শিলিগুড়ি, 27 জুন : দুজনেই এখন বৃদ্ধ । পরিবার-পরিজন থেকেও নেই । তাই হাসপাতালই এখন তাঁদের ঠিকানা । বাড়ির লোক মুখ ঘুরিয়ে নিলেও তাড়িয়ে দিতে পারেনি শিলিগুড়ি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ । হাসপাতালের বেডই এখন তাঁদের বাসস্থান । একইভাবে এই হাসপাতালেই বেড়ে উঠছে দুই শিশু ।
শিলিগুড়ি হাসপাতালের মেল সার্জিকাল ওয়ার্ডে বিছানায় পড়ে রয়েছেন এক রোগী । তাঁর বাম পা ভাঙা । বেডেই দিন কাটাচ্ছেন । এই বেডের কিছুটা দূরেই মাটিতে প্লাস্টিক পেতে থাকছেন আর এক বৃদ্ধ । তাঁর পায়ে পচন ধরেছে । প্রথমজনকে আগেই মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে রেফার করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ । কিন্তু, আত্মীয়রা আসেনি । হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চেষ্টা করেও খোঁজ পায়নি । এই পরিস্থিতিতে গত ছ'মাস ধরে ওই বেডেই পড়ে রয়েছেন বৃদ্ধ । দ্বিতীয় রোগীর ক্ষেত্রেও একই অবস্থা । বাড়ির লোক দায় নিতে চায়নি । তাই হাসপাতালে রোগীকে ভরতি করার সময়ই ভুল ঠিকানা দিয়েছিল । ফলে সেই বৃদ্ধকেও আর বাড়ি ফেরাতে পারেনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ।
অন্যদিকে হাসপাতালের শিশুবিভাগে দিন কাটছে বছর দেড়েকের এক শিশুর । কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এক কুমারী মা সন্তান প্রসবের পর বেপাত্তা হয়ে যায় । তারপর থেকেই হাসপাতালই ঠিকানা সেই শিশুর । নার্সরা ভালোবেসে নাম রেখেছেন ঋজু । সেও হাসপাতালের বেডেই বড় হচ্ছে ।
শুনুন হাসপাতালের অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপার কৌশিক সিংহয়ের বক্তব্য হাসপাতালের অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপার কৌশিক সিংহ জানিয়েছেন, আরও তিনজন এভাবে বহুদিন ধরে হাসপাতালে ছিলেন । অনেক চেষ্টার পর তাঁদের পরিবার-পরিজনদের খুঁজে পাওয়া যায় । রোগীদের বাড়ি পৌঁছে দেওয়া হয়েছে । দুই বৃদ্ধকে নিয়ে বলেন, "যে দুই বৃদ্ধ আছেন তাঁরা ঠিক করে কিছুই বলতে পারেন না । তাদের নামও আমাদের জানা নেই । শিশুবিভাগে থাকা ঋজু ছাড়াও সিক নিয়নেটাল কেয়ার ইউনিটে এক সদ্যোজাত রয়েছে । শিশুদের ক্ষেত্রে আমরা চেষ্টা করি CWC-র এর মাধ্যমে হোমে পৌঁছে দিতে । কিন্তু সেটি সময় সাপেক্ষ প্রক্রিয়া । মানবিক কারণেই ওদের এখানে রেখে দিয়েছি ।"
রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান রুদ্রনাথ ভট্টাচার্য বলেন, "সত্যিই বেদনাদায়ক । শিশুবিভাগে থাকা শিশুটি বড় হচ্ছে । নার্সরা ওকে ভালোবাসে । ওদের সঙ্গেই খেলাধুলো করে । হাসপাতালের বেড ওর একটুকরো পৃথিবী । আরও এক শিশু ও দুই বৃদ্ধ আছেন । ওদের ঠিকানা নেই । আমরা চেষ্টা করছি ওদের হোমে পাঠিয়ে দেওয়ার ।"