পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / bharat

রাকেশকে নাগালে পেতে অপারেশন কীভাবে?

রাকেশের গ্রেপ্তারি বাংলার রাজনীতিতে এক নতুন অধ্য়ায় বলে মনে করছেন অনেকে। কৈলাশ ঘনিষ্ঠ ওই নেতার বিরুদ্ধে বেশ কিছু অভিযোগ থাকলেও প্রমাণের অভাবে ধরতে পারছিল না পুলিশ। এবার নাগালে পেল লালবাজার।

How lalbazar arrested Rakesh Singh
রাকেশ সিং

By

Published : Feb 24, 2021, 1:09 PM IST

কলকাতা, 24 ফেব্রুয়ারি : খেলাটা শুরু হয়েছিল দুপুরে। রাতে শেষ করেই ছাড়ল লালবাজার। রাকেশ সিংকে গ্রেপ্তার করে।

দিনভর উত্তেজনা। "বাবা বাড়িতে নেই। দিল্লি গেছে।" বলেছিল রাকেশের দুই ছেলে। বাড়িতে ঢুকতে বাধা। অবশেষে গতরাতে গলসি থেকে রাকেশকে গ্রেফতার করল পুলিশ। তারপর শুরু রাজনৈতিক চাপানউতর। বিজেপির দাবি, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা। পালটা দিয়েছে তৃণমূল। বলেছে, অন্য়ায় করলে শাস্তি হবেই।

গত 18 ফেব্রুয়ারি মাদক কাণ্ডে গ্রেপ্তার করা হয় বিজেপি নেত্রী পামেলা গোস্বামীকে। তিনি দাবি করেন, রাকেশ সিং তাঁকে ফাঁসিয়েছেন। পুরো ঘটনার জন্য় দায়ি রাকেশ। এরপর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য় রাকেশকে নোটিস পাঠায় লালবাজার। গতকাল দেখা করতে বলা হয়েছিল লালবাজারে। কিন্তু অনুপস্থিত ছিলেন তিনি। জানিয়েছিলেন, বিশেষ কাজে দিল্লি যাবেন তাই যেতে পারছেন না। কিন্তু পুলিশ নাছোরবান্দা। শ-খানেক পুলিশ নিয়ে রাকেশের বাড়িতে পৌঁছে যান লালবাজারের গোয়েন্দারা। প্রথমে পুলিশকে বাড়িতে ঢুকতে বাধা দেয় রাকেশের ছেলে। পরে অবশ্য় ঢুকতে দেওয়া হয়। সেখানে রাকেশকে না পেলেও রাতের দিকে গলসি থেকে গ্রেফতার হয়।

কীভাবে গ্রেফতার করা হল? পুলিশ জানতেই বা পারল কীভাবে?

এখনও পর্যন্ত এবিষয়ে পুলিশ কোনও মুখ খোলেনি। কিন্তু সূত্রের মাধ্য়মে জানা গেছে বেশ কিছু তথ্য়। রাকেশ সকালের দিকেই তাঁর নিজের একটি বিলাসবহুল গাড়িতে করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন। সঙ্গে ছিল আরও একটি গাড়ি। যেখানে ছিল তাঁর নিরাপত্তারক্ষীরা। আশঙ্কা করেছিলেন, বিমানবন্দরে তাঁকে ধরতে পারে পুলিশ। তাই বিমানবন্দর যাননি। তৈরি ছিল প্ল্য়ান বি। সটান 2 নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে পৌঁছে যান বর্ধমান। কৈলাশ ঘনিষ্ঠ ওই নেতা একজনের বাড়িতে বেশ কিছুক্ষণ ছিলেন। দিনের আলো কমতেই সেখান থেকে বেরিয়ে পড়েন ।

আরও পড়ুন- মাদককাণ্ডে গলসি থেকে গ্রেপ্তার রাকেশ সিং

এদিকে পুলিশ রাকেশের বাড়িতে ঢুকে তল্লাশি অভিযান চালাচ্ছে। সেইসময়ই তাঁরা রাকেশের মোবাইল নম্বর ট্র্য়াক করে দেখেন তিনি জাতীয় সড়কের উপর রয়েছেন। লালবাজার থেকে মুহূর্তের মধ্য়ে খবর দেওয়া হয় জাতীয় সড়কের ধারে থাকা বিভিন্ন থানায় এবং বর্ধমান থানায়। বর্ধমানের পালসিট টোল প্লাজা, উল্লাস সিগন্য়াল, নবাবহাট মোড়, গলসি, বাঁশকোপা সহ বিভিন্ন এলাকায় নাকা চেকিং শুরু হয়। একটি সূত্র জানাচ্ছে, প্রতিটি গাড়ি ধরে ধরে চেকিং শুরু করে পুলিশ। সেসময় গলসি মোড়ের কাছে একটি গাড়িকে আটকায় পুলিশ। যার মধ্য়ে ছিলেন বেশ কয়েকজন নিরাপত্তারক্ষী। সেই গাড়ির সামনেই ছিল একটি রাকেশের বিলাসবহুল গাড়ি। ছিলেন রাকেশও। পুলিশ আর গাড়িটিকে এগোতে দেয়নি। খবর দেওয়া হয় লালবাজারে। রাতেই লালবাজার থেকে আট অফিসার চলে যান গলসি। করা হয় এফআইআর। গ্রেফতার করে রাতেই নিয়ে আসা হয় কলকাতায়।

কী পরিকল্পনা ছিল রাকেশের?

পুলিশ এবিষয়ে কিছু জানায়নি। রাকেশ সংবাদমাধ্য়মে আগেই জানিয়েছিল তিনি দিল্লি যাবেন বিশেষ কাজে। তবে পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, রাজ্য় ছাড়ার প্ল্য়ান ছিল রাকেশের। বিমানে করে পালালে পুলিশ ধরতে পারে। তাই গাড়ি নিয়েই পালাতে চেয়েছিল। সে ভেবেছিল, অন্ডাল পেরলেই পুলিশ আর নাগাল পাবে না। আর সালানপুর পেরোলেই তা ঝাড়খন্ড পুলিশের অন্তর্গত। গলসির যেখান থেকে রাকেশকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তার থেকে মাত্র 1ঘণ্টার মধ্য়ে পৌঁছে যাওয়া সম্ভব সালানপুর। সেখানেই বাংলা ঝাড়খন্ড সীমান্ত।

আরও পড়ুন- কে এই রাকেশ সিং ?

এত উত্তাপ, কিন্তু কে এই রাকেশ সিং?

ত্রাস বললে কম বলা হয় রাকেশকে। এমনই বলছেন অনেকে। উত্থান কংগ্রেসের হাত ধরে। বাম আমলে বার বার শাসকের বিরুদ্ধে পথে নেমে গ্রেপ্তার হতে হয়েছে তাঁকে। গণ্ডগোল পাকানো, ভয় দেখানো, মারধর, তোলাবাজি সবকিছু অভিযোগই রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। 2019 সালের 18 মে খিদিরপুরের অরফ্যানগঞ্জ বাজারে দুই পুলিশকর্মীকে মারধরের ঘটনায় নাম উঠে আসে রাকেশের। এরপর সেই ঘটনায় 5জুন কলকাতা বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তার করা হয় তাঁরে। কাজে বাধা দিয়ে মারধর করে খুনের চেষ্টার অভিযোগ রয়েছে। এর আগে ২০১৫ সালে হেয়ার স্ট্রিট থানার একটি মামলায় কোর্টে চত্বরেই তদন্তকারী অফিসারকে হেনস্থা ও ফাইল কেড়ে নিয়ে ছিঁড়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল তাঁর বিরুদ্ধে। সেই ঘটনায় জেল হয় রাকেশের। এরপর বিদ্য়াসাগরের মূর্তি ভাঙা এবং অমিত শাহের রোড শোতে ঝামেলা পাকানোর জন্য়ও নাম জড়ায়। যদিও সব ক্ষেত্রেই নিজের দোষ অস্বীকার করেন তিনি। তাঁর একটাই বক্তব্য়, "বিরোধীদের চক্রান্ত।" এইসব ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই মাদক পাচার কাণ্ডে নাম জড়িয়ে পড়ল রাকেশের।

বেশ কয়েকবার রাকেশকে গ্রেপ্তার করা হলেও জামিন পেয়ে যান তিনি। এবং বেশ কয়েকবার তাঁকে গ্রেফতার করা যায়নি প্রমাণের অভাবে। এবার দেখার বিষয় রাকেশের বিরুদ্ধে কতদূর যেতে পারে পুলিশ।

ABOUT THE AUTHOR

...view details