কলকাতা, 12 সেপ্টেম্বর:বাংলার রাজনীতিতে চশমার জন্য বিখ্যাত ছিলেন মানব মুখোপাধ্যায় । মন্ত্রী হিসেবে 70 হাজার টাকার চশমা তৈরি করে সেই বিল বিধানসভায় জমা করে সংবাদ শিরোনামে এসেছিলেন তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকারের মন্ত্রী । ইনি অবশ্য মন্ত্রী নন, তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা । সাংসদ, অবশ্যই কালীঘাটের বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের একজন । তবে এর সঙ্গে সরকারি অর্থের যোগ নেই । সাংসদ ব্যক্তিগত অর্থ দিয়ে চশমা তৈরি করিয়েও বিরোধী রাজনৈতিক নেতাদের আক্রমণের শিকার হয়েছেন । আর রবিবাসরীয় আড্ডায় মুখে মুখে ফিরেছে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Abhishek Banerjee) এই চশমা নিয়ে আলোচনা । যদিও এই আলোচনার শুরু দক্ষিণ কলকাতার বিজেপির মিডিয়া সেলের একটি ফেসবুক পোস্ট থেকে । আর তাকে ঘিরেই চড়েছে রাজনৈতিক তরজা (BJP Taunts Abhishek)।
এ দিন দক্ষিণ কলকাতা বিজেপি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের (TMC vs BJP on Abhishek) একটি ছবি এবং তাঁর চশমার দুটি ছবি পোস্ট করে লেখে যে, 'টালির তলায় থাকা সততার প্রতীক মমতার আদরের দুলাল মাত্র ₹86,000/- এর চশমা পরে বলে সোশ্যাল মিডিয়ায় জানতে পারলাম । দক্ষিণ কলকাতার ব্যাপার তো তাই বললাম.. কারণ #SobarSouthKolkata'৷
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের চশমার প্রকৃত মূল্য আমরা অর্থাৎ ইটিভি ভারত যাচাই করিনি । এ ক্ষেত্রে বিজেপির অভিযোগ এবং তাঁদের সোশ্যাল সাইটের প্রচারের উপর ভিত্তি করে গোটা বিষয়টি নিয়ে আমরা বিজেপি নেতা রাহুল সিনার কাছে যাই । বিজেপি নেতা তথা প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি রাহুল সিনহাকে এই নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, "দুধের বদলে আটা খেয়ে বড় হলে, তারপর কেউ যখন অর্থের সাম্রাজ্য দেখে তখন অনেকেরই মাথা খারাপ হয়ে যায় । সেই অর্থ যদি কষ্টার্জিত অর্থ হয়, তাহলে বেপরোয়া ভাবে তা খরচ করতে অনেকেরই গায়ে লাগে । একটা বস্তি থেকে (উনি) কোটি কোটি টাকার মালিক কীভাবে হলেন, সেটাই তো গোটা পশ্চিমবঙ্গের মানুষের কাছে ধন্দ । এই অর্থ কীভাবে হয়েছে পার্থ চট্টোপাধ্যায়, অনুব্রত মণ্ডল বা এখনও যারা শিখরে গিয়েছেন তাঁদের থেকেই বোঝা যাচ্ছে ।" তিনি আরও বলেন, "একটা ডোন্ট কেয়ার মেন্টালিটি থেকেই এসব হচ্ছে । তাঁরা মনে করছেন বাংলার জনগণ তাঁদের কাছে দাসখত লিখে দিয়েছেন । এই বাংলা আপনারা শাসন না করলে চলবে না ৷ অতএব এই বাংলা আপনাদের দিয়ে দিলাম সারা জীবনের জন্য । মেন্টালিটিটা অনেকটা এরকম । বাংলার মানুষ 34 বছর শাসন করা সিপিএমকে ভিকিরি বানিয়ে দিয়েছে । সেই বিষয়টা মাথায় নেই । এখন যেমন যেখানেই হাত দিচ্ছে সেখানেই তৃণমূল, এই জিনিসটা আগামী দিনে মানুষের কাছে স্পষ্ট হবে । তখন এদের মুখোশ খুলে যাবে ।"
শুধু রাহুল সিনহাই নন, এই বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারও । সোশ্যাল সাইট ফেসবুকে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি এবং তাঁর চশমা এবং গাড়ি তুলে ধরে লেখা হয়েছে, "মুখে মা মাটি মানুষ আর চোখে 86 হাজারের চশমা । মুখে জয় বাংলা আর শ্যালিকার যাতায়াতের দু' কোটির গাড়ি । তবে সাধারণ মানুষের জন্য 500 টাকা মাত্র ।"
আরও পড়ুন:রাহুলের টি-শার্টের পালটা মোদির 10 লক্ষের স্যুট নিয়ে ফের কটাক্ষ কংগ্রেসের
সেখানে সুকান্ত মজুমদার বলেছেন, 2 কোটির গাড়ি আর 86 হাজারের চশমা পরে মানুষের চোখে ধুলো দিয়ে জনগণকে ঠকানো তৃণমূলের পেশা ।
যদিও এর পাল্টা জবাব দিতে দেরি করেননি তৃণমূল কংগ্রেসের সোশ্যাল মিডিয়ার বন্ধুরা । তৃণমূল কংগ্রেসের সোশ্যাল মিডিয়া টিমের তরফ থেকে বলা হয়েছে, দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির চশমার দাম মাত্র 1,71,960 টাকা । আর কতদিন ধরে জনগণের টাকা খেয়ে এই ভন্ডামীর সাজ সাজবেন ! এই লেখার পাশাপাশি তৃণমূল কংগ্রেসের তরফ থেকেও চোখের রোদ চশমার ছবি তুলে ধরা হয়েছে ।
এই নিয়ে রাজ্যের মন্ত্রী তথা তৃণমূলের অন্যতম মুখপাত্র স্নেহাশিস চক্রবর্তীর সঙ্গে কথা বললে তিনি জানিয়েছেন, "কোনও ব্যক্তি কী পরবেন, কী খাবেন, তা নিয়ে রাজনীতি তৃণমূল কংগ্রেস করে না । এগুলি প্রত্যেকের ব্যক্তিগত ব্যাপার । সে প্রধানমন্ত্রী হোন বা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় অথবা একজন সাধারণ নাগরিক । কিন্তু এখানে বিজেপির টার্গেট যে তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তা আরও একবার স্পষ্ট । কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার পাশাপাশি ব্যক্তি আক্রমণেও তারা ছাড় দিচ্ছে না । আর সে কারণেই তাঁর চশমা, তাঁর গাড়ি সবকিছুকেই টার্গেট করা হচ্ছে । কিন্তু বিজেপি কী করে ভুলে যাচ্ছে, তাঁদের প্রধানমন্ত্রী যে রোদ চশমাটি পরেন তার কত দাম । তাঁর কোট নিয়ে বিতর্কের কথা বিজেপি ভুলে গিয়েছে । অতএব আমার মনে হয় এক্ষেত্রে বিজেপির উচিত নিজেদের দিকে তাকানো ।"
বিজেপি অভিষেককে নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় এই পোস্ট শুরু করতেই তৃণমূল কংগ্রেসের তরফ থেকে পাল্টা প্রচার শুরু করা হয়েছে । সেখানে থাকছে মোদিজির রোদ চশমা, থাকছে মোদিজির সেই বিতর্কিত পিন স্ট্রিপ কোট-প্যান্ট । প্রসঙ্গত তৃণমূলের তরফ থেকে মোদিজির যে কোটের কথা বলা হচ্ছে, ওই কোটের দাম 10 লক্ষ টাকা । আর যে রোদ চশমার কথা বলা হচ্ছে, তার দাম মাত্র 1,71,960 টাকা । এক্ষেত্রে তৃণমূল নেতাদের কটাক্ষ, দেশের প্রধানমন্ত্রী যিনি নিজেকে ফকির বলেন, যিনি নিজেকে চাওয়ালা বলে পরিচয় দেন, তিনি যদি 10 লক্ষ টাকা দামের কোট এবং এক লক্ষ একাত্তর হাজার টাকার রোদ চশমা পরতে পারেন, তাহলে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের চশমাতে বিজেপি নেতাদের এলার্জি কোথায় !
দিনকয়েক আগেই ভারত জোড়ো যাত্রায় 41 হাজার টাকার টি-শার্ট পরায় বিজেপির তোপের মুখে পরতে হয়েছিল কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধিকে ৷ তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রের 1.6 লাখ টাকার ব্যাগ নিয়েও শোরগোল কম হয়নি ৷ এ বার চশমার দামের জন্য গেরুয়া শিবিরের নিশানায় তৃণমূলী অভিষেক ৷ রাজ্যের শাসকদল আবার পাল্টা অস্ত্র করেছে প্রধানমন্ত্রীর 10 লাখি কোট ও রোদচশমাকে ৷ সৎ পথে ব্যক্তিগত উপার্জনের অর্থে নিজেদের সাজপোশাক নিয়েও কি জবাবদিহি করতে হবে রাজনৈতিক নেতানেত্রীদের ? দেশের রাজনীতিতে অন্যান্য নানা সমস্যা ও জটিলতার থেকেও কি বেশি গুরুত্বপূর্ণ এই বিষয়গুলি ? এগুলি নিয়ে চর্চা বা খবরের শিরোনাম হওয়া কি আদৌ যুক্তিযুক্ত ? এমনই নানা প্রশ্নও আবার ঘোরাফেরা করছে নাগরিক সমাজের মনে ৷ উত্তর যদিও অধরা ৷