নিজেদের অপরাধের ধরন বদলাচ্ছে কুখ্যাত জামতাড়া গ্যাং । যা চিন্তায় ফেলছে পশ্চিমবঙ্গ এবং কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দাদের । পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ক্রমেই নিজেদের প্রযুক্তিগত দিক থেকে এগিয়ে রাখার চেষ্টা করছে এই কুখ্যাত জামতাড়া গ্যাং । ফলে তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করতে গিয়ে কোথাও যেন প্রযুক্তিগত দিক থেকে পিছিয়ে পড়তে হচ্ছে তদন্তকারীদের ।
মূলত ব্যাঙ্ক জালিয়াতি কাণ্ডে সিদ্ধহস্ত এই জামতাড়া গ্যাং । তদন্তকারীদের অনুমান এই গ্যাংয়ের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে ব্যাঙ্কের লোকজন । তা না হলে এতটা নিখুঁত ভাবে দিনের পর দিন এই প্রকারের অপারেশন চালানো সম্ভব নয় ।
সম্প্রতি কলকাতা ও হুগলি জেলায় একাধিক ব্যাঙ্ক জালিয়াতির ঘটনা সামনে এসেছে । তদন্তে নেমে গোয়েন্দারা দেখেন, প্রত্যেকটি জালিয়াতির ঘটনায় জামতাড়ার সদস্যরা নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করে টাকা তুলেছে । আগের অপরাধের ধরনগুলি ছিল তথাকথিত গ্রাহককে ফোন করে তার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খালি করে দেওয়া । কিন্তু এবারে তদন্তে উঠে এসেছে এক বিশেষ স্কিমিং মেশিন সিস্টেমের দ্বারা এই গ্যাং চোখের পলকে টাকা তুলেছে ৷ যাতে অভিযোগকারী আগে থেকেই সজাগ হয়ে আইনের দ্বারস্থ হতে না পারেন ।
আরও পড়ুন :অ্যাপ ডাউনলোডে গায়েব প্রায় 3 লাখ, ধৃত জামতাড়া গ্যাংয়ের 5
ফলে এক্ষেত্রে তদন্তের স্বার্থে নিজেদের বাঁচাতে প্রযুক্তিগত সাহায্য নিচ্ছে এই গ্যাং । নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজ্য পুলিশের এক উচ্চপদস্থ আধিকারিক জানান, দীর্ঘদিন ধরেই গোটা পুলিশ বিভাগের মাথা ব্যাথার একটা অন্যতম কারণ হল এই জামতাড়া গ্যাং । এরা প্রায় গোটা ভারতবর্ষ জুড়ে নিজেদের জাল ছড়িয়ে রয়েছে ৷
কলকাতা পুলিশের অপর এক আধিকারিক জানান, একটা সময় তাদের অপরাধের ধরন চিহ্নিত করে এক ঘরে করে দেওয়া হয়েছিল এই গ্যাংকে । কিন্তু নিজেদের টিকিয়ে রাখতে এরা এবার আধুনিক প্রযুক্তিগত বিদ্যাকে কাজে লাগাচ্ছে ৷
2 জুলাই আসানসোলে একাধিক আধুনিক যন্ত্রপাতি ও মেশিন-সহ গ্রেফতার হয় জামতাড়া গ্যাংয়ের বেশ কিছু সদস্য । শহরে এটিএম জালিয়াতিই ছিল তাদের মূল উদ্দেশ্য । তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, ওই মেশিনগুলি এটিএম কাউন্টারের একটি বিশেষ স্থানে লাগিয়ে রাখলেই সংশ্লিষ্ট এটিএম কাউন্টারে টাকা তুলতে যতজন গ্রাহক আসবেন, প্রত্যেকেরই ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের যাবতীয় গোপন তথ্য চলে আসবে ওই মেশিনে । এরপর নিমেষেই গ্রাহকদের অ্যাকাউন্ট থেকে ক্রমেই গায়েব হয়ে যাবে টাকা ।
পশ্চিমবঙ্গ এবং ঝাড়খণ্ডের বেশ কিছু জায়গায় বিশেষ করে জামতাড়া জেলায় রীতিমতো হাতেকলমে ট্রেনিং চলে এই বিশেষ গ্যাংয়ের ৷ এই জামতাড়া জেলায় স্বয়ং ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর তাঁর জীবনের 18দিন কাটিয়েছিলেন । কিন্তু এখন সেই জামতাড়াই গোটা পুলিশ বিভাগের কাছে একটি বিশেষ মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠেছে ৷ ঝাড়খণ্ডে জামতাড়া গ্যাং খুবই সক্রিয় ।
আরও পড়ুন :ব্য়াঙ্ক প্রতারণায় জামতাড়া গ্যাংয়ের 4 সদস্যসহ গ্রেপ্তার 5