মহারাষ্ট্র, ছত্তিসগড়, কর্নাটক, উত্তর প্রদেশ, কেরল ও অন্যান্য রাজ্যে পরিস্থিতি ক্রমশ খারাপ হচ্ছে । 1 মার্চ দেশে একদিনে 15 হাজার 500 জন আক্রান্ত হয়েছিলেন । আজ সেই সংখ্যাটা 12 গুণ বেড়েছে । মহারাষ্ট্র ও রায়পুরে একটি চিতায় আটটি মৃতদেহ দাহ করার মতো ঘটনাও সামনে এসেছে । ছত্তিসগড়ের সরকারি হাসপাতালগুলোতে মৃতদেহের স্তুপ তৈরি হয়েছে । কেন্দ্র বলছে যে, এবছর কোভিড প্যানডেমিক গতবছরের সর্বোচ্চ স্তরকেও ছাড়িয়ে যাবে । তাদের মতে, করোনা-বিধি লঙ্ঘন, স্থানীয় নির্বাচন, বিয়েবাড়িতে জমায়েত এবং অন্যান্য কারণেই বর্তমানে কোভিড এই গতিতে বাড়ছে ।
প্রশ্ন হল, গতবছরের বিধানসভা ভোটে যে কোভিড প্রোটোকল মেনে চলা হয়েছিল, এবারে তার কী হল? কুম্ভমেলা এই বলে শুরু হল, যে ঈশ্বরের প্রতি ভক্তি করোনাকে দূরে সরিয়ে দেবে । কুম্ভে এত জনসমাগম করোনাকে ইন্ধন জোগাবে । সবার কাছে ভ্যাকসিন পৌঁছনোর আগেই সরকার এমন গা-ছাড়া মনোভাব দেখাল, যেন সবাই ভ্যাকসিন পেয়ে গেছে । এই উদাসীনতা করোনার কোপকে আরও জোরালো করে তুলেছে । বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে নাগরিকদের উদাসীনতার সঙ্গে ভাইরাসের মিউটেশন যোগ হয়ে তা পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটাচ্ছে । ঠিক গতবছর যা ঘটেছিল, তেমনভাবেই দেশকে গ্রাস করছে বেড, ওষুধ আর অক্সিজেনের আকাল ।
আরও পড়ুন : কুম্ভে 5 দিনে কোভিডে আক্রান্ত 2167, সংক্রমিত 30 সাধু
স্পুটনিক-5 এবং অন্যান্য বিদেশি ভ্যাকসিনের জরুরিভিত্তিক প্রয়োগে ছাড়পত্র দিয়েছে কেন্দ্র । ওষুধশিল্পের সঙ্গে সহযোগিতার পাশাপাশি স্বাস্থ্যব্যবস্থার ভাঙন আটকে, কোভিডের বিরুদ্ধে বহুমাত্রিক লড়াই শুরু করতে হবে সরকারকে ।
ভারতকে বিশ্বের ভ্যাকসিন-রাজধানী বলা হয় । এমন একটা দেশে এখনও পর্যন্ত মাত্র 0.7 শতাংশ মানুষই ভ্যাকসিনের দুটি ডোজ় পেয়েছেন । মাত্র 6 শতাংশ মানুষ ভ্যাকসিনের একটি ডোজ় নিয়েছেন । বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোভিডের বিরুদ্ধে লড়াই জেতা যাবে না, যতক্ষণ না প্রতিদিন অন্তত 50 লাখ ভ্যাকসিন না দেওয়া হচ্ছে । এটা একেবারেই স্পষ্ট যে মানুষের মন থেকে ভয় ও সঙ্কোচ দূর করতে ব্যর্থতা, রাজ্যগুলোতে পর্যাপ্ত ভ্যাকসিন পৌঁছে দিতে না পারাটাই প্যানডেমিকের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের গতি শ্লথ করে দিচ্ছে ।
আরও পড়ুন :ফের রেকর্ড, পরপর দু'দিন 2 লাখের গণ্ডি ছাড়াল সংক্রমণ
সরকারকে বোঝাতে হবে যে ভ্যাকসিন করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য শরীরকে প্রস্তুত করে এবং এর মাধ্যমে জীবন সংশয় এড়ানো যায় । দেশীয় ভ্যাকসিন নির্মাতারা এর মধ্যেই সরকারের কাছে আর্থিক সহায়তা বাড়ানোর জন্য অনুরোধ করেছে, যাতে আরও বেশি ভ্যাকসিন উৎপাদন করা যায় । বাজেটে মিশন কোভিড সুরক্ষা প্রকল্পের আওতায় কেন্দ্র দেশীয় ভ্যাকসিন উৎপাদক সংস্থাগুলোর জন্য 35 হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে । সরকারের উচিত সমস্ত দেশবাসীকে ভ্যাকসিন দিতে দ্রুত তৎপর হওয়া ।
ফাইজার ও মডার্নার ভ্যাকসিনের দাম নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি কেন্দ্রকে জনসন অ্যান্ড জনসনের ভ্যাকসিন নিয়ে আমেরিকায় তৈরি হওয়া বিতর্কের দিকেও নজর রাখতে হবে । কেন্দ্র অক্সিজেনের জোগান বাড়াতে ইস্পাত কারখানা এবং তৈল শোধনাগারগুলোকেও এগিয়ে আসতে বলেছে । পাশাপাশি দেখতে হবে যাতে রেমডিসিভিরের মতো ওষুধের মজুতদারিও আটকানো যায় ।
এই অদৃশ্য ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইতে যদি জীবনহানি যথাসম্ভব রুখে দিয়ে বিজয়ী হতে হয়, তাহলে কেন্দ্র ও রাজ্যগুলোকে কোনওরকম ঢিলেমি এবং দায়িত্বজ্ঞানহীনতা ছাড়া কঠোর পরিশ্রম করতে হবে ।