ডোমজুড়, 12 জুন : খবরটা শুনে প্রথমে নিজের কানকেও যেন বিশ্বাস করতে পারছিলেন না তাঁরা । TV-তে দেখে সম্বিত ফিরল গোটা এলাকার । ততক্ষণে হাসপাতালে ছুটে গেছে মুখোপাধ্যায় পরিবার । বাড়ির ছেলে তখন জীবন-মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন হাসপাতালে ।
ছোটোবেলা থেকেই মেধাবী পরিবহ । স্কুলে সবসময় হত প্রথম । মাধ্যমিকের পর উচ্চমাধ্যমিকেও তাক লাগিয়ে দিয়েছিল তাঁর রেজ়াল্ট । বিজ্ঞান নিয়ে পড়ে স্কুলে প্রথম হয় । সঙ্গে ছিল জয়েন্টে সাফল্য । পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি পরিবহকে । ডাক্তারি পড়াশোনা শুরু । NRS-এ ইন্টার্ন হিসেবে কাজ করার সুযোগ আসে খুব সহজেই । সোমবার রাতের ঘটনা সব কিছু এলোমেলো করে দিল মুখোপাধ্যায় পরিবারকে ।
উন্মত্ত জনতার রোষের শিকার হন পরিবহ । প্রচণ্ড জোরে আঘাত লাগায় কপালের উপরের করোটির সামনের একটি অংশ তুবড়ে ভিতরে ঢুকে গেছে তাঁর । দ্রুততার সঙ্গে হয় অস্ত্রোপচার । ITU-তে থাকার সময় IV ফ্লুইড, অ্যান্টিবায়োটিক, খিচুনি বন্ধের ওষুধ সবই দেওয়া হয় তাঁকে । কপাল জোরে আরও বড় দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেয়েছেন পরিবহ । CT স্ক্যানেও কিছু ধরা পরেনি । আপাতত স্থিতিশীল বললেও পুরোপুরি বিপন্মুক্ত বলতে নারাজ চিকিৎসক ।
মেধাবী, মিশুকে এলাকায় ভালো ছেলে হিসেবে পরিচিতি পরিবহের । সোমবার যখন ঘটনাটি জানাজানি হতেই, হাওড়ার ডোমজুড়ে আর পাঁচজনের মতন চোখে জল এসে গেছিল সুকুমার হালদারের । ছোটো থেকেই পরিবহকে দেখছেন । নিজের পরিবারের একজন মনে করতেন । খুব ভালোবাসতেন । পছন্দ করতেন । পরিবহের এহেন পরিণতি যেন মেনে নিতে পারছেন না । তিনি চান দ্রুত সুস্থ হয়ে ফিরুক পরিবহ । পরিবারের মুখে হাসি ফোটাক ।
শুধু সুকুমারবাবুর কথাই বলব কেন ? একই প্রার্থনা এলাকার প্রতিটি মানুষের । তাঁদের মনে একটাই প্রশ্ন, কী দোষ করেছিল ছেলেটা ? কেউ চলেছেন মন্দিরে, কারও চোখ TV-র পর্দা থেকে একটি বারের জন্য সরছে না । বাড়িতে-বাড়িতে, মোড়ে-মোড়ে একটাই আলোচনা, কেমন আছে পরিবহ ? কেউ আবার চেষ্টা করছেন হাসপাতালে তাঁর পরিবারের লোকজনকে ফোন করে খবর নেওয়ার ।
আজ যখন TV-তে দেখালো ফের একবার CT স্ক্যান হবে পরিবহের । খবরটা শুনে চমকে ওঠে পরিবহের প্রতিবেশীরা । প্রশ্ন একটাই, আবার কেন ? তাহলে কী খারাপ কিছু ... যদিও চিকিৎসকরা বলছেন, আশঙ্কার কিছু নেই ।
কিন্তু কোনও আশ্বাসবাণী যেন হাসি ফোটাতে পারছে না ডোমজুড়ের মানুষদের । প্রার্থনা একটাই, দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠুক তাঁদের পরিবহ ।