পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / bharat

Chinese Intrusion : অরুণাচলে আস্ত গ্রাম চিনের, পেন্টাগনের রিপোর্ট তুলে সরব কংগ্রেস

ভারত-চিন সীমান্ত সংঘাতের জেরে বিগত কয়েক বছর ধরেই উত্তপ্ত উপমহাদেশীয় রাজনীতি ৷ সেই নিয়ে সংম্প্রতি কংগ্রেসে মিলিটারি অ্যান্ড সিকিয়োরিটি ডেভলপমেন্টস ইনভলভিং দ্য পিপিলস রিপাবলিক অব চায়না, 2021 নামের একটি রিপোর্ট জমা দেয় পেন্টাগন ৷ তাতে বলা হয়, এলএসি পেরিয়ে অরুণাচলের ভিতরে ঢুকে এসেছে চিন ৷

reffering-to-pentagon-report-on-chinese-intrusion-in-arunachal-pradesh-congress-wants-narendra-modi-to-apologise-for-misleading-the-country
অরুণাচলে চিনের তৈরি গ্রামের এই ছবি ধরা পড়েছে স্যাটেলাইটে ।

By

Published : Nov 7, 2021, 2:20 PM IST

নয়াদিল্লি, 7 নভেম্বর : চিনের হাতে ভারতের বিস্তীর্ণ এলাকা জবরদখল হয়ে গিয়েছে বলে ঢের আগেই অভিযোগ করেছিলেন তিনি । কিন্তু ধারালো আক্রমণে সেই সময় কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধিকে চুপ করিয়ে দেওয়ার পালা শুরু হয় বিজেপি-র তরফে । কিন্তু চিনা আগ্রাসনে ভারতের মাটি বেদখল হয়ে গিয়েছে বলে এ বার জানাল আমেরিকা । তাদের প্রতিরক্ষা বিভাগ পেন্টাগনের রিপোর্টে বলা হয়েছে, প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা (এলএসি) পেরিয়ে ভারতের অরুণাচল প্রদেশে আস্ত গ্রাম গড়ে ফেলেছে ড্রাগন । তাতেই এ বার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং তাঁর সরকারের ব্যর্থতা নিয়ে নতুন করে সরব হল কংগ্রেস । সত্য লুকিয়ে, জাতীয় নিরাপত্তার সঙ্গে আপস করে, গোটা দেশকে অন্ধকারে রাখার জন্য প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমা চাওয়া উচিত বলে দাবি তাদের ।

পেন্টাগনের রিপোর্ট উদ্ধৃত করে শনিবার দিল্লিতে সাংবাদিক বৈঠক করেন কংগ্রেস মুখপাত্র পবন খেরা । তিনি বলেন, ‘‘আমেরিকার কংগ্রেসে পেন্টাগন যে বার্ষিক রিপোর্ট জমা দিয়েছে, তাতে ভারতের মাটি বেদখল হয়ে যাওয়ার দাবিতে সিলমোহর পড়েছে ৷ ওই রিপোর্টে স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে যে, অরুণাচল প্রদেশে সাড়ে 4 কিলোমিটার ভিতরে আমাদের এলাকায় ঢুকে এসেছে চিন ৷ সেখানে রীতিমতো গ্রাম গড়ে তুলেছে তারা, যার দ্বৈত ব্যবহার হচ্ছে ৷ সাধারণ মানুষ যেমন সেখানে বাস করছেন, তেমনই নবনির্মিত বাড়িগুলিকে সেনা ছাউনি হিসেবেও ব্যবহার করা হচ্ছে ৷’’

গত বছর লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় চিনা বাহিনীর সঙ্গে ভারতীয় সেনার সংঘর্ষের পর থেকেই প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা সংলগ্ন এলাকায় চিনা আগ্রাসন নিয়ে উদ্বেগ ক্রমশ বাড়ছিল ৷ প্যাংগং হ্রদ, দেপসাং, উষ্ণপ্রবণ-সহ বেশ কিছু এলাকায় চিনা বাহিনী ঢুকে এসেছে বলে সেই সময় দাবি করে কংগ্রেস ৷ রাহুল গান্ধি খোদ এ নিয়ে নরেন্দ্র মোদিকে তীব্র ভর্ৎসনা করেন ৷ রাহুলের বক্তব্য ছিল, ‘প্রধানমন্ত্রী আসলে কাপুরুষ, যাঁর চিনা বাহিনীর সামনে মাথা তুলে দাঁড়ানোর ক্ষমতা নেই ৷ সেনাবাহিনীর বলিদানের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করছেন, যা করার অধিকার নেই ভারতের কারও ৷ দেশের ভূখণ্ড রক্ষা করা প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব ৷ সেটা কী ভাবে করবেন, সেটা তাঁর ব্যাপার ৷ তা না করে কেন সেনা প্রত্যাহার করতে বলা হল ? বিনিময়ে কী পেল ভারত ?’

আরও পড়ুন:Independence Special : বালগঙ্গাধরের কলম ধার বাড়িয়েছিল স্বাধীনতার যুদ্ধের

কিন্তু সেই সময় ধারালো আক্রমণে রাহুলকে চুপ করাতে দেখা যায় কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এবং বিজেপি-র শীর্ষস্তরীয় নেতৃত্ব ৷ দেশের একচুলও হাতছাড়া হয়নি বলে দাবি করে কেন্দ্র ৷ দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সভাপত জেপি নাড্ডা রাহুলের প্রতি আক্রমণ শানিয়ে বলেন, ‘কংগ্রেসের সার্কাসের নতুন অধ্যায় , নেপথ্যে রাহল গান্ধি ৷ সেনা প্রত্যাহারকে ভারতের পরাজয় হিসেবে তুলে ধরছেন ৷ চিনের সঙ্গে কি কংগ্রেসের আলাদা কোনও মউ স্বাক্ষরিত হয়েছে ? প্রতিরক্ষা কৌশল নিয়ে প্রশ্ন তুলে আসলে কি আমাদের বীর জওয়ানদের অপমান করছেন না রাহুল ?’

দেশভাগের জন্য কংগ্রেসকে দায়ী করেও রাহুলকে একহাত নেন নাড্ডা ৷ তিনি বলেন, ‘কংগ্রেস চিরকালই সেনাকে অপমান করে এসেছে ৷ চিনের সঙ্গে সংঘাতে সরকার দেশের একচুল অংশও ছেড়ে দেয়নি ৷ হাজার হাজার স্কোয়্যার কিলোমিটার ছেড়ে দেওয়ার পাপ যদি কেউ করে থাকে, তা একটি কাপুরুষ পরিবার, যারা ক্ষমতায় থাকতে দেশকে টুকরো টুকরো করেছে ৷’

শুধু নড্ডা বা কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরাই নন, প্রধানমন্ত্রী নিজেও জানিয়েছিলেন, একচুলও বেহাত হয়নি ৷ কড়া ভাষায় চিনকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছিলেন, ‘সম্প্রসারণের যুগ শেষ ৷’

কিন্তু পেন্টাগনের রিপোর্ট সামনে আসার পর কেন্দ্রীয় সরকার এবং নাড্ডার সেই দাবি ঘিরেই এখন প্রশ্ন উঠছে ৷ এ নিয়ে বিস্তর তর্ক-বিতর্ক হলেও এখনও পর্যন্ত কেন্দ্রের তরফে কোনও মন্তব্য করা হয়নি ৷ তাতেই সরাসরি প্রধানমন্ত্রীকে নিশানা করেছে কংগ্রেস ৷ তাদের বক্তব্য, ‘‘প্রধানমন্ত্রী নিজে চিনকে ক্লিনচিট ধরিয়ে দিয়েছিলেন ৷ সেই ক্লিনচিট এ বার প্রত্যাহার করা উচিত তাঁর ৷ দেশকে জানাতে হবে, কত দিনের মধ্যে 2020-র এপ্রিলের আগের পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনবেন ৷ দেপসাং হোক বা গোগরা উষ্ণ প্রস্রবন, ডিওবি সেক্টর হোক বা অরুণাচল প্রদেশ, উত্তর চাই আমাদের ৷ চিন ভারতের এলাকায় ঢোকেনি বলে সকলকে বিভ্রান্ত করার জন্য ক্ষমা চাইতে হবে প্রধানমন্ত্রীকে ৷’’

আরও পড়ুন:COVID Booster Dose : বাংলার করোনা যোদ্ধাদের জন্য দ্রুত বুস্টার ডোজ চেয়ে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে চিঠি

এর আগে, 2020 সালের জুন মাসে অরুণাচলে বিজেপি-রই লোকসভা সাংসদ পবন খেরা চিনা আগ্রাসন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদি, প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং এবং বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করকে চিঠি লিখেছিলেন ৷ সংসদে দাঁড়িয়েও অরুণাচলে চিনা বাহিনী সীমা লঙ্ঘন করেছে বলে কেন্দ্রকে সতর্ক করেন তিনি ৷ কিন্তু সেই সময়ও চিনা আগ্রাসনের কথা মানতে চায়নি কেন্দ্র ৷ তাতেই কেন্দ্রের অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন তুলছে কংগ্রেস ৷ তাদের দাবি, ড্রাগনের চোখরাঙানির সামনে যদি দেশের বিস্তীর্ণ এলাকা ছেড়ে দেওয়া হয়ে থাকে, সে ক্ষেত্রে দেশবাসীকে জবাব দিতে বাধ্য সরকার ৷ তা না করে এত দিন সকলকে বিভ্রান্ত করে এসেছে তারা ৷ তার জন্য ক্ষমা চাইতে হবে সরকারকে ৷

ভারত-চিন সীমান্ত সংঘাতের জেরে বিগত কয়েক বছর ধরেই উত্তপ্ত উপমহাদেশীয় রাজনীতি ৷ সেই নিয়ে সম্প্রতি কংগ্রেসে মিলিটারি অ্যান্ড সিকিয়োরিটি ডেভলপমেন্টস ইনভলভিং দ্য পিপিলস রিপাবলিক অব চায়না, 2021 নামের একটি রিপোর্ট জমা দেয় পেন্টাগন ৷ তাতে বলা হয়, এলএসি পেরিয়ে অরুণাচলের ভিতরে ঢুকে এসেছে চিন ৷ সেখানে মিগিতুন শহরের কাছে, সারি নদী বরাবর আস্ত গ্রাম গড়ে তুলেছে তারা ৷ যাতায়াতের জন্য নদী বরাবর পাকা রাস্তাও তৈরি করা হয়েছে ৷ সীমান্ত সংলগ্ন এলাকা থেকে লোক এনে বসবাসও করাচ্ছে ৷ প্রায় 100-র বেশি বাড়ি, এমনকি বহুতলও গড়ে তোলা হয়েছে ওই গ্রামে ৷ সেখানে প্রশিক্ষিত চিনা বাহিনী এবং তাতে শামিল তিব্বতি যুবকদের মোতায়েন করা হয়েছে ৷

আরও পড়ুন:Mukesh Ambani: দেশ ছাড়ছেন না আম্বানিরা, লন্ডনে কেনা সম্পত্তি ব্যবসারই অঙ্গ, জানাল রিলায়্যান্স

ABOUT THE AUTHOR

...view details