হায়দরাবাদ:
• ক্ষয়িষ্ণু গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ
15 সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস ! ভারতীয় সংসদের উভয় কক্ষেই 18 থেকে 22 সেপ্টেম্বর পাঁচ দিনের বিশেষ অধিবেশন । কেন্দ্রীয় সরকার বলেছে যে, অমৃতকালের মধ্যে সংসদের এই অধিবেশন বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ ৷ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দেশের অভ্যন্তরে এবং এর বাইরে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বলেছেন যে, গণতন্ত্র "আমাদের চেতনায়... এবং আমাদের শিরায় প্রবাহিত...৷"
তিনি জোর দিয়ে বলেছেন যে ভারত প্রকৃতপক্ষে গণতন্ত্রের জননী, এবং গণতন্ত্র কেবল একটি কাঠামোকে বোঝায় না, সমতার চেতনাকেও বোঝায় । অমৃতকালের সূচনার সন্ধিক্ষণে ভারতের সংসদীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা বাস্তবে কতটা প্রকৃত সে সম্পর্কে আত্মদর্শন করার জন্য এটি উপযুক্ত উপলক্ষ হতে পারে । আমরা কি সত্যিই আমাদের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলিকে "অন্তর্ভুক্তিমূলক বৃদ্ধির জন্য একসঙ্গে সংগ্রাম করার" (সবকা সাথ, সবকা বিকাশ) জন্য ব্যবহার করছি যেমনটি আমাদের নেতারা বারবার বলেছেন ?
• দুটি গণতান্ত্রিক পতন
রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে, ভারত তার স্বাধীনতার পর থেকে দুটি উল্লেখযোগ্য গণতান্ত্রিক পতন প্রত্যক্ষ করেছে, প্রথমত, জুন 1975 থেকে মার্চ 1977 পর্যন্ত 21 মাসের জরুরি অবস্থা; এবং দ্বিতীয়ত, 2014 সাল থেকে এনডিএ-এর শাসনকালে শুরু হওয়া একটি সমসাময়িক পতন । বিশ্বজুড়ে গণতন্ত্র-পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলি সমসাময়িক ভারতে জরুরি অবস্থাকে গণতান্ত্রিক পতন হিসেবে চিহ্নিত করেছে, যখন ইন্দিরা গান্ধি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রায় সমস্ত গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান বিলুপ্ত করেন, নির্বাচন নিষিদ্ধ করেন, বিরোধী নেতাদের গ্রেফতার করেন, স্বাধীন গণমাধ্যমকে নীরব করেন এবং তিনটি সাংবিধানিক সংশোধনী পাশ করেন যা দেশের আদালতের ক্ষমতাকে দুর্বল করে দিয়েছে ।
• 'নির্বাচনী স্বৈরাচার' হিসাবে ভারতের অবনমন
বিভিন্ন গণতন্ত্র-পরীক্ষকদের মূল্যায়নমূলক গবেষণার ফলাফলগুলি নির্দেশ করে যে, আজ ভারত পূর্ণ গণতন্ত্র এবং সম্পূর্ণ স্বৈরাচারের মধ্যে একটি নিম্ন অবস্থানে রয়েছে । উদাহরণস্বরূপ, মার্কিন সরকারের অর্থায়নে পরিচালিত একটি অলাভজনক সংস্থা ফ্রিডম হাউসের বার্ষিক প্রতিবেদনে ভারতকে 2023 সালে একটি 'আংশিকভাবে মুক্ত' দেশ হিসাবে টানা তৃতীয় বছরের জন্য ডাউনগ্রেড করা হয়েছে ।
বিশ্বের অনেক অংশে স্বৈরাচারীকরণের প্রবণতা 2020 সালে তীব্র হতে শুরু করে । ভি-ডেম (সুইডেনের গোথেনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভ্যারাইটিজ অফ ডেমোক্রেসি ইনস্টিটিউট) রিপোর্টে 2022-এর শেষে রেকর্ড সংখ্যক 42টি দেশকে 'স্বৈরাচারী' হিসাবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে । ভারতেও দেখা দেয় সেই প্রবণতা ৷
প্রকৃতপক্ষে, 2023 ভি-ডেম রিপোর্ট ভারতকে শুধুমাত্র নির্বাচনী স্বৈরাচার হিসাবে উল্লেখ করেনি, 'গত 10 বছরের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ স্বৈরাচারীদের মধ্যে একটি' হিসাবেও উল্লেখ করেছে । সামগ্রিকভাবে, 2022 সালের শেষ নাগাদ বিশ্বের জনসংখ্যার 72% (5.7 বিলিয়ন মানুষ) স্বৈরাচারে বাস করত বলে নিশ্চিত করেছে ভি-ডেমের রিপোর্ট ৷
আরও পড়ুন:আমাদের ভূমির অধিকার কি সুরক্ষিত ?