যখন আমরা ফোন করি, কল কানেক্ট হওয়ার আগেই একটা কণ্ঠস্বর আমাদের বলতে থাকে যে কীভাবে আমরা কোরোনা সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়ব ও সংক্রমণ এড়াব । তবুও কোরোনা সংক্রমণের ঘটনা ঘটেছে ৷ যেখানে নির্দিষ্ট কিছু অংশে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে । এ নিয়ে কী বলবেন ?
এমন রিপোর্টও সামনে এসেছে যেখানে আবাসন সোসাইটিগুলো পরিবারের সদস্যদের ঢুকতে দিচ্ছে না সংক্রমণের ভয়ে ৷ এমনই ভিডিও ভাইরাল হতে দেখা গেছে যেখানে প্রতিবেশী এক ডাক্তারকে গালিগালাজ করছেন এই ভয়ে যে একই বাড়িতে তাঁর ক্লিনিক থেকে তিনি সংক্রমিত হতে পারেন । একজন ডাক্তার, যিনি কোরোনা পজ়িটিভ হয়ে হাসপাতালে ভরতি হয়েছেন ৷ নিজেকে অপরাধী ভাবছেন এই ভেবে যে তাঁদের গোটা বিল্ডিং সিল ও স্যানিটাইজ় করা হবে । মানুষের কাছে ক্ষমা চেয়ে তিনি স্বস্তি অনুভব করছেন । এমনও হয়েছে যে টেস্টের রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করতে করতে, বা পজ়িটিভ রিপোর্ট আসার পর কেউ আত্মহত্যা করেছেন ৷ কেউ আবার নিরুদ্দেশ হয়ে গেছেন ।
মানুষ শুধু সংক্রমণের ভয়ে ভীত নন, তাঁরা আরও বেশি ভীত যে আশেপাশের লোকজন তাঁদের টার্গেট করবে । ‘সামাজিক দূরত্ব’ হওয়া কোনওভাবে ‘সমাজচ্যুত’ করা হয়ে উঠেছে । এই তিক্ত সত্য মেনে নিয়েই এর মোকাবিলা করতে হবে ।
আপনার কী মনে হয়, COVID-19 সংক্রমণের ফলে এই প্রতিক্রিয়া কেন হচ্ছে?
যখনই কোনও সংক্রমণের আতঙ্ক ছড়ায়, তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া হিসেবে মানুষ সংক্রমিতের থেকে নিজেকে দূরে রাখার সিদ্ধান্ত নেন । এটা বেঁচে থাকার কোনও আদিম প্রবৃত্তি হতে পারে ৷ কিন্তু এর শিকড় রয়েছে জ্ঞানের অভাব ৷ সহজভাবে বললে, অজ্ঞতার কারণ অবজ্ঞা । যে কোনও কলঙ্কের মূলই হচ্ছে অবজ্ঞা । অবজ্ঞা ভয় তৈরি করে ৷ আর ভয় থেকে জন্ম নেয় বৈষম্যমূলক আচরণ । এটা হয়েছে যখন কুষ্ঠরোগ আক্রান্তদের গ্রামের বাইরে আরোগ্যকেন্দ্রে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে ৷ যখন মানসিকভাবে অসুস্থ ব্যক্তিদের পাগলাগারদে ভরে দেওয়া হয়েছে ৷ যক্ষা আক্রান্তদের সঙ্গেও একই ঘটনা ঘটেছে ৷ HIV-AIDS আক্রান্তদের ক্ষেত্রেও এধরণের ঘটনা একটা বিরাট সমস্যা ছিল । কোরোনা এই তালিকায় সর্বশেষ সংযোজন । এগুলো থেকে এটাই প্রমাণ হয় , প্রযুক্তি ও অন্যান্য ক্ষেত্রে অগ্রগতি সত্ত্বেও মানুষ হিসেবে আমরা বদলাইনি ।
কোরোনা সংক্রমণকে ঘিরে বহু মিথ রয়েছে । যেমন -
উষ্ণ জলবায়ুতে ভাইরাস মরে যাবে ৷ তাই দুশ্চিন্তার কিছু নেই ৷ মানুষ ভাইরাসকে মারার আশায় স্যানিটাইজ়ার, ব্লিচ, মিথানল, ইথানল ইত্যাদি খেয়েছে ৷ এমন লোকজনও আছে যারা বিশ্বাস করেছিল ৷ তাই ভগবানই তাদের সংক্রমণ থেকে বাঁচাবেন ও তাদের স্যানিটাইজ়েশন আর সামাজিক দূরত্ব পালনের দরকার নেই । সামাজিক দূরত্ববিধিকে অগ্রাহ্য করে অসংখ্য ধর্মীয় অনুষ্ঠান ও শোভাযাত্রা হতে দেখা গেছে । মূলধারার সংবাদমাধ্যম, সোশাল মিডিয়া ও হোয়াটসঅ্যাপে কোরোনা নিয়ে প্রচুর বিভ্রান্তিমূলক গল্প শোনা যাচ্ছে । এর জেরে ধন্দ আর আতঙ্ক বেড়েছে । বিভ্রান্তিকর মিডিয়া রিপোর্টে সংক্রমণ ও তার ছড়িয়ে পড়ার সাম্প্রদায়িকীকরণ করা হয়েছে । এর জেরে মানুষের জীবন ও জীবিকা বিরাটভাবে ধাক্কা খেয়েছে ।
আমরা কীভাবে নিশ্চিত করব মানুষের কাছে যাতে সঠিক তথ্য পৌঁছাবে?
সরকার, স্বাস্থ্যক্ষেত্রের পেশাদাররা, স্বাস্থ্যকর্মী, সমাজের বিশিষ্টরা, তারকাদের সঠিক তথ্য প্রচারে বড় ভূমিকা আছে । আমার মনে আছে, HIV-AIDS সচেতনতা প্রচার কীভাবে সচেতনতা গড়ে তুলেছিল । পালস পোলিও কর্মসূচির সাফল্যের কারণ বড় সেলেব্রিটিদের প্রচার । একইরকমভাবে সঠিক তথ্য পৌঁছে দিতে সরকারি সংস্থাগুলোর সদিচ্ছা ও সমাজের বিশিষ্টদের সাহায্য লাগবে ।