কলকাতা, 30 মে : 26 মে 2014 ৷ প্রধানমন্ত্রী পদে প্রথমবার শপথ নিলেন নরেন্দ্র মোদি ৷ পাঁচ বছর পর ভারতবাসী আবার তাঁকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বেছে নিলেন ৷ 2019 সালের 30 মে মোদি তাঁর প্রধানমন্ত্রীত্বের দ্বিতীয় দফার সফরের শপথ নিলেন ৷
আজ, 30 মে 2021 ৷ আজ পর্যন্ত সব মিলিয়ে সাত বছর সাউথ ব্লকে প্রধানমন্ত্রীর কুর্সিতে কাটিয়ে ফেললেন নরেন্দ্র মোদি ৷ যেহেতু তাঁর দল লোকসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতার দিক থেকে একেবারে নিরঙ্কুশ ৷ তাই আগামী তিনবছরও যে তিনিই দেশের প্রধানমন্ত্রী থাকবেন, তা বলাই বাহুল্য ৷
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন যে, নরেন্দ্র মোদির আগামী তিন বছরের পথ একেবারেই সহজ হবে না ৷ কারণ, 2014 সালের পর থেকে অধিকাংশ দেশবাসীর মনের মধ্যে গেঁথে যাওয়া ‘মোদি হ্যায় তো মুমকিন হ্যায়’-এর বিশ্বাস এখন একটু হলেও নড়বড়ে ৷ বরং ক্ষোভ বাড়তে শুরু করেছে ৷
তার উপর রয়েছে করোনা পরিস্থিতি ৷ যা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ৷ কোভিড প্যানডেমিকের জন্য যে ধাক্কা আর্থিক ও অন্যান্য দিক থেকে দেশের উপর এসে পড়েছে, তা তো সামলাতেই হবে মোদিকে ৷ তার সঙ্গে দেশবাসীর আস্থা আবার জয় করার চ্যালেঞ্জের মুখেও পড়তে হবে ৷ অন্তত এমনটাই মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা ৷
যদিও পরিস্থিতি আগে মোটেও আজকের মতো ছিল না ৷ ভারতীয় জনতা পার্টি যখন মোদিকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে প্রজেক্ট করে, তখন তিনি ছিলেন দলের কর্মী-সমর্থকদের নয়নের মণি ৷ তিনিও তাঁর স্বকীয় ক্যারিশমা দিয়ে দলের বৃত্তের বাইরে বেরিয়ে আপামর ভারতবাসীর মন জয় করতে পেরেছিলেন ৷ সকলেই বিশ্বাস করেছিলেন দেশের হাল ফেরাতে পারবেন একমাত্র মোদিই ৷
আর সেই বিশ্বাসে ভর করেই 2014 সালে সফল হয়েছিল ‘আব কি বার মোদি সরকার’ এর স্লোগান ৷ তার পর সময় যত এগিয়েছে, মোদি সরকারের একাধিক সিদ্ধান্ত নিয়ে সমালোচনা হয়েছে ৷ বিরোধীরা তোপ দেগেছেন ৷ কিন্তু মোদির প্রতি মানুষের বিশ্বাস অটুট ছিল ৷ যেখান থেকেই তৈরি হয়েছিল ‘মোদি হ্যায় তো মুমকিন হ্যায়’ স্লোগান ৷
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন যে, মোদির প্রতি ভারতবাসীর আস্থার সবচেয়ে বড় উদাহরণ হল নোটবন্দি ৷ 2016 সালের 8 নভেম্বর মোদির নেওয়া ওই সিদ্ধান্তে অনেকেই বিপাকে পড়েছিলেন ৷ কিন্তু মানুষ বিশ্বাস করেছিল যে দেশকে দুর্নীতিমুক্ত করতেই এই পদক্ষেপ করেছেন মোদি ৷ ওই সিদ্ধান্তের কয়েক মাসের মধ্যেই উত্তর প্রদেশে বিধানসভা নির্বাচন ছিল ৷ সেই নির্বাচনে ব্যাপকভাবে জয় পায় বিজেপি ৷ সেই বিশ্বাস 2019 সালেও অটুট ছিল ৷ সেই কারণে 2014 সালের চেয়েও বেশি আসনে জিতে ক্ষমতায় আসতে পেরেছে বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ ৷
রাজনৈতিক মহলের মতে, তার পরও পরিস্থিতি খারাপ ছিল না ৷ করোনার প্রথম দফায় সমালোচিত হয়েছেন মোদি ৷ তবুও মানুষের আস্থা বজায় ছিল ৷ কিন্তু করোনার দ্বিতীয় ঢেউ সেই বিশ্বাসের অনেকটাই ভাসিয়ে নিয়ে গেল ৷ দ্বিতীয় দফায় করোনা পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার জন্য অনেকেই এখন মোদিকেই কাঠগড়ায় তুলছেন ৷
তাই এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসাই এখন চ্যালেঞ্জ নরেন্দ্র মোদির কাছে ৷ আর সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে গেলেও দেশকে করোনার ধাক্কা থেকে তুলতে হবে তাঁকে ৷ তবেই 2024 সালে প্রথম কোনও অকংগ্রেসি নেতা হিসেবে পরপর তিনবার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার রেকর্ড গড়তে পারবেন এই বিজেপি নেতা ৷
আরও পড়ুন :মোদির প্রধানমন্ত্রিত্বের সপ্তম বর্ষপূর্তিতে বিজেপির সেবা দিবস পালন
সেটা সম্ভব কি না, সেই উত্তর পাওয়ার জন্য আরও তিনবছর অপেক্ষা তো করতেই হবে ৷ কিন্তু পরিস্থিতি যে অনুকূল নয়, সেটা বোধহয় প্রধানমন্ত্রী নিজেই বোঝেন ৷ তাই রবিবার মন কি বাত অনুষ্ঠানে তিনি টেনে এনেছেন তাঁর সাত বছরের প্রধানমন্ত্রীত্বের বিষয়টি ৷ গত সাত বছরে ভারতের সব সাফল্যের কৃতিত্বের ভাগীদার করেছেন দেশবাসীকে ৷