পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / city

SSC Recruitment Scam: হেভিওয়েটদের গ্রেফতারিতে অসন্তোষ বাড়ছে তৃণমূলের অন্দরে - নিয়োগ দুর্নীতি

শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিতে (SSC Recruitment Scam) হেভিওয়েটরদের গ্রেফতারি কি তৃণমূলের ভিত নাড়িয়ে দিয়েছে ? কী বলছে সংশ্লিষ্ট মহল ?

Discontent in TMC over SSC Recruitment Scam
SSC Recruitment Scam: হেভিওয়েটদের গ্রেফতারিতে অসন্তোষ বাড়ছে তৃণমূলের অন্দরে

By

Published : Sep 25, 2022, 1:55 PM IST

কলকাতা, 25 সেপ্টেম্বর: শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির (SSC Recruitment Scam) অভিযোগে দলের হেভিওয়েটদের গ্রেফতারিতে অসন্তোষ বাড়ছে তৃণমূল কংগ্রেসের (TMC) অন্দরে ৷ সংশ্লিষ্ট সূত্রের দাবি, প্রাক্তন শিক্ষা মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্য়ায় থেকে শুরু করে মাধ্যমিক শিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়, একের পর এক বিশিষ্টদের দুর্নীতিতে জড়িত থাকার অভিযোগে ক্ষুব্ধ দলের নিচুতলার কর্মীরা ৷ বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলেছে বিরোধী রাজনৈতিক শিবিরও ৷ তাদের বক্তব্য, এই ঘটনা বাংলার গরিমাকে কালিমালিপ্ত করেছে ৷

এই প্রসঙ্গে সিপিএম-এর রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমের বক্তব্য হল, "কল্য়াণময় গঙ্গোপাধ্য়ায় মাধ্যমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি থাকাকালীন যে পরীক্ষার্থীরা পাস করেছে, যাদের শংসাপত্রে কল্য়াণময়ের স্বাক্ষর রয়েছে, তাদের কথা একবার ভেবে দেখুন !" এই ঘটনা সেই ছাত্রছাত্রীদের মনে কী প্রভাব ফেলবে, তা নিয়েই শঙ্কিত সেলিম ৷

কল্য়াণময়ের পর গ্রেফতার হয়েছেন উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুবীরেশ ভট্টাচার্য ৷ যদিও তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ নতুন কিছু নয় ৷ তাঁর প্রসঙ্গ উঠতেই রাজ্য বিজেপি-এর মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, "নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করেই একসঙ্গে তিনটি পদে আসীন ছিলেন সুবীরেশ ৷ কারণ, তিনি রাজ্যের শাসকদলের স্নেহধন্য ৷ তাই বেআইনিভাবে তাঁকে একাধিক পদে বসানো হয়েছিল ৷ প্রাক্তন শিক্ষা মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়েরও ঘনিষ্ঠ তিনি ৷" প্রসঙ্গত, এই সুবীরেশ ভট্টাচার্য উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য থাকাকালীনই সেখান থেকে নিজের পিএইচডি সম্পূর্ণ করেছিলেন পার্থ ৷ এই বিষয় নিয়েও বিস্তর বিতর্ক রয়েছে অতীতে ৷

আরও পড়ুন:পর্ষদ সভাপতির পদ থেকে অপসারণের নির্দেশের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ মানিক ভট্টাচার্য

এখানেই শেষ নয় ৷ সম্প্রতি কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপচার্য পদে সোনালী চক্রবর্তীর পুনর্নিয়োগকে অবৈধ আখ্যা দিয়ে তা খারিজ করে দেয় ৷ আদালতের এই পর্যবেক্ষণও রাজ্যের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করেছে বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল ৷ আদালতের বক্তব্য ছিল, রাজ্যের প্রাক্তন রাজ্যপাল তথ্য় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন আচার্য জগদীপ ধনকড়কে না জানিয়েই এই নিয়োগ করা হয়েছিল ৷ এভাবে নিয়োগ বেআইনি বলে মনে করে আদালত ৷

এইসব কাণ্ড নিয়ে শুধুমাত্র তৃণমূলের নিচুতলার কর্মীরাই নন, বিব্রত হতে হচ্ছে প্রথম সারির প্রবীণ নেতাদেরও ৷ যাঁদের মধ্য়ে অন্যতম সাংসদ সৌগত রায় ৷ সৌগত নিজে অধ্যাপক ছিলেন ৷ তাঁর প্রশ্ন, সুবীরেশ ভট্টাচার্য একইসঙ্গে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, ডাব্লিউবিএসএসসি-এর চেয়ারম্যান এবং শ্যামাপ্রসাদ কলেজের অধ্যক্ষ পদে ছিলেন কীভাবে ! সৌগত মনে করেন, দল বা কোনও ব্যক্তির প্রতি সুবীরেশের একান্ত আনুগত্যই তাঁকে এই তিনটি পদে একসঙ্গে আসীন রেখেছিল ৷ এই ঘটনা জনসমক্ষে যে সরকার এবং দলের মুখ পুড়িয়েছে, তাও কার্যত স্বীকার করে নিয়েছেন সৌগত ৷

দুর্নীতি নিয়ে মুখ খুলেছেন দলের আর এক প্রবীণ নেতা তথা রাজ্যের মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ও ৷ রাজনৈতিক মহলে তিনি একজন স্বচ্ছ ভাবমূর্তির রাজনীতিক বলেই পরিচিত ৷ শোভনদেব বলেন, দল কোনও দুর্নীতিকেই প্রশ্রয় দেবে না ৷ যদি কেউ কোনও দুর্নীতিতে অভিযুক্ত হন, তবে তাঁকে আদলত থেকে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করে আসতে হবে ৷

সব মিলিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে কিছুটা হলেও বিপাকে তৃণমূল কংগ্রেস ৷ তবে, আগামিদিনে জল কোন দিকে গড়াবে, তা এখনই বলা সম্ভব নয় বলেই মনে করেন কলকাতা বিশ্ববিদ্য়ালয়ের রেজিস্ট্রার রাজাগোপাল ধর চক্রবর্তী ৷ তাঁর মতে, সৌগত রায় প্রাক্তন অধ্যাপক ৷ তাঁর পক্ষে এমন ঘটনা ঘটতে দেখা সত্যিই অস্বস্তিকর ৷ কিন্তু, দলের বাকি নেতারা কী ভাবছেন, তাঁরাও দুর্নীতির প্রতিবাদে সরব হচ্ছেন কিনা, সেদিকে নজর রাখতে হবে ৷ তার জন্য আরও অপেক্ষা করতে হবে ৷

অন্যদিকে, রাজনৈতিক বিশ্লেষক অরুন্ধতী মুখোপাধ্য়ায় মনে করেন, দুর্নীতির জেরে তৃণমূলের অন্দরে যে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে, তা খুবই স্বাভাবিক ৷ কিন্তু, এই অসন্তোষ ক্ষণস্থায়ী ৷ তবে, যদি আগামী দিনে আরও অনেক হেভিওয়েট ধরা পড়েন, সেক্ষেত্রে পরিস্থিতি বদলাতে পারে ৷ তখন তৃণমূলের পক্ষে লড়াই সত্যিই কঠিন হবে ৷

ABOUT THE AUTHOR

...view details