পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / city

"মেরে বেরোতে হবে", আন্দোলনকারীদের কথা শুনে ক্যাম্পাসেই রাত কাটালেন যাদবপুরের সহ-উপাচার্য - students

সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠকের দাবিতে যাদবপুরে অবস্থান বিক্ষোভ।

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়

By

Published : Feb 23, 2019, 2:41 PM IST

কলকাতা, ২৩ ফেব্রুয়ারি : রাতভর ঘেরাও থাকলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য প্রদীপকুমার ঘোষ। গতকাল তাঁকে আন্দোলনকারী ছাত্ররা বলেন, "বলে বের হন, না হয় মেরে বের হন।" জোর করে বের হওয়ার পক্ষপাতী নন সহ-উপাচার্য। তাই গতকাল সারারাত বিশ্ববিদ্যালয়েই কাটালেন তিনি। অন্যদিকে, বৈঠকের দাবিতে অনড় অবস্থানকারীরা। তাঁরা জানাচ্ছেন, দাবি না মানা পর্যন্ত অবস্থান চলবে।

আজকের পরিস্থিতি কী ?

আর্টস ফ্যাকাল্টি স্টুডেন্ট ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক দেবরাজ দেবনাথ বলেন, "আজ সকালবেলা সহ-উপাচার্য সাংবাদিকদের বলেছেন, তাঁকে কেন আটকে রাখা হয়েছে তা বুঝতে পারছেন না। যৌক্তিকতা বুঝতে পারছেন না। আমাদের সঙ্গে উনি সরাসরি কথা বলছেন না। আমরা তো আমাদের অবস্থান স্পষ্ট করে দিয়েছি। আজ বিকেলে একটি সাংস্কৃতিক প্রতিবাদ হবে। আর কর্তৃপক্ষ যে প্রশ্ন করছে আমরা কেন আছি, এটার উত্তর খুবই সহজ। আমরা তো দেড় বছর, দু'বছর ধরে এমনি বসে নেই। আমরা স্পষ্ট এটা বুঝতে পারছি, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, সহ-উপাচার্য চাইলেই স্টুডেন্ট ইউনিয়ন ইলেকশন করতে পারেন না বা স্টুডেন্ট ইউনিয়ন দিয়ে দিতে পারেন না। সেটা আমরা সকলেই বুঝতে পারি। যেটা বুঝতে পারছি না সেটা হল, আমরা ওঁদের কাছে একটা বৈঠক চেয়েছি। এখনও ইউনিয়ন ইলেকশন চাইনি। এই বৈঠকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ থাকবে, আমরা থাকব আর সরকার থাকবে। সেই বৈঠকটা অন্তত হোক। বৈঠকে আমরা আলোচনা করব, শিক্ষামন্ত্রীকে সরাসরি বলব আমরা কী চাই‌ না চাই।"

দেবরাজ আরও বলেন, "এটাই মূল সমস্যা। বিশ্ববিদ্যালয়ে বৈঠকটা করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে আমাদের এইটুকু দাবি। এর সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের মধ্যে হস্টেলে থাকাকালীন ছাত্রদের বিশেষ করে প্রতিবন্ধী ছাত্রদের সামনাসামনি হুমকি দেওয়া হচ্ছে। বলেছে, তোমার শিরদাঁড়া এত সোজা ? ভেঙে দেব সেটা। তোমার স্কলারশিপ আটকে দেব, কী করে থাক দেখে নেব। এই ঘটনাগুলি কারা ঘটাচ্ছে সেগুলি সবই আমাদের জানা আছে। এই সব বাইরের‌ জেলায় চলে, যাদবপুরে তো কোনওদিন হয়নি। যাদবপুরে যদি এই কালচার শুরু হয় তাহলে তার বিরুদ্ধে যে আওয়াজ উঠবে সেটাই স্বাভাবিক এবং সেটাই হচ্ছে। আমরা চাইছি, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এগিয়ে এসে বৈঠকের ব্যবস্থা করুক। সঙ্গে ক্যাম্পাসের আনাচে কানাচে এই যে ঘটনাগুলি ঘটছে সেগুলির বিরুদ্ধে ইমিডিয়েট অ্যাকশন নিক। আমরা চাইছি তদন্ত হোক। একজনের গণতন্ত্রকে দমিয়ে রেখে আমার গণতন্ত্র ফুলে ফেঁপে উঠবে, এই ধরনের প্রবণতা ক্যাম্পাসের জন্য একেবারেই কাম্য নয়।"

১৯ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এগজ়িকিউটিভ কাউন্সিলের বৈঠক ছিল। বৈঠকে নিজেদের দাবি দাওয়া নিয়ে যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বামপন্থী ও তৃণমূলের ছাত্রসংগঠনগুলি। বৈঠক শেষে উপাচার্য ও অন্যান্য আধিকারিকরা বের হতে গেলে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হয়। সেখানে দু’পক্ষের ছাত্রদের মধ্যে পড়ে হেনস্থা হতে হয় উপাচার্য সুরঞ্জন দাশকে। তাঁকে সেদিনই হাসপাতালে ভরতি করা হয়। ২১ ফেব্রুয়ারি তিনি হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে বাড়িতে গেছেন। তাঁর অনুপস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন সহ-উপাচার্য প্রদীপকুমার ঘোষ। নিজেদের দাবি নিয়ে গতকাল তাঁর কাছে যান আন্দোলনকারীরা। সেখানে সহ-উপাচার্য তাঁদের স্পষ্ট জানিয়ে দেন সোমবারের আগে কিছু করা সম্ভব নয়। তখনই অবস্থানকারীদের তরফে জানানো হয়, ক্যাম্পাস থেকে বের হতে গেলে তাঁদের পায়ে মাড়িয়ে যেতে হবে সহ-উপাচার্যকে।

জোর করে বেরোতে চান না সহ-উপাচার্য। তাই গতকাল সারারাত ক্যাম্পাসেই কাটিয়েছেন তিনি। সহ-উপাচার্য কি বেরানোর চেষ্টা করেছিলেন ? উত্তরে দেবরাজ দেবনাথ বলেন, "সহ-উপাচার্য কাল সারারাত ছিলেন, এখনও আছেন। বেরোনোর জন্য আমাদের বলেছিলেন। আমরা বলেছিলাম, বের হতেই পারেন। আমাদের দাবি রাখা থাকবে, সেই দাবির উপর দিয়ে আপনাকে যেতে হবে।" গতকাল বিকেলে সহ-উপাচার্যকে ত্রিপাক্ষিক বৈঠক ডাকার জন্য ৭২ ঘণ্টা সময় দিয়েছেন অবস্থানকারীরা। সেইসময় পার হয়ে গেলেও যদি কর্তৃপক্ষ কিছু না করে সেক্ষেত্রে আন্দোলনের মাত্রা আরও বাড়ানো হবে বলে জানিয়েছেন তাঁরা।

ABOUT THE AUTHOR

...view details