নয়াদিল্লি, 1 অক্টোবর: হিন্দু ধর্ম নিয়ে নিজের মতামত প্রকাশ করলেন কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধি ৷ দুই পাতার এক নিবন্ধে রাহুল লিখেছেন, 'প্রকৃত হিন্দু ধর্ম হল সকল প্রকার কুসংস্কার ও ভয় থেকে মুক্ত হওয়া ৷ সত্যের সাগরে নিমজ্জিত হওয়া।' কংগ্রেস নেতা এক্স হ্যান্ডেলে তাঁর নিবন্ধটি শেয়ারও করেছেন ৷ এতে রাহুল বলেছেন যে 'সত্য এবং অহিংসাই একমাত্র পথ।' তিনি লিখেছেন, 'দুর্বলকে রক্ষা করাই হিন্দুর ধর্ম।' রাহুলের মতে হিন্দু ধর্মকে কয়েকটি বিশ্বাসের মধ্যে সীমাবদ্ধ করা যায় না ৷ এটি কোনও জাতি বা ভৌগলিক এলাকাতেও সীমাবদ্ধ হতে পারে না। রাহুল তাঁর প্রবন্ধে লিখেছেন, 'হিন্দুধর্ম শুধুমাত্র কয়েকটি সাংস্কৃতিক বিশ্বাসের মধ্যে সীমাবদ্ধ বলা হলে তার সঠিক ব্যাখ্যা হবে না। এটিকে একটি নির্দিষ্ট জাতি বা অঞ্চলের সঙ্গে বেঁধে রাখাও আদতে তার অপমান।'
'সত্যম শিবম সুন্দরম' শিরোনামে লেখা এই প্রবন্ধে রাহুল গান্ধি লিখেছেন, 'জীবন প্রেম ও আনন্দের, ক্ষুধা ও ভয়ের সমুদ্র ৷ আর আমরা সবাই তাতে সাঁতার কাটছি। আমরা এর সুন্দর অথচ ভয়ঙ্কর, শক্তিশালী এবং সদা পরিবর্তনশীল তরঙ্গের মধ্যে বেঁচে থাকার চেষ্টা করি। এই সাগরে প্রেম, আনন্দ এবং অপরিসীম সুখ যেমন আছে, সেখানে ভয়ও আছে। মৃত্যুর ভয়, ক্ষুধার ভয়, দুঃখের ভয়, লাভ-ক্ষতির ভয়, ভিড়ে হারিয়ে যাওয়ার ভয় এবং ব্যর্থ হওয়ার ভয়। জীবন এই সাগরে একটি সম্মিলিত এবং অবিরাম যাত্রা যার ভয়ঙ্কর গভীরতায় আমরা সবাই সাঁতার কাটছি। ভীতিকর কারণ আজ পর্যন্ত এই সাগর থেকে কেউ পালাতে পারেনি, পালানোও সম্ভব হবে না।'
এরপরই হিন্দু ধর্ম সম্পর্কে নিজের ব্যাখ্য়াও দিয়েছেন রাহুল ৷ তাঁর মতে, 'যে ব্যক্তি ভয়ের নীচে গিয়ে এই সাগরকে সততার সঙ্গে দেখার সাহস রাখে, সে একজন হিন্দু। হিন্দুধর্মকে শুধুমাত্র কয়েকটি সাংস্কৃতিক বিশ্বাসের মধ্যে সীমাবদ্ধ বলা হলে তা সঠিক হবে না ৷ এটিকে কোনও বিশেষ জাতি বা অঞ্চলের সঙ্গে বেঁধে রাখাও এর অপমান। হিন্দুধর্ম হল ভয়ের সঙ্গে নিজের সম্পর্ক বোঝার জন্য মানবতা দ্বারা উদ্ভাবিত একটি পদ্ধতি। এটি সত্যকে গ্রহণ করার একটি উপায়। এই পথটি কারও নয়, তবে যারা এটিতে হাঁটতে চায় তাদের জন্য এটি সর্বদা সঠিক।'
আরও পড়ুন: সোশাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সারের সঙ্গে ঝাঁটা হাতে আবর্জনা পরিষ্কার মোদির
রাহুল গান্ধির দাবি, একজন হিন্দু উদারভাবে তার অস্তিত্বের সমস্ত পরিবর্তনকে সহানুভূতি এবং মর্যাদার সঙ্গে গ্রহণ করে ৷ তিনি লিখেছেন, 'কারণ সে জানে আমরা সবাই এই জীবনের সাগরে ভাসছি। তিনি এগিয়ে অস্তিত্বের জন্য সংগ্রামরত সমস্ত প্রাণীকে রক্ষা করেন। এমনকী দুর্বলতম উদ্বেগ এবং কণ্ঠহীন কান্নার প্রতিও তিনি সতর্ক থাকেন। দুর্বলকে রক্ষা করাই তার ধর্ম। তাঁর ধর্ম হল পৃথিবীর সবচেয়ে অসহায় আর্তনাদ শোনা এবং সত্য ও অহিংসার শক্তির মাধ্যমে সমাধান করা।' এখানেই শেষ নয়, রাহুল আরও লিখেছেন, 'একজন হিন্দু তার ভয়কে গভীরভাবে দেখার এবং সেগুলি গ্রহণ করার সাহস রাখে। জীবনের যাত্রায় সে ভয়ের শত্রুকে বন্ধুতে রূপান্তর করতে শেখে। ভয় তাকে কখনই পরাভূত করে না, বরং এটি একটি ঘনিষ্ঠ বন্ধু হয়ে ওঠে ৷ এবং তাকে সামনের পথ দেখায়। একজন হিন্দুর আত্মা এতটা দুর্বল নয় যে তার ভয়ের প্রভাবে সে কোনও প্রকার রাগ, ঘৃণা বা প্রতিশোধের মাধ্যম হয়ে ওঠে।'