হায়দরাবাদ, 19 অক্টোবর: মল্লিকার্জুন খাড়গের (Mallikarjun kharge ) বয়স তখন মাত্র 7 । ছোট্ট ছেলেটা চোখের সামনে দেখেছিল মা আর বোনকে পুড়িয়ে মারছে হায়দরাবাদ নিজামের সেনা । জীবনের শুরুতে এহেন ভয়াবহ ঘটনার সাক্ষী হওয়া খাড়গের রাজনৈতিক জীবনের আগাগোড়া ছিল সংগ্রাম (Struggle has been the mantra of Mallikarjun Kharge ) । কংগ্রেস কর্মী থেকে প্রথমে বিধায়ক তারপর সাংসদ, আরও পরে লোকসভা এবং রাজ্যসভায় দলের নেতা এবং শেষমেশ দলের সর্বভারতীয় সভাপতি- মল্লিকার্জুন খাড়গের জীবন ওয়েরসিরিজের নাটকীয়তাকেও হেলায় হারাতে পারে । ছোটবেলার সেই ভয়াবহ ঘটনার পর বাবার সঙ্গে কর্নাটকের বিদার জেলার ভালকি তালুকের ভারাভট্টি গ্রাম ছেড়ে চলে যেতে হয় খাড়গেকে । দলিত পরিবারের সন্তান বুঝে গিয়েছিলেন সংগ্রাম ছাড়া তাঁর জীবনে আর কিছুই সত্যি নয়।
1972 সালটা খাড়গের জীবনে খুব গুরুত্বপূর্ণ। সেবারই গুরমিতকাল বিধানসভা কেন্দ্র থেকে প্রথমবার জয় পান এই অশীতিপর নেতা । 2008 সাল পর্যন্ত একটানা এই কেন্দ্রের বিধায়ক ছিলেন খাড়গে । কালবুর্গি জেলার এই সংরক্ষিত আসন ছেড়ে 2009 সালে চিত্তপুর লোকসভা থেকে সাংসদ হন । 2014 সালে গোটা দেশে কংগ্রেসের ভরাডুবির মধ্যেও নিজের গড় ধরে রাখেন খাড়গে । 2019 সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে কোনওদিন হারতে হয়নি তাঁকে । তবে 50 বছরে 8 বার বিধায়ক এবং 2 বার সাংসদ হলেও কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রীর আসন অধরাই থেকে গিয়েছে খাড়গের কাছে । শেষমেশ কংগ্রেস সভাপতি পদে বসলেন দলিত খাড়গে ।
Mallikarjun Kharge:24 বছর বাদে নতুন সভাপতি পেল কংগ্রেস, সাংগঠনিক নির্বাচনে জয়ী সোনিয়ার বিশ্বস্ত মল্লিকার্জুন খাড়গে
রাজনৈতিক জীবনে গান্ধি পরিবারের আস্থাভাজন থাকার চেষ্টা আজীবন করে গিয়েছেন তিনি । তারপরও কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রিত্ব কেন তাঁর কাছে আসেনি তার ব্যাখ্যা দিতে পারেননি অনেক রাজনৈতিক বোদ্ধাই । আটের দশকের মাঝামাঝি থেকে একাধিকবার কংগ্রেসের সরকার তৈরি হয়েছে রাজ্যে । সেখানে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পেলেও মসনদ থেকছে দূরেই । 2004 সালে কর্নাটকে কংগ্রেস সরকার তৈরি হওয়ার পর রাজনৈতিক মহলের একটা বড় অংশ মনে করেছিল এবার হয়ত খাড়গে মুখ্যমন্ত্রী হতে পারেন । কিন্তু জনতা দল (সেকুলার)-এর সঙ্গ নিয়ে সরকার চালানোর ভার শেষমেশ পরে ধরম সিংয়ের উপরেই । হাইকমান্ড মনে করেছিল খাড়গের থেকে তিনিই বেশি যোগ্য । ঠিক 9 বছর বাদে আরও একবার মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার সুয়োগ এসেছিল । সেবার কর্নাটকের ভার কার হাতে যাবে তা নির্বাচনের মাধ্যমে ঠিক করার সিদ্ধান্ত নেয় কংগ্রেস । একাধিক দাবিদার থাকায় বিধানসভায় দলের নেতা কে হবেন তা ভোটের মাধ্যমে বেছে নেন কংগ্রেস বিধায়করা । বাকিদের হারিয়ে জয়ী হন সিদ্দারামাইয়া ।
সবদেখে খুব স্বাভাবিকভাবেই মনে হতে পারে কেন বারবার একই ঘটনা ঘটেছে তাঁর সঙ্গে । কর্নাটকের জনবিন্যাস দেখলে অবশ্য একটা ধারনা পাওয়া যেতে পারে । দক্ষিণ ভারতের এই অন্যতম বড় রাজ্যের রাজনীতির মূল নিয়ন্ত্রক লিঙ্গায়েত এবং ভোক্কালিগ ব্রাহ্মণরা। সেথানে তফশিলি জাতির খাড়গের পক্ষে সর্বোচ্চ আসনে বসা মোটেই সোজা কথা নয়। আর তাই রাজনৈতিক জীবনে শুরু থেকেই সংগঠনে নিজেদ প্রভাব প্রতিপত্তি বিস্তারের কাজ করতে হয়েছে তাঁকে । প্রথমে কারখনার আইনি পরামর্শদাতা হিসেবে জীবন শুরু করা খাড়গে শ্রমিক সংগঠনেও নেতৃত্ব দিয়েছেন । আরও পরে 1969 সালে কংগ্রেসে যোগ দেন। কালুবর্গি শহরে সংগঠনের কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব আসে তাঁর কাঁধে ।
পরিসংখ্যানই বলে দিচ্ছে রাজনৈতিক জীবনের বেশিটাই বিধায়ক হিসেবে রাজ্যে কাটিয়েছেন খাড়গে । জাতীয় রাজনীতিতে তাঁর আত্মপ্রকাশ খুব বেশি দিন আগে হয়নি । তবে এরই মধ্যে তিনি নিজেকে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছেন বলেই মনে করে কংগ্রেসের একটা বড় অংশ। 2009 সালে লোকসভা নির্বাচনের আগে কংগ্রেস নেতৃত্ব বুঝতে পারে কর্নাটকে বিজেপির সংগঠন বাড়ছে । এমতাবস্থায় জয়ের সম্ভবনা বেশি এমন প্রার্থীদের খোঁজ শুর হয় । তাতেই অন্যদের পেছনে ফেলে প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে এগিয়ে যান খাড়গে । 2014 সালে কংগ্রেসের ইতিহাসে সবচেয়ে খারাপ ফল হয় । সেবারও নিজের আসন ধরে রাখেন খাড়গে । আর তাঁরই পুরস্কার হিসেবে লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতার পদের পাশাপাশি পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির দায়িত্বও তাঁকেই দেওয়া হয় । গান্ধি পরিবারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা সেসময় থেকেই আরও বাড়ে । পরে রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতাও হয়েছিলেন খাড়গে । ''এক নেতা এক পদ" নীতির কারণে কংগ্রেস সভাপতি নির্বাচনের আগে সেই পদ থেকে ইস্তফা দেন তিনি ।
দলিত শ্রেণির সামজিক ন্যায় থেকে শুরু করে রাজনৈতিক সমানাধিকারের লড়াই আজীবন লড়েছেন খাড়গে । ছেলে প্রিয়াঙ্ক একবার এই লড়াই সম্পর্কে একটি চমৎকার মন্তব্য করেন । তিনি বলেন," আদর্শের সঙ্গে কোনওরকম আপস না করে, নিজের সমস্ত সীমাবদ্ধতাকে ছাপিয়ে গিয়ে সাম্যের জন্য লড়াই বাবাকে আজকের জায়গায় এনেছে। '