পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / bharat

নির্বাচন কমিশন কি বিশ্বাসযোগ্যতা হারাচ্ছে ? - নির্বাচন কমিশন

সংবিধানের বিভিন্ন পদ্ধতিগুলি তখনই গুরুত্ব পাবে এবং তার কার্যকারিতা সঠিক প্রমাণিত হবে, যখন এমন কোনও ব্যক্তির দ্বারা তা পরিচালিত হবে, যিনি সাংবিধানিক মূল্যবোধের সঙ্গে কোনও মূল্যেই আপস করবেন না ৷

ecs-credibility-overclouded
ecs-credibility-overclouded

By

Published : Apr 15, 2021, 2:33 PM IST

ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর কথা আজও সমান ভাবে গ্রহণযোগ্য । যিনি দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলেছিলেন, নির্বাচনে চূড়ান্ত পদ্ধতি অবলম্বন করে জয়, মোটেই বিজয় নয় । রাজনৈতিক দলগুলি আইন দ্বারা নির্ধারিত নীতি লঙ্ঘণ করার জন্য একে অপরের সঙ্গে লড়াই করছে, এবং এ কারণে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধগুলি মারাত্মক ভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয় । তামিলনাড়ু, পুদুচেরি, কেরালা এবং অসমে ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে । পশ্চিমবঙ্গে এ মাসের 29 তারিখ পর্যন্ত ভোটগ্রহণ চলবে । এই পশ্চিমবঙ্গেই রাজনৈতিক চপানউতোরের পরিবেশ তৈরি হয়েছে ।

নির্বাচন কমিশন অতি গর্বের সঙ্গে ঘোষণা করেছিল, তারা 6400টি ভোট কেন্দ্রকে সমস্যাবহুল হিসেবে চিহ্নিত করেছে এবং রাজ্যে অবাধ ও শান্তপূর্ণ নির্বাচন করানোর জন্য আট দফার নির্বাচনের তদারকির দায়িত্বে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে মোতায়েন করা হচ্ছে । তবে, আদর্শ নির্বাচন বিধি কার্যকর করার ব্যাপারে নিরপেক্ষতা এবং বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে । 2016 সালের বিধানসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গ থেকে বিজেপি মাত্র তিনটি আসন জেতেছিল । 2019 সালের সাধারণ নির্বাচনে 18টি আসন পেয়ে বিজেপি হস্ত প্রসারিত করেছিল । দলটি এখন রাজ্য থেকে তৃণমূলকে উৎখাত করতে সর্বশক্তি দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছে । মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই চ্যালেঞ্জটি সর্বতভাবে গ্রহণ করেছেন । বিজেপির বিরুদ্ধে পাল্টা লড়াই ছুঁড়ে দিতে গিয়ে নির্বাচন বিধিভঙ্গের দায়ে পড়েছেন ।

মমতা দিদি, তাঁর জনপ্রিয়তার জন্য পরিচিত ৷ অভিযোগ করেছেন, কমিশন তাঁর বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ করছে, কিন্তু, বিজেপি নেতারা অনেক বাড়াবাড়ি করলেও সে বিষয় অন্ধ থেকে গিয়েছে ৷ 'মডেল কোড অব কনড্যাক্ট'কে 'মোদি কোড অব কনড্যাক্ট' বলেও কটাক্ষ করেছেন তিনি ৷ এই পুরো পর্বে নির্বাচন কমিশনের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে, যা নিঃসন্দেহে গণতন্ত্রের পক্ষে বিপজ্জনক ৷

এ প্রসঙ্গে মনে রাখা দরকার, এম এস গিল মুখ্য নির্বাচন কমিশনার থাকার সময় বলেছিলেন, প্রতিটি স্বীকৃত রাজনৈতিক দলের উচিত তাদের চারপাশে সাংবিধানিক বৃত্ত তৈরি করা ৷ এবং যাতে কোনওভাবেই তার বিচ্যুতি না ঘটে, সে বিষয়ে সতর্ক হওয়া প্রয়োজন ৷

আরও পড়ুন: কমিশনের নির্দেশে রিটার্নিং অফিসার, পুলিশ কর্তা সহ একাধিক বদল

প্রায় সাত দশক আগে সংবিধানের জনক ড. বিআর অম্বেদকর বলেছিলেন, নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগে বিতর্ক রোধ করতে আলাদা ব্যবস্থা করা উচিত ৷ অবাক করার মতো বিষয় হল, তাঁর এই পরামর্শ আজ পর্যন্ত কোনওভাবেই কার্যকর হয়নি ৷ কেন্দ্রের সদিচ্ছার কারণেই নির্বাচন কমিশনের উচ্চ আসনে নিযুক্ত ব্যক্তিদের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায় ৷ বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে ৷ নবীন চাওলা পর্বে আমরা প্রত্যক্ষ করেছি ৷ গোপাল স্বামী চাওলা সম্পর্কে কড়া রিপোর্টে দেওয়ার পরও তাঁকে কেন্দ্রীয় সরকার মুখ্য নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগ করেছিল ৷ তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তিনি বাইরের লোকের কাছে সরকারের গোপন তথ্য ফাঁস করেছেন ৷ গত সাধারণ নির্বাচনের সময় নির্বাচন কমিশনার লাভাসা অভিযোগ তুলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী মোদি এবং অমিত শাহের বিরুদ্ধে ক্লিন চিট দেওয়া সঠিক সিদ্ধান্ত ছিল না মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের ৷ যদিও তাঁকে শেষ পর্যন্ত সরে যেতে হয় ৷

সংবিধানের বিভিন্ন পদ্ধতিগুলি তখনই গুরুত্ব পাবে এবং তার কার্যকারিতা সঠিক প্রমাণিত হবে, যখন এমন কোনও ব্যক্তির দ্বারা তা পরিচালিত হবে, যিনি সাংবিধানিক মূল্যবোধের সঙ্গে কোনও মূল্যেই আপস করবেন না ৷ প্রধানমন্ত্রী, প্রধান বিচারপতি, বিরোধী দলনেতার দ্বারা গঠিত একটি কমিটি বেছে নিক মুখ্য নির্বাচন কমিশনার-- এই দাবি ক্রমেই তীব্র হয়ে উঠছে ৷ বিজেপির লৌহ পুরুষ লালকৃষ্ণ আদবানিও এই পদ্ধতির উপর গুরুত্ব দিয়েছিলেন ৷ তবে, বিজেপি পুরো বিষয়টা আজ নিজেদের কৌশলে পরিণত করেছে ৷ নির্বাচন কমিশনার নিয়োগে কমিটি গঠনের বিষয়টি আজ সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চের বিবেচনায় রয়েছে ৷

ভোটাধিকারের মাধ্যমে জনগণের মতামতের ভিত্তিতে একটি শক্তিশালী সরকার গঠনই হল গণতন্ত্রের আসল ভিত্তি ৷ এটা স্পষ্ট করে বুঝে নেওয়া উচিত, জনসাধারণের আস্থাকে রক্ষা করতে হলে নির্বাচন কমিশন এবং মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়টিকে স্বচ্ছ করতে হবে ৷ এ বিষয়ে সংসদের কাছে নির্বাচন কমিশনের জবাবদিহিও করা উচিত ৷

ABOUT THE AUTHOR

...view details