মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধি স্কুল জীবনে খুবই সাধারণ মানের ছাত্র ছিলেন । বিষয়টি তিনি নিজেই স্বীকার করেছিলেন । এছাড়া ছোটোবেলায় তিনি ছিলেন যথেষ্ট লাজুক । অচেনা লোকজনের সঙ্গে তিনি সহজে মিশতে পারতেন না । কিন্তু পরবর্তীতে তিনি হয়ে উঠেছিলেন এক কিংবদন্তী জননায়ক । ইতিহাস তাঁকে মনে রেখেছে তাঁর জনসংযোগ ও নেতৃত্ব দানের ক্ষমতার জন্য ।
মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধি যখন ইংল্যান্ডে আইন নিয়ে পড়াশোনা করছিলেন তখন তাঁর বয়স 21 । সেই সময় একটি ব্রিটিশ সাপ্তাহিক পত্রিকায় নিরামিষ খাবার ও ভারতীয়দের খাদ্যাভ্যাস সংক্রান্ত 9টি প্রতিবেদন লিখেছিলেন তিনি । প্রতিবেদনগুলি তিনি যথেষ্ট সাবলীল ভাবে লিখেছিলেন, যা পাঠকদের আকৃষ্ট করেছিল । যা থেকে বোঝা গিয়েছিল তাঁর জনসংযোগের ক্ষমতা কতটা ।
এর তিন বছর পর মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধি তখন দক্ষিণ আফ্রিকায় । সেই সময় বর্ণবিদ্বেষের কালো ছায়া সেই দেশের উপর । তখন মোহনদাস নিজের মত প্রকাশ করে বর্ণবিদ্বেষের বিরোধিতা করে বিভিন্ন পত্রিকার সম্পাদককে চিঠি লিখেছিলেন ।
সেই সময় টাইমস অফ নাটাল-এ পাঠানো এক চিঠিতে তিনি ক্ষমতাসীন শ্বেতাঙ্গ সরকারের উদ্দেশে লেখেন :
"আপনারা ভারতীয় বা এখানকার ভূমিপুত্রদের ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত রেখেছেন । কারণ আমাদের চামড়ার রং কালো । আপনারা কেবল বহিরঙ্গ দেখেই সব কিছু বিচার করেন । কিন্তু সেই চামড়া নিচে বিষ আছে, না অমৃত, তাতে আপনাদের কিছু এসে যায় না । আমি আপনাদের একটি পরামর্শ দেওয়ার দুঃসাহস করছি । দয়া করে আপনাদের ধর্মগ্রন্থটি পড়ুন । তবেই আপনারা বুঝতে পারবেন, আপনারা যা করছেন তা ধর্ম শেখায় না ।"
গান্ধির সেই মতপ্রকাশের সাহসকে ভারতে জরুরি অবস্থার সময় স্মরণ করেছিলেন মিডিয়া ব্যারন রামনাথ গোয়েঙ্কা । সেই সময় তিনি বলেছিলেন, "আমাদের এই পরিস্থিতিতে (জরুরি সময়) মহত্মা গান্ধির মতো গুণ দরকার । এখনকার পরিস্থিতি গণমাধ্যমের স্বাধীনতার পরিপন্থী । আমাদের দরকার মহাত্মা গান্ধির মতো অদম্যতা ।"
এই সংক্রান্ত আরও খবর :গান্ধির স্বরাজের স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে কাশ্মীরের গ্রাম
গান্ধি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে লিখতে শুরু করেন 1930 সালে । তারপর আমৃত্যু তিনি লিখে গিয়েছেন । তাঁর লেখাগুলি তৎকালীন 30 কোটি ভারতীয়র আশা-ভরসার প্রতিচ্ছবি ছিল । বর্তমান সমাজের নিরিখে তার সেই অকুতভয়, সাবলীল লেখালেখির আঙ্গিক যদি ফিরিয়ে আনা যায়, তবে সেটিই হবে 150তম জন্মজয়ন্তীতে তাঁকে সম্মান জানানোর সঠিক উপায় ।