নয়াদিল্লি, 3 ডিসেম্বর:চার রাজ্যের বিধানসভা ভোটের ফলের দিনই লোকসভা ভোটের দামামা বাজিয়ে দিলেন খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ৷ একই সঙ্গে, তিন রাজ্যের ভোটে বিপুল জয়ের পর আত্মবিশ্বাসী প্রধানমন্ত্রী সাফ জানিয়ে দিলেন, এই তিন রাজ্যের ভোটের ফল থেকেই স্পষ্ট 2024 সালে ফের হ্যাটট্রিক করতে চলেছে বিজেপি ৷ অর্থাৎ, আগামী বছর লোকসভা ভোটে ফের মানুষের বিপুল রায় নিয়ে তৃতীয়বারের জন্য কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসছে বিজেপি ৷ এদিন দিল্লিতে বিজেপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেন, "আজকের এই হ্যাটট্রিক, চব্বিশের হ্যাটট্রিকের গ্যারান্টি ৷"
কিন্তু কোন ফর্মুলায় বিজেপি তিন রাজ্যেই বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় এল, বিরোধী বিশেষ করে কংগ্রেস কেনই বা নিজের গড় ধরে রাখতে ব্যর্থ হল, ভোটের ফল বেরোতে এখন এই প্রশ্নই কার্যত ঘুরপাক খাচ্ছে রাজনৈতিক মহলে ৷ ভোট বিশ্লেষকদের একাংশের মতে, বিজেপি-বিরোধী ছোট আঞ্চলিক দল, কংগ্রেস ভেঙে তৈরি হওয়া দল, এমনকী বিজেপি বিরোধী জোট 'ইন্ডিয়া'র শরিকদের কাউকে ভোটের ময়দানে এক ছটাক জমিও এই পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে ছাড়েনি কংগ্রেস। গণনার ফলে সেই প্রভাবই পড়েছে ব্যাপক হারে। অনেক আসনেই ভোট কাটাকুটিতে বাজিমাত করেছে বিজেপি। বিশেষত মধ্যপ্রদেশের বুন্দেলখণ্ড-সহ উত্তরপ্রদেশ লাগোয়া অংশে সমাজবাদী পার্টির প্রার্থীরা ব্যাপক ভোট কেটেছে কংগ্রেসের ৷ বিশ্লেষকদের দাবি, এই অংক যদি বজায় থাকে তবে আগামী লোকসভা ভোটে 'ইন্ডিয়া' জোটের জন্য সিঁদুরে মেঘ অপেক্ষা করে আছে ৷
তবে শুধু ভোট কাটাকুটির জেরেই এই বিশাল ম্যান্ডেট পাওয়ায় যে সহজ নয়, তাও মেনে নিচ্ছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা ৷ কংগ্রেসের দাদাগিরির পাশাপাশি 'মোদি ম্য়াজিক' বা 'মোদি হ্যায় তো মুমকিন হ্যায়'-এর মতো আপ্তবাক্য সত্যিই প্রতিফলিত হয়েছে চার রাজ্যের ভোটে ৷ আর যার জোরে খোদ প্রধানমন্ত্রী আসন্ন লোকসভায় দলের বিপুল জয়ের ক্ষেত্রে চরম আশাবাদী ৷ মূলত তিন ক্ষেত্রে বিরোধীদের লক্ষ্যবস্তু ছিল বিজেপি ৷ প্রথমত, জাত ভিত্তিক সমীক্ষা, দ্বিতীয়ত সমাজে পিছিয়ে পড়া শ্রেণির মানুষের উন্নয়ন এবং মহিলাদের সশক্তিকরণ ৷ আর এই তিন ক্ষেত্রেই যে বিরোধী দলের কার্যত ভরাডুবি হয়েছে, তা ভোটের ফলেই স্পষ্ট ৷ বরং ঘুরিয়ে এই তিন ইস্যুকেই বিরোধীদের বিপক্ষে প্রচারে কাজে লাগিয়ে অনেকটাই ফায়দা তুলতে পেরেছে বিজেপি ৷ আর তারই প্রতিফলন এদিন সন্ধ্যায় শোনা গেল প্রধানমন্ত্রীর গলায় ৷
এদিন প্রধানমন্ত্রী মোদির প্রায় 40 মিনিটের বক্তব্যের অধিকাংশ জুড়েই ছিল নারী শক্তি এবং আদিবাসী-সহ অন্যান্য পিছিয়ে পড়া শ্রেণির মানুষের কথা ৷ বিরোধী কংগ্রেস-সহ 'ইন্ডিয়া' জোটকে তীব্র কটাক্ষ করলেও, তা ধরা ছোঁয়ার বাইরে যায়নি ৷ স্বাভাবিক ভঙ্গিতেই তিনি কংগ্রেসকে আক্রমণ করেছেন ৷ কিন্তু মহিলা সশক্তিকরণের প্রশ্নে বা জাতিগত বিষয়ে এদিন প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য ছিল অনেকটাই ধারালো ৷ তিনি বলেন, "নারী শক্তিকে বিশেষভাবে অভিনন্দন ৷ এই ভোটে নারী শক্তি এটা ঠিক করেই নিয়েছিল বিজেপির পতাকা ওড়াবই ৷ আর নারীরা যার সুরক্ষা কবচ হয়ে যায় তার কেউ ক্ষতি করতে পারে না ৷ বিজেপি নারী গরিমা, নারী সুরক্ষা, নারী সম্মানের সবচেয়ে বড় গ্যারান্টি ৷ নারী শক্তির বিকাশ বিজেপির বিকাশ মডেলের অন্যতম স্তম্ভ ৷ আপানাদের কাছে বিজেপি যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তা 100 শতাংশ পূরণ হবে ৷ আর এটা মোদির গ্যারান্টি ৷" সুতরাং এটা সাফ হয়ে গিয়েছে, আগামী লোকসভা ভোটে বিজেপি মূলত মহিলা, যুব, কৃষক এবং আদিবাসী-সহ পিছিয়ে পড়া বর্গের মানুষদের ঢাল করেই ময়দানে নামতে চলেছে ৷
অন্যদিকে, এই তিন রাজ্যের ফল থেকে স্পষ্ট মোদি ম্যাজিক একেবারে ভ্যানিশ হয়ে যায়নি ৷ বিশেষত মধ্যপ্রদেশে, যেখানে অ্য়ান্টি ইনকামবেন্সি চরম পর্যায়ে রয়েছে বলে ওয়াকিবহল মহল দাবি করেছিল ৷ সেখানেও ভোটের ফলে প্রমাণিত যে, আদতে মুখ ছিলেন নরেন্দ্র মোদিই ৷ রাজনৈতিক মহলের ব্যাখ্যা, সাধারণত মুখকে সামনে রেখে ভোটের লড়াইয়ে নামার প্রবণতা বিজেপির জন্মলগ্ন থেকেই ৷ গত কর্ণাটক ভোটেও তার ব্যতিক্রম হয়নি ৷ কিন্তু সে রাজ্যে হারের পর এই পাঁচ রাজ্যেই কোনও মুখ্যমন্ত্রী মুখকে সামনে রেখে নির্বাচনী ময়দানে নামেনি বিজেপি ৷ সব ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী মোদি নিজেই মুখ হয়ে দাঁড়িয়েছেন ৷ এটা লোকসভা ভোটের আগে তাঁর নিজের কাছেও ছিল কার্যত সেমিফাইনাল ম্যাচ ৷ আর তাতে সম্পূর্ণ সফলভাবে উতরেও গিয়েছেন নরেন্দ্র মোদি ৷ উলটে যে ছত্তিশগড় এবং রাজস্থানে কংগ্রেসের সরকার ছিল, সেখানেও ব্য়াপক হারে ভোট পেয়েছে বিজেপি ৷ এরপরই প্রধানমন্ত্রীকে বলতে শোনা গিয়েছে, "এই ভোটের পরিণাম শুধু এই চার রাজ্যের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না ৷ এই পরিণাম বহুদূর যাবে ৷ এই ফল ভারতের বিকাশের ভরসাকে আরও শক্তপোক্ত করবে ৷ স্বাধীনতার অমৃতকালে বিকশিত ভারতের যে সংকল্প আমরা নিয়েছি তাতে মানুষের আশীর্বাদ পাচ্ছি ৷ বিজেপি সেবা এবং সুশানের নয়া মডেল দেশের সামনে রেখেছে ৷ বিজেপি সরকার শুধু নীতি তৈরি করে না ৷ তা যাতে প্রতিটি মানুষের কাছে পৌঁছয় তাও লক্ষ্য রাখে ৷"