নয়াদিল্লি, 18 নভেম্বর: ধর্ম এবং রাজনীতিকে বরাবর আলাদা রাখার পক্ষেই সওয়াল করতে দেখা গিয়েছে তাঁকে ৷ তার জন্য নেটমাধ্যমে তীব্র কটাক্ষের মুখেও পড়তে হয়েছে তাঁকে ৷ কিন্তু নিজের অবস্থানে অনড় কংগ্রেস সাংসদ শশী থারুর ৷ তাঁর সাফ যুক্তি, হিন্দু ধর্ম এবং হিন্দুত্ববাদ, দু’টি সম্পূর্ণ আলাদা বিষয় ৷ রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করতে দু’টিকে এক বলে প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করছে শাসক দল বিজেপি ৷
বৃহস্পতিবার নিজের লেখা ‘প্রাইড, প্রেজুডিস এবং পান্ডিত্রি’ বইটি প্রকাশ করেন তারুর ৷ সেখানে ইটিভি ভারতের মুখোমুখি হয়ে গেরুয়া শিবিরকে একহাত নেন ৷ বলেন, ‘‘হিন্দু ধর্ম হল অত্যন্ত ব্যক্তিগত ধর্মবিষয়, যার অর্থ নিজের মধ্যে সত্যকে আবিষ্কার করা ৷ একই সঙ্গে নিজের সত্যর পাশাপাশি, অন্যের সত্যকেও স্বীকার করে নেওয়া ৷ পারস্পরিক সহাবস্থান রেখে চলা ৷ বিভিন্নতাকে গ্রহণ করাই হিন্দু ধর্মের মৌলিক নীতি ৷’’
হিন্দু ধর্ম আর হিন্দুত্ববাদকে আলাদা করে দেখার পক্ষে তারুরে যুক্তি, ‘‘হিন্দুত্ববাদ কিন্তু একেবারেই আলাদা ৷ এটা একটা রাজনৈতিক মতাদর্শ ৷ বেদান্তের উদারতা এবং সমন্বয়ের বার্তাকে সরিয়ে রেখে, এই মতাদর্শ হিন্দু ধর্মের মহানুভবতাকে লঘু করে, সেটিকে ব্যাজ হিসেবে বুকে লাগিয়ে ঘোরার কথা বলে ৷ এই মতাদর্শ কখনও হিন্দু ধর্মের সমার্থক হতে পারে না ৷ এটা হিন্দু ধর্ম নয় ৷’’
আরও পড়ুন:Chinese Intrusion: অরুণাচলে ফের চিনের জমি দখলের ছবি ! কংগ্রেসের কটাক্ষেও নীরব মোদি
ধর্ম এবং রাজনীতি, দু’টোর মধ্যে কোনও সংযোগ না রাখার পক্ষেই সওয়াল করেন থারুর ৷ আর তাতেই বিজেপি এবং কেন্দ্রকে একহাত নেন তিনি ৷ থারুরের কথায়, ‘‘আমার মতে, ধর্মের সঙ্গে রাজনীতির কোনও সংযোগ নেউ ৷ রাজনীতিরও ধর্মের সঙ্গে কোনও সংযোগ না থাকাই উচিত ৷ ধর্ম হল আধ্যাত্মিকতার অনুসন্ধান করে চলা ৷ আজকের দিনে, আজকের সমাজে মানুষের জন্য ভাল জীবনের অনুসন্ধানই উদ্দেশ্য হওয়া উচিত রাজনীতির ৷ কিন্তু এমন একটা দল দেশে শাসন চালাচ্ছে, যারা সবেতে ধর্মকে জুড়তে চায়, আমার মতে যা অন্যায় ৷’’
অন্য ধর্মের মানুষের ধর্মবিশ্বাসে আঘাত হানতেই আজকের দিনে শাসকদল হিন্দুত্বকে ব্যবহার করছে বলেও অভিযোগ থারুরের ৷ তিনি বলেন, ‘‘হিন্দুত্ব খুবই বিভ্রান্তিকর একটি শব্দ ৷ এর মধ্যে হিন্দু বলে কিছু নেই ৷ স্বামী বিবেকানন্দ যে হিন্দু ধর্ম শিখিয়ে গিয়েছেন, তার সঙ্গে যোগ নেই এই হিন্দুত্বের ৷ হিন্দুত্ব একটি বিভেদমূলক রাজনৈতিক মতাদর্শ ৷ অন্য ধর্মের মানুষের বিরুদ্ধে এটিকে ব্যবহার করা হচ্ছে , যা হিন্দু ধর্ম কখনওি শেখায় না ৷ তাই আমার মনে হয়, হিন্দুত্বের বদলে ওরা সঙ্ঘ পরিবার হিসেবেই নিজেদের পরিচয় দিতে পারে এবং সঙ্ঘী ধর্ম নিয়েই কথা বলতে পারে ৷’’
এ প্রসঙ্গে সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের প্রসঙ্গ টেনে আনেন থারুর ৷ সাম্প্রতিক কালে যে ভাবে নরেন্দ্র মোদি এবং অমিত শাহদের বিরুদ্ধে প্যাটেলের রাজনৈতিক জীবনকে কংগ্রেসের থেকে আলাদা করে তাঁকে বঞ্চিতদের দলে শামিল করার অভিযোগ উঠেছে একাধিক বার ৷ সেই প্রসঙ্গে থারুর বলেন, ‘‘নিজের স্বার্থেই সর্দার প্যাটেলকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ব্যবহার করছেন মোদি ৷ কিন্তু উনি ভুলে যাচ্ছেন যে , সর্দার প্যাটেল ঐক্যবদ্ধ ভারতের প্রতীক ৷ মোদি যে মতাদর্শে বিশ্বাস করেন, প্যাটেল ছিলেন তার ঘোর বিরোধী ৷ তাই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থাকাকালীন নিজেই আরএসএস-কে নিষিদ্ধ করেছিলেন ৷ তা ছাড়া, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বা হিংসার সময় প্যাটেলের যা ভূমিকা ছিল, তা 2002 সালে মোদির ভূমিকার থেকে একেবারেই আলাদা ৷ তাই তুলনাই চলে না এখানে ৷’’
আরও পড়ুন:Jammu-Kashmir Encounter: সাহসিকতার পুরস্কার প্রাপকের ছেলে মৃত 'ভুয়ো এনকাউন্টারে', চাপের মুখে কাশ্মীরে তদন্তের নির্দেশ
খানিকটা ‘রাজধর্ম’ শেখানোর সুরেই প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে থারুর বলেন, ‘‘বর্তমান নেতৃত্ব সম্পর্কে একটা কথাই বলব, সরকারের শীর্ষে থাকা বা নিজেই সরকারে পরিণত হওয়ার অর্থ, দেশের সব মানুষের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করা ৷ শুধুমাত্র নিজের রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করা নয় ৷ পরের পাঁচ বছর বা তার বেশি যদি এ ভাবেই যদি একটি মতাদর্শকে সামনে রেখে চলা হয়, দেশের পক্ষে তা ভাল হবে না ৷ কারণ একটা মতাদর্শকে ভিত্তি কের ক্ষমতায় এসে, পাঁচ বছর বা তার বেশি সময় ধরে তা-রই প্রচার চালিয়ে যাওয়া, কখনওই দেশের পক্ষে শুভ হতে পারে না ৷ আজকের দিনে এটা একটা সমস্যা বলেই মনে হয় আমার ৷ কারণ এতে বিভাজনকারী একটি শক্তি তাদের রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির সুযোগ পেয়ে যায় , যা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক ৷’’
প্রকাশন সংস্থা আলেফ বুকস থেকে থারুরের নয়া বইটি বেরোচ্ছে ৷