লখনউ, 11 নভেম্বর: আদালতে ক্লিনচিট পেয়ে গিয়েছেন । কিন্তু পুনর্বহাল তো দূর, বরং চাকরি থেকে এবার বরখাস্ত করা হল উত্তরপ্রদেশের গোরখপুরের বাবা রাঘবদাস মেডিক্যাল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের শিশু চিকিৎসক কাফিল খানকে । রাজ্যের স্বাস্থ্যশিক্ষা বিভাগের প্রধান সচিব অলোক কুমার তেমনটাই জানিয়েছেন । কাফিল যদিও এখনও লিখিত চিঠি হাতে পাননি । তবে এবার আদালতে যাবেন বলে জানালেন তিনি ।
বৃহস্পতিবার টুইটারে কাফিল লেখেন, ‘সরকার অক্সিজেন সিলিন্ডারের বকেয়া মেটায়নি বলে 63টি শিশু মারা যায় ৷ 8 চিকিৎসক এবং কর্মী সাসপেন্ড, এর মধ্যে 7 জন বহাল ৷ গাফিলতি নিয়ে তদন্তে এবং আদালতে ক্লিনচিট পাওয়া সত্ত্বেও এখন বরখাস্তই রয়েছি ৷ মা-বাবারা ন্যায় বিচারের জন্য ছুটছেন ৷ ন্যায় ? অন্যায় ? আপনারাই সিদ্ধান্ত নিন ৷’
2017 সালে গোরখপুরের হাসপাতালে অক্সিজেনের অভাবে 63 শিশুর মৃত্যু হয় । হাসপাতালের তরফে জানানো হয়, সরকার বকেয়া টাকা না মেটানোয়, অক্সিজেন সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছিল সংশ্লিষ্ট সংস্থা । সেই সময় নিজের ক্লিনিক থেকে অক্সিজেন সিলিন্ডার আনিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন কাফিল ।
আরও পড়ুন:Mumbai Drug Case : ফড়নবীশকে মানহানির নোটিস পাঠালেন নবাব মালিকের জামাই
তাঁকে সমর্থন করে কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধি বঢরা লেখেন, ‘কাফিল খানকে বরখাস্ত করে রাখা উত্তরপ্রদেশ সরকারের কুচিন্তারই প্রতিফলন ৷ ঘৃণার নীতি থেকে সরকার ওঁকে তাড়াতে চাইছে ৷ সরকারের মনে রাখা উচিত যে, কেউ সংবিধানের ঊর্ধ্বে নয় ৷ ন্যায়ের এই লড়াইয়ে কংগ্রেস ওঁর পাশে আছে এবং থাকবে ৷’
কিন্তু বাঁচার আশায় হাসপাতালে যাওয়া শিশুদের মৃত্যুমিছিল ঘিরে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে কাফিল খানকেই সাসপেন্ড করে উত্তরপ্রদেশ সরকার। সঙ্কট জেনেও সময়ে পদক্ষেপ করেননি বলে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয় । গ্রেফতার করে জেলবন্দিও করা হয় তাঁকে । যদিও প্রথম থেকেই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছিলেন কাফিল । বারবার সমস্যার কথা জানানো সত্ত্বেও সরকার সাড়াশব্দ করেনি বলে পাল্টা অভিযোগ করেন তিনি । তাঁকে বলির পাঁঠা করা হচ্ছে বলে দাবি করেন ।
তা সত্ত্বেও আট মাস জেলে কাটাতে হয় তাঁকে । গাফিলতির কোনও প্রমাণ না পেয়ে এরপর এলাহাবাদ হাইকোর্ট তাঁর জামিন মঞ্জুর করে । 2019 সালে কাফিল জানান, সরকারি রিপোর্টেও তাঁর উপর থেকে সমস্ত অভিযোগ প্রত্যাহার করা হয়েছে । তা সত্ত্বেও রাজ্য সরকারের তরফে ক্লিনচিট মেলেনি । বরং সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের বিরোধিতা করায় তিনি সরকারের রোষে পড়েন বলে দাবি করেন কাফিল ।
আরও পড়ুন:MPLAD restore : পুনরায় সাংসদ তহবিলে অর্থের জোগান চালু করল কেন্দ্র
2019 সালে আলিগড় মুসলিম ইউনিভার্সিটিতে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের বিরোধিতায় ভাষণ দেন কাফিল । তার জেরে তাঁর বিরুদ্ধে উস্কানিমূলক মন্তব্যের মামলা দায়ের হয় । যদিও এলাহাবাদ হাইকোর্ট সেই মামলা খারিজ করে । তার পরেও চাকরিতে পুনর্বহাল করা হয়নি তাঁকে । এনিয়ে একাধিক বার রাজ্য সরকারকে চিঠি দিয়েও লাভ হয়নি, তাঁর পদত্যাগপত্রও গৃহীত হয়নি বলে জানিয়েছেন কাফিল । ফলে অন্যত্র কাজে যোগও দিতে পারছেন না তিনি । তাতে পরিবারে সঙ্কট দেখা দিলেও, আগামী দিনেও আইনি লড়াই চালিয়ে যেতে বদ্ধপরিকর কাফিল ।