কলকাতা, 5 অগাস্ট: শিশুকে ব্রেস্ট-ফিডিং করান না এমন মায়ের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে শহরে ৷ বর্তমান সমীক্ষা বলছে সংখ্যাটা 50 শতাংশের বেশি ৷ একদিকে শিক্ষিত মায়েদের মধ্যে ব্রেস্ট-ফিডিং করানোর প্রবণতা বাড়ছে ৷ কিন্তু অন্যদিকে নিম্ন আর্থ-সামাজিক স্ট্যাটাসের মায়েদের মধ্যে ব্রেস্ট-ফিডিং না করানোর প্রবণতা বাড়ছে । বিষয়টা উদ্বেগজনক ৷ জানালেন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ অগ্নিমিতা গিরি সরকার ।
কলকাতার বেসরকারি একটি শিশু হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অগ্নিমিতা ৷ বলেন, "20 বছর ধরে যা দেখছি তাতে ব্রেস্ট-ফিডিংয়ের বিষয়ে কলকাতার অবস্থা খুব খারাপের দিকে যাচ্ছে । 20 বছর আগে যা ছিল তার থেকে ধীরে ধীরে কমছে । গত কয়েক বছরে খুব বেশি পরিমাণে কমছে । কলকাতার ৫০ শতাংশেরও বেশি মা ব্রেস্ট-ফিডিং করান না । বেশিরভাগ মা কৃত্রিম দুধ কিনে শিশুদের খাইয়ে দেন । কারণ এইসব মা বিশ্বাস করেন, তাঁর স্তনে দুধ নেই । ব্রেস্ট-ফিডিংয়ের বিষয়ে এইসব মায়েদের সচেতন না করা হলে আশঙ্কা রয়েছে ।" অগ্নিমিতা জানান, অনেক সময় শিশুকে বোতলে করে দুধ খাওয়ানো হচ্ছে । বোতলে করে শিশু একবার দুধ খেতে শুরু করলে, সে আর স্তন্যপান করবে না ।
সন্তানকে দুধ খাওয়াতে হলে মানসিকভাবে মা'কে খুব রিলাক্স থাকতে হয় ৷ মা যদি টেনশনের মধ্যে থাকেন তা হলে সমস্যা দেখা দেয় । এক্সক্লুসিভ ব্রেস্ট -ফিডিংয়ের বিষয়ে সচেতন করে তোলা না হলে, আগামীদিনে সমস্যা আরও বেড়ে যাবে । বলেন, " কাজের প্রেসার কিংবা বাড়িতে প্রেসার বাড়ার কারণে হরমোনাল রিফ্লেক্স নষ্ট হয়ে যাচ্ছে । আবার এমনও দেখা যায় যে যেসব মা চাকুরিজীবী, তাঁরা কিন্তু এবিষয়ে ভীষণরকম সচেতন ৷ এঁদের মধ্যে অনেকে খুব সাকসেসফুলি ব্রেস্ট-ফিডিং করাচ্ছেন । যাঁরা নিম্ন আর্থ-সামাজিক স্ট্যাটাসে রয়েছেন, তাঁদের মধ্যে অনেকের ধারণা বাইরের দুধ খাওয়ালে বাচ্চাকে দেখতে সুন্দর হবে ৷ চেহারা গোলগাল হবে । তাঁদের মধ্যে অনেকেই যাঁরা মনে করেন, তাঁদের স্তনে দুধ নেই । এই জন্য, বাইরে থেকে দুধ কিনে এনে খাইয়ে দেন ৷
অগ্নিমিতা আরও বলেন, "24 ঘণ্টার মধ্যে 8-10 বার বা তার বেশি দুধ খায় শিশু । শিশু যখন ঘুমাবে, তখন ঘুমিয়ে নেবেন মা । শিশু যখন জেগে থাকবে, মা-কে তখন জেগে থাকতে হবে । দেখা গেল, শিশু সারা রাত জেগে দুধ খাচ্ছে, মা-কেও জেগে থাকতে হচ্ছে । শিশু যখন সকালে ঘুমোচ্ছে, মা-কে তখন সকালে ঘুমিয়ে নিতে হবে । এই অবস্থায় মা এমনও ভাবছেন, তাঁর সিস্টেম তাঁর মতো চলুক, শিশুর সিস্টেম শিশুর মতো চলুক । বাইরে থেকে দুধ কিনে এনে তিনি খাইয়ে দিলেন । নিম্ন আর্থ-সামাজিক স্ট্যাটাসে যাঁরা রয়েছেন, সেই সব মাও একা হয়ে গিয়েছেন । এ ক্ষেত্রে বাইরে থেকে দুধ কিনে এনে খাইয়ে দিলে এই সব মাও নিশ্চিন্তে থাকেন । এই কারণটা যেমন রয়েছে । তেমনই এটাও রয়েছে যে সন্তানকে পেট ভরে খাইয়ে দিলেন মা । এর ফলে সন্তানের ওজন ভালো বাড়ছে বা অতিরিক্ত ওজন বাড়ছে । এই বিষয়টি তাঁরা সেভাবে ভাবছেন না, তাঁদের মনে হচ্ছে বাচ্চার এই যে অতিরিক্ত ওজন হচ্ছে সেটা বাইরের দুধ খেয়ে ৷ এটা বুঝি খুব বেশি পুষ্টিকর ৷ বাচ্চার গোলগাল চেহারা হচ্ছে, মনে হচ্ছে খুব ভালো বৃদ্ধি হচ্ছে । কিন্তু এটাও তো অপুষ্টির কারণ হতে পারে । কারণ মায়ের দুধ শিশু পাচ্ছে না বলে কিছু নিউট্রিয়েন্টস এবং কিছু প্রয়োজনীয় এলিমেন্ট পাচ্ছে না । এই যে ঘাটতি থাকছে তা বুঝতে পারছেন না এইসব মা ।" এই পরিস্থিতি থেকে বের হতে হলে এই সব মায়ের কাউন্সিলিং-এর প্রয়োজন । তাঁদের বোঝানো দরকার যে মায়ের দুধ শ্রেষ্ঠ । মা দুধ খাওয়ালে তাঁকে কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে । তাঁকেও ডিসিপ্লিনের মধ্যে থাকতে হবে ।
ব্রেস্ট-ফিডিং কীভাবে, কতটা গুরুত্বপূর্ণ?
অগ্নিমিতা বলেন, " কোনও শিশু যদি তার মায়ের কাছ থেকে দুধ পায়, তাহলে এর সবটাই অ্যাডভান্টেজ । কারণ, শিশুর একমাত্র আহার হচ্ছে মায়ের দুধ । এটা তার অধিকার ৷
A ফর এলার্জি । এলার্জির ধাত কমে । এলার্জি মানে স্কিন, ফুসফুসসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে এলার্জি । এর সবটাই কম হয় ।
B ফর বন্ডিং অর্থাৎ মা ও শিশুর মধ্যে বন্ডিং তৈরি হয় । স্কিন-টু-স্কিন কন্টাক্টে থাকতে হবে মা এবং শিশুকে ৷ মায়ের যে তাপ সেটাও নিচ্ছে শিশু । মায়ের সঙ্গে শিশুর অ্যাটাচমেন্ট তৈরি হচ্ছে । এছাড়া ব্রেইন ডেভেলপমেন্ট হচ্ছে । এমন কিছু এলিমেন্ট ব্রেস্ট মিল্কে আছে যেটা শিশুর বুদ্ধির বিকাশ হতে সাহায্য করে ।