কলকাতা, 2 সেপ্টেম্বর : উপ-নির্বাচন নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস (Trinamool Congress) ও ভারতীয় জনতা পার্টির (BJP) মধ্যে লড়াই আরও চরমে ওঠার সম্ভাবনা তৈরি হল ৷ এবার উপ-নির্বাচন আটকাতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (Narendra Modi) ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে (Amit Shah) চিঠি পাঠাতে চলছে বঙ্গ-বিজেপির নেতৃত্ব ৷
বিজেপির একটি সূত্র থেকে জানা গিয়েছে যে এই নিয়ে আজ, বৃহস্পতিবার দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ (Dilip Ghosh) এবং বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর (Suvendu Adhikari) বৈঠক হয় ৷ সেখানেই এই নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ৷ ওই সূত্র জানাচ্ছে যে শুধু চিঠি পাঠিয়েই বসতে থাকতে চান না দিলীপ-শুভেন্দুরা ৷ নির্বাচন কমিশনের (Election Commission) কাছে এই নিয়ে দরবার করার পরিকল্পনা করেছে বিজেপি নেতৃত্ব ৷
আরও পড়ুন :Post Poll Violence : কাঁকুড়গাছির মৃত বিজেপি সমর্থকের শেষ ফেসবুক লাইভই সিবিআইয়ের হাতিয়ার
ওই সূত্র জানাচ্ছে যে চলতি মাসের 20 তারিখের মধ্যে বিজেপি সাংসদদের এক প্রতিনিধি দল নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে দেখা করবে ৷ কমিশনকে বিস্তারিত ভাবে জানানো হবে যে কেন এখন রাজ্যে নির্বাচন করা যাবে না ৷ এই নিয়ে একটি বিস্তারিত রিপোর্টও বিজেপির তরফে তুলে দেওয়া হবে নির্বাচন কমিশনের হাতে ৷
প্রসঙ্গত, প্রার্থীদের মৃত্যুর কারণে এবার বিধানসভা নির্বাচনের সময় দু’টি আসনে ভোট হয়নি ৷ তাছাড়া একাধিক আসনে উপ-নির্বাচন বকেয়া পড়ে রয়েছে ৷ যে আসনগুলিতে উপ-নির্বাচন (By-Election) হবে, তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল ভবানীপুর ৷ কারণ, সেখান থেকেই প্রার্থী হবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) ৷
আরও পড়ুন :Assembly By-poll : অবিলম্বে উপনির্বাচন চেয়ে কলকাতা হাইকোর্টে জনস্বার্থে মামলা
এবারের বিধানসভা ভোটে নন্দীগ্রাম (Nandigram) থেকে প্রার্থী হয়েছিলেন মমতা ৷ সেখানে তিনি হেরে যান বিজেপির শুভেন্দু অধিকারীর কাছে ৷ তার পরও তিনি মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন ৷ তাই পদে বসার ছ’মাসের মধ্যে তাঁকে ভোটে জিতে আসতে হবে ৷ সেই সময়সীমা শেষ হচ্ছে আগামী 5 নভেম্বর ৷ তার মধ্যে ভোট না হলে তাঁকে মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিতে হবে ৷
তাই তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে দ্রুত ভোট করানোর বিষয়ে তৎপরতা শুরু হয়েছে ৷ মমতা নিজেই বলেছেন যে এখন ভোট করানোর মতো পরিস্থিতি রাজ্যে রয়েছে ৷ এই নিয়ে কমিশনের কাছে দরবার করেছে তৃণমূল ৷ গতকাল, বুধবার নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে রাজ্য সরকারের যে বৈঠক, তাতেও দ্রুত ভোট করানোর উপর জোর দেওয়া হয়েছে ৷
আরও পড়ুন :Post Poll Violence : সিবিআই তদন্তে ভয় পেয়েই সুপ্রিম কোর্টে রাজ্য, কটাক্ষ দিলীপের
যদিও বিজেপির তরফে গোড়া থেকেই বলা হচ্ছে যে এখন রাজ্যে ভোট করানোর পরিস্থিতি নেই ৷ এদিন সেই কথা আবার শোনা গেল বিজেপির অন্যতম রাজ্য সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসুর গলায় ৷ তিনি বলেন, ‘‘রাজ্যে ট্রেন চলাচল বন্ধ । নাইট কার্ফু চলছে । রাজ্য প্রশাসনই তো বারবার অভিযোগ করছে যে কেন্দ্র নাকি ভ্যাকসিন পাঠাচ্ছে না, অন্য রাজ্যের তুলনায় রাজ্যে ভ্যাকসিন ঠিক করে দেওয়া হচ্ছে না । তা হলে কীভাবে রাজ্যে উপ-নির্বাচন সম্ভব ?’’ তাঁর অভিযোগ, রাজ্যে কোভিড বিধি দেখিয়ে বিরোধীদের একটাও রাজনৈতিক কর্মসূচি করতে দেওয়া হচ্ছে না ।
আরও পড়ুন :By-Election : এখনই উপ-নির্বাচন করতে প্রস্তুত, কমিশনকে জানাল রাজ্য
যদিও প্রশাসনিক মহল থেকে গতকাল থেকে খবর পাওয়া যাচ্ছিল যে যে কোনও দিন উপ-নির্বাচনের ঘোষণা করতে পারে নির্বাচন কমিশন ৷ রাজ্যের সঙ্গে বৈঠকের নির্যাসই নাকি তাই ! রাজনৈতিক মহলের ব্যাখ্যা, সেটা হলে বিজেপির হাত থেকে একটা বড় হাতিয়ার হাতছাড়া হয়ে যাবে ৷ কারণ, তারা ভোটের ফল প্রকাশের পর থেকেই মমতাকে ‘হেরো মুখ্যমন্ত্রী’ তকমা দিয়েছে ৷ মমতাকে পদত্যাগ করাতে পারলে, তাদের সেই সমালোচনা তুঙ্গে উঠবে ৷ তাই এই পরিস্থিতিতে তারা নতুন করে পরিকল্পনা করছে ৷
বিজেপি সূত্রের খবর, এবার শারদোৎসবকে ঢাল করতে চলেছে গেরুয়া ৷ কারণ, পুজোর সময় জমায়েত হবে ৷ তাই তার আগে ভোট করতে গিয়ে করোনার সংক্রমণ বেড়ে গেলে, উৎসবে প্রভাব পড়বে ৷ এই বিষয়গুলি প্রধানমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে জানানো হবে বলে খবর ৷ একই সঙ্গে স্পষ্ট করে দেওয়া হবে যে রাজ্য বিজেপি চাইছে ভোট পুজোর পরেই হোক ৷
আরও পড়ুন :Suvendu Adhikari : বাঁকুড়ায় বিধায়কদের তৃণমূলে যোগ দিতে চাপ দিচ্ছে পুলিশ, অভিযোগ শুভেন্দুর
সেই কথাই এদিন বললেন সায়ন্তন বসু ৷ তিনি বলেন, ‘‘রাজ্যের সব থেকে বড় উৎসব দুর্গা পুজো । তাই পুজোর সময় একটা বড় জমায়েত হওয়ার সম্ভবনা আছে । তাই কোনও ভাবেই এখন রাজ্যে উপনির্বাচন সম্ভব নয় । সেটাই আমরা কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে জানাব ৷’’