পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / city

সরস্বতী পুজোয় ‘টুম্পা গানে’ নাচ, পাঁচ টিএমসিপি নেতার ক্যাম্পাসে ঢোকায় নিষেধাজ্ঞা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের - শাস্তি

16 ফেব্রুয়ারির ঘটনায় সরস্বতী পুজোর আয়োজনকারী পাঁচজনের বিরুদ্ধে সাজা ঘোষণা করল কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ওই পাঁচজন 2 বছরের জন্য কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনও ক্যাম্পাসে ঢুকতে পারবেন না। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ স্ট্রিট ক্যাম্পাসে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ আয়োজিত সরস্বতী পুজোয় 'টুম্পা সোনা' গানের তালে ছাত্র-ছাত্রীদের চটুল নাচের চিত্রে শিক্ষা মহল তো বটেই, অন্যান্য মহলেও নিন্দার ঝড় উঠেছিল। সেই কারণেই এই শাস্তি৷

সরস্বতী পুজোয় ‘টুম্পা গানে’ নাচ, পাঁচ টিএমসিপি নেতার ক্যাম্পাসে ঢোকায় নিষেধাজ্ঞা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের
সরস্বতী পুজোয় ‘টুম্পা গানে’ নাচ, পাঁচ টিএমসিপি নেতার ক্যাম্পাসে ঢোকায় নিষেধাজ্ঞা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের

By

Published : Feb 22, 2021, 7:04 PM IST

কলকাতা, 23 ফেব্রুয়ারি : 16 ফেব্রুয়ারির ঘটনায় সরস্বতী পুজোর আয়োজনকারী পাঁচজনের বিরুদ্ধে সাজা ঘোষণা করল কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ওই পাঁচজন 2 বছরের জন্য কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনও ক্যাম্পাসে ঢুকতে পারবেন না। 16 ফেব্রুয়ারির ঘটনা খতিয়ে দেখতে গঠিত তদন্ত কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে আজ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। শাস্তিপ্রাপ্ত পাঁচজন হলেন, তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সহ-সভাপতি ও বর্তমানে সংস্কৃত কলেজের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক মণিশঙ্কর মণ্ডল, তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সদস্য রাজা মেহেদি, দেবর্ষি রায়, তীর্থপ্রতিম সাহা ও তৃণমূল ছাত্র পরিষদের মধ্য কলকাতা জেলা কমিটির সহ-সভাপতি রনি ঘোষ।

গত 16 ফেব্রুয়ারি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ স্ট্রিট ক্যাম্পাসে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ আয়োজিত সরস্বতী পুজোয় 'টুম্পা সোনা' গানের তালে ছাত্র-ছাত্রীদের চটুল নাচের চিত্রে শিক্ষা মহল তো বটেই, অন্যান্য মহলেও নিন্দার ঝড় উঠেছিল। ঘটনাটি নজরে আসতেই দ্ব্যর্থহীন ভাষায় নিন্দা জানিয়ে গোটা ঘটনার কঠোর তদন্ত হবে বলে জানিয়েছিলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সোনালী চক্রবর্তী বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই অনুযায়ী, ওইদিনের ঘটনা খতিয়ে দেখতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। সেই কমিটিতে ছিলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য আশীষ চট্টোপাধ্যায় ও রেজিস্ট্রার দেবাশিস দাস।

গোটা ঘটনা খতিয়ে দেখে আজ সিন্ডিকেটের বৈঠকে রিপোর্ট পেশ করে তদন্ত কমিটি। সর্বসম্মতিক্রমে সেই রিপোর্ট গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় সিন্ডিকেটের বৈঠকে। সিন্ডিকেটের বৈঠকে নেওয়া রেজ্যুল্যুশনে বলা হয়েছে, গত 16 ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের থেকে কোনও অনুমতি না নিয়েই সংশ্লিষ্ট কয়েকজন বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ স্ট্রিট ক্যাম্পাসে কিছু অনুষ্ঠানে আয়োজন করেছিল। তার মধ্যে গান ও সেই গানে নাচ ছিল, যা শিক্ষা মহল অত্যন্ত নিচু মানের এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির পরিপন্থী বলে মনে করেছে। কোরোনা অতিমারির কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাবতীয় সশরীরে ক্লাস বন্ধ থাকার কারণে এই ঘটনা আরও বেশি অসঙ্গত বলে মনে হয়েছে। যে সময়ে শিক্ষক এবং পড়ুয়ারা সশরীরে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসছেন না, সেখানে অনুমতি ছাড়াই এভাবে ক্যাম্পাসের ভিতরে এমন একটি অহেতুক অনুষ্ঠানের আয়োজন শিক্ষা মহলকে অবাক করে দিয়েছিল। তারপরেই এই ঘটনা খতিয়ে দেখতে ও উপযুক্ত পদক্ষেপের পরামর্শ দেওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ একটি উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করে।

আজ, সোমবার সিন্ডিকেটের বৈঠকে তদন্ত কমিটি তার সুপারিশ পেশ করে। সিন্ডিকেটের সদস্যরা সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত নেয়, ওই অনুষ্ঠানের আয়োজক পাঁচজনকে দুই বছরের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলিতে সশরীরে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। সিন্ডিকেটের সদস্যদের মতে, ক্যাম্পাসে সশরীরে প্রবেশে এই নিষেধাজ্ঞা আগামীতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এই ধরনের অবমাননাকর ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে কাজ করবে।

সাজাপ্রাপ্তদের মধ্যে থাকা তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সদস্য রাজা মেহেদি বলেন, "কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সরস্বতী পুজো একটা ঐতিহ্য৷ সাধারণ ছাত্র ছাত্রী ও তৃণমূল ছাত্র পরিষদ সেই ঐতিহ্যকে বাম জমানার পর থেকে রক্ষা করে আসছে। আমি নিজে মুসলিম হয়েও সেই ঐতিহ্যকে বহন করে চলছি৷ বিশ্ববিদ্যালয়ে পুজো হবে না৷ এটা কেউ মেনে নিয়ে পারেনি, নেবে ও না, রাজ্য সরকার ও ছাত্র সভাপতির নির্দেশ মতো আমরা সমস্ত ক্যাম্পাসে পুজো করার জন্য সহযোগিতা করেছি৷ তাতে কোনও অন্যায় আমরা দেখছি না। তাছাড়া চটুল গান নিয়ে যে প্রশ্ন উঠছে সেটা ওঁরা প্রমাণ করুক যে গানটা চটুল। আমরা সকলে আদালতের দ্বারস্ত হব৷"

আরও পড়ুন :ফেব্রুয়ারির হাত ধরে রাজ্যে বসন্তের প্রবেশ

রাজা মেহেদি জানাচ্ছেন, সাজাপ্রাপ্তদের মধ্যে কয়েকজন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান পড়ুয়া। তাঁদের ক্যাম্পাসে ঢুকতে না দিলে তাঁরা কীভাবে পঠন-পাঠন চালাবেন? সেই প্রশ্নও তুলেছেন তিনি৷ সাজাপ্রাপ্তদের মধ্যে রনি ঘোষ বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ছাত্র। তিনি এমবিএ-র প্রথম সিমেস্টারের পড়ুয়া। রনি ঘোষ সাজা প্রসঙ্গে বলেন, "আমায় শো-কজ না করে আমার বিরুদ্ধে কী করে পদক্ষেপ নেওয়া হল? আমি পুজোর আয়োজক না। ওখানে তো হাজার হাজার ছাত্র-ছাত্রী উপস্থিত ছিল। আমি তাদের মধ্যেই একজন। আমায় সাসপেন্ড করা হলে সবাইকে করা হোক যারা উপস্থিত ছিল। আমায় কেন একা টার্গেট করা হল? আমি তৃণমূল ছাত্র পরিষদ করি বলে? আমি হাইকোর্টে মামলা করব। আমায় অফিশিয়াল নোটিশ দিলেই আমি হাইকোর্টে মামলা করব।" কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যাচ্ছে, ক্যাম্পাসে ক্লাস শুরু হলে রনি ঘোষের বিষয়টি বিবেচনা করা হবে৷

ABOUT THE AUTHOR

...view details