মুম্বই, 18 জুন : গত বছর 24 মার্চ করোনা সংক্রমণ রুখতে নরেন্দ্র মোদির সরকার দেশ জোড়া লকডাউন ঘোষণা করেছিল ৷ লকডাউনের আকস্মিক সেই সিদ্ধান্তের প্রভাব দেশের অধিকাংশ মানুষের উপর পড়েছিল ৷ সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছিলেন যাঁরা দারিদ্র সীমার নিচে বসবাস করেন ৷ জীবন অতিবাহের জন্য জীবিকা হারানো থেকে অসুরক্ষিত কাজের পরিবেশ, অনাহার এবং শোষণের মতো ঘটনা সেই থেকে আজও ভারতের বিভিন্ন জায়গায় রোজকার সাধারণ ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে ৷
সেই সব মানুষগুলো, বিশেষ করে আশা কর্মী, সাফাই কর্মচারী, দীন মজুরি করা শ্রমিক, ট্রান্সজেন্ডার, যৌনকর্মী ৷ এরা সবাই একটি ওয়েব সেমিনারে তাঁদের সেই সময় থেকে চলে আসা সমস্যার কথা তুলে ধরলেন ৷ যার আয়োজন করেছিল বহুজন ইকনমিকস ৷ ভারতের বিভিন্ন প্রান্তের অর্থনীতির পড়ুয়ারা মিলে এটি তৈরি করেছেন ৷ যা গতবছর তৈরি করা হয়েছিল অর্থনীতিতে জাতি-ভেদ দূর করার উদ্দেশ্য ৷ সেই সঙ্গে বিশ্ব অর্থনীতিতে অনেক একসঙ্গে অংশ নেওয়া এবং প্রতিনিধিত্বের সুযোগ করে দেওয়াও উদ্দেশ্য এই বহুজন ইকনমিকস’র ৷ ওই ওয়েব সেমিনারে বহুজন ইকনমিকস’র একটি দল জানিয়েছে, তাঁদের সবচেয়ে বড় স্বপ্ন হল আরও বেশি করে দলিত এবং আদিবাসী মহিলাদের অর্থনীতিবিদ তৈরি করা ৷
সেখানেই মধ্যপ্রদেশের ইন্দোর শহরের এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার প্রতিনিধি নীতীন লাহোর সেখানকার সাফাই কর্মীদের দুর্দশার কথা তুলে ধরেছেন ৷ তিনি জানিয়েছেন, কেন্দ্রের স্বচ্ছ-ভারত অভিযানের আওতায় ইন্দোর অন্যতম একটি স্বচ্ছ শহর ৷ কিন্তু, সেখানকার সাফাই কর্মীদের উপর দিনের পর দিন শোষণ চলে আসছে ৷ তাঁর কথায়, লাগাতার 25-30 বছর ধরে সাফাইয়ের কাজ করেও, বহু সাফাই কর্মী সেখানে নৈমিত্তিক হিসেবে রয়ে গিয়েছেন ৷ ইন্দোরের মতো জায়গায় সেখানকার সাফাই কর্মীরা প্রতিনিয়ত নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন ৷ বিশেষ করে করোনা অতিমারির সময়েও জেলা প্রশাসন তাঁদের সুরক্ষার জন্য কোনও ব্যবস্থা নেয়নি বলে অভিযোগ করেছেন নীতীন লাহোর ৷ আর মাসের শেষে এই সাফাই কর্মীরা 11 হাজার টাকা বেতন পান ৷
তবে, শুধু সাফাই কর্মীরা নন, গত বছরের লকডাউন এবং বর্তমানে রাজ্য ভিত্তিক লকডাউনে তাঁদের পরিবারের সদস্যরাও চরম অবহেলার শিকার হচ্ছেন ৷ নীতীন লাহোর জানিয়েছেন, প্রথম লকডাউনের আগে পর্যন্ত সাফাই কর্মীদের সন্তানরা স্কুলে পড়াশোনা করতে যেত ৷ আজ পরিস্থিতি এমন জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে যে, তাঁদের সন্তানদের ঝাড়ু হাতে রাস্তা পরিস্কার করতে দেখা যাচ্ছে ৷ যা খুবই হতাশাজনক বলে উল্লেখ করেছেন তিনি ৷ এ তো গেল সাফাই কর্মীদের দুর্দশার কথা ৷ হরিয়ানার আশা কর্মীদের অবস্থাও প্রায় একই রকম ৷