পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / bharat

LAC-তে উত্তপ্ত পরিস্থিতি শান্ত করার জন্য আলোচনা চলছে

LAC-র একাধিক সেক্টরে ভারতীয় সেনাবাহিনী এবং PLA-র মধ্যে তৈরি হওয়া উত্তপ্ত পরিস্থিতি চলাকালীনই দুই-তিনটি স্তরে কিছু আলোচনা শুরু হয়েছে এবং উত্তপ্ত পরিস্থিতি এবার কিছুটা শান্ত হওয়ার লক্ষণ দেখা দিয়েছে, এমনটাই জানিয়েছেন প্রাক্তন কেরিয়ার ইন্টালিজেন্স আধিকারিক এবং চিন বিষয়ে বিশেষজ্ঞ জয়দেব রানাডে ৷ বিশিষ্ট সাংবাদিক স্মিতা শর্মার সঙ্গে আলোচনায় রানাডে জোর দিয়ে জানিয়েছেন যে PLA-র এই সীমান্ত লঙ্ঘনের ঘটনায় একেবারে শীর্ষস্তর থেকে সম্মতি ছিল ৷ চিনা সেনার ওয়েস্টার্ন থিয়েটার কমান্ডের অন্তত তিনটি সেনা উপ-জেলার সদস্য সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ার যোগ দিয়েছিল ৷

LAC
LAC

By

Published : May 30, 2020, 8:01 PM IST

LAC-র একাধিক সেক্টরে ভারতীয় সেনাবাহিনী এবং PLA-র মধ্যে তৈরি হওয়া উত্তপ্ত পরিস্থিতি চলাকালীনই দুই-তিনটি স্তরে কিছু আলোচনা শুরু হয়েছে এবং উত্তপ্ত পরিস্থিতি এবার কিছুটা শান্ত হওয়ার লক্ষণ দেখা দিয়েছে, এমনটাই জানিয়েছেন প্রাক্তন কেরিয়ার ইন্টালিজেন্স আধিকারিক এবং চিন বিষয়ে বিশেষজ্ঞ জয়দেব রানাডে ৷ বিশিষ্ট সাংবাদিক স্মিতা শর্মার সঙ্গে আলোচনায় রানাডে জোর দিয়ে জানিয়েছেন যে PLA-র এই সীমান্ত লঙ্ঘনের ঘটনায় একেবারে শীর্ষস্তর থেকে সম্মতি ছিল ৷ চিনা সেনার ওয়েস্টার্ন থিয়েটার কমান্ডের অন্তত তিনটি সেনা উপ-জেলার সদস্য সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ার যোগ দিয়েছিল ৷ রানাডে ২০০৮ সালে অবসর নেন ৷ অবসরের সময় তিনি ছিলেন ক্যাবিনেট সচিবালয়ের অতিরিক্ত সচিব ৷ তিনি ন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যাডভাইজারি বোর্ডেরও সদস্য হিসেবে কাজ করেছেন ৷ তিনি জানিয়েছেন LAC-তে এই উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরির মাধ্যমে বিবিধি কৌশল নেওয়ার চেষ্টা করছেন শি জিনপিং ৷ একদিকে তিনি নিজের দেশে কর্তৃত্ব আবার প্রতিষ্ঠা করতে চাইছেন ৷ অন্যদিকে পশ্চিম বিশ্বকে বার্তা দিতে চাইছেন যে কোরোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার জেরে যে বিতর্ক তৈরি হয়েছে, তার পরও তাঁর কর্তৃত্ব অটুট রয়েছে ৷ তিনি উল্লেখ করেছেন যে, চিনে একটা অভূতপূর্ব পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে ৷ সেখানে মানুষ এই প্রথম প্রকাশ্যে শি জিনপিং এবং কমিউনিস্ট পার্টির সমালোচনা করছেন ৷ তাঁরা মনে করছেন ২০৪৯ সালের মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে টপকে যাওয়ার স্বপ্ন পূরণ করতে শি ব্যর্থ হচ্ছেন ৷ রানাডে চিন ও তীব্বত নিয়ে একাধিক বই লিখেছেন ৷ তিনি জানিয়েছেন যে নয়াদিল্লি ও বেজিংয়ের সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে ভারতের উচিত তাইওয়ানের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক স্থাপন করা ৷ ভারত যে জম্মু ও কাশ্মীর এবং লাদাখকে দু’টো কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ভেঙে পুনর্গঠন করার চেষ্টা করছে, LAC-র পরিস্থিতি এবং পাক অধিকৃত কাশ্মীরে চিনের কৌশলগত বিনিয়োগ কিন্তু তার থেকে বিচ্ছিন্ন নয় ৷ এখানে রইল সেই আলোচনা ৷

প্রশ্ন : বেজিংয়ের বিবৃতি - চিন কি পুনর্গঠন করছে ?

যদি বেজিং গঠনমূলক দিকে থাকত, তাহলে এই অনুপ্রবেশ ঘটত না ৷ অনুপ্রবেশ যাতে না ঘটে, তার জন্য একাধিক প্রোটোকল রয়েছে ৷ কিন্তু তারপরও অনুপ্রবেশ ঘটছে ৷ চিনারা যা বলে আর যা করে, তার প্রতি আমার বিশ্বাস নেই ৷ নিয়ন্ত্রণ করা যায় মানে যা আমাদের হাতের মধ্যে থাকে,এমন কিছুই আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি ৷ শান্তিপূর্ণ শব্দটা ব্যবহার করা হয়নি ৷ হ্যাঁ, পরিস্থিতি স্থিতিশীল ৷ কোনও বিবাদ তৈরি হয়নি ৷ এটা নিয়ন্ত্রণ করা যায়, এটা বলা মানে আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি ৷ পরিস্থিতি শান্ত করতে এটাই প্রথম পদক্ষেপ ৷

প্রশ্ন : মধ্যস্থতা করার জন্য ট্রাম্পের প্রস্তাব

তিনি পাকিস্তান নিয়েও একই জিনিস ঘটিয়েছিলেন ৷ এবার তিনি দুই দেশের মধ্যে মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিয়েছেন এবং নিজে মধ্যস্থতাকারী হতে চেয়েছেন ৷ এটা বেজিংকে বিরক্ত করবেই এবং তারা এই ধরনের কোনও প্রস্তাব মানবে না ৷ আমরাও মানব না ৷ এটার স্বাভাবিক ‘মৃত্যু’ ঘটে গিয়েছে ৷

প্রশ্ন : প্যানডেমিক ছড়িয়ে পড়ার কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের দ্বারা চিন কোণঠাসা ৷ সেনার সক্রিয়তা কি এটারও একটা কারণ ?

যদি চিন কিছু করে থাকে, তাহলে আমাদের সেনাবিহিনী প্রতিরোধ করবে এবং পালটা জবাব দেবে ৷ অন্যথায় আমরা লড়াই করতে চাই না ৷ বরং আমরা কূটনৈতিক সমঝোতার মাধ্যমে স্থিতাবস্থা চাই ৷ যার মানে তারা যেখানে ছিল, সেখানেই ফিরে যাবে এবং আমরাও যেখানে ছিলাম, সেখানেই ফিরে আসব ৷

বিশ্বজুড়ে এখন চিন বিরোধী মনোভাবের রমরমা চলছে ৷ এই পরিস্থিতিতে তাদের বিদেশ গোয়েন্দা ব্যুরো একটি রিপোর্ট তৈরি করেছে, যা শি জিনপিং এবং পলিটব্যুরোকে দেখানো হয়েছে ৷ সারা বিশ্বে কীভাবে চিন বিরোধী মনোভাব ছড়িয়ে পড়েছে, তা ওই রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে ৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রই চিন বিরোধী মনোভাব ছড়াচ্ছে এবং তা ছড়িয়ে পড়তে নেতৃত্বও দিচ্ছে ৷ তাই তারা ভয় পেয়েছে ৷ কিন্তু ভারতও এই প্যানডেমিকের বিরুদ্ধে লড়াই করছে ৷ আমরা জানি না যে এর ফল কী হবে ৷ আমাদের যখন খারাপ পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি, সেই সময়ই তারা আমাদের আঘাত করল ৷ তাদের বিরুদ্ধে মানুষের মধ্যে যে ধারণা তৈরি হয়েছে, এটা তার পক্ষেই গেল ৷ এটা তারা পরে বুঝতে পারবে ৷ এর ফলে তারা নতুন বন্ধু তৈরি করতে পারবে না ৷ অন্য দেশগুলির সঙ্গেও তারা একই রকম ব্যবহার করছে ৷ তারা মনে করছে তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার কোনও সক্ষমতা নেই ৷ ভারতীয় সেনাবাহিনী COVID-এ আক্রান্ত হয়ে পড়েছে বলে তারা জানিয়েছে ৷ কিন্তু এর সঙ্গে বাস্তবের কোনও সম্পর্ক নেই ৷

প্রশ্ন : অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক চ্যালেঞ্জের বিরুদ্ধেই কি বিবিধ কৌশল নেওয়ার জন্য LAC-তে উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি করা হল ?

চিনের জন্য অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি খুবই জরুরি ৷ শি জিনপিং খুব চাপের মধ্যে রয়েছেন ৷ চিনের মানুষ প্রকাশ্যে কমিউনিস্ট পার্টি ও শি জিনপিংয়ের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন এবং তাঁর পদত্যাগ দাবি করেছেন ৷ এই পরিস্থিতি চিনে অভূতপূর্ব ৷ পদে থাকা একজন নেতার সমালোচনা আমরা গত 20 বছরে দেখিনি ৷ এমনকী, তিয়েনানমেন, ডেং জিয়াওপিংয়ের সময়ও আমরা দেখিনি ৷ তখন পরোক্ষে সমালোচনা করা হয়েছিল ৷ এটা অস্বাভাবিক ৷ কারণ, যাঁরা সমালোচনা করছেন, তাঁদের অনেকেই সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করছেন ৷ ফলে তাঁরা জানেন যে তাঁদের সহজেই চিহ্নিত করা যেতে পারে এবং শাস্তি দেওয়া হতে পারে ৷ দ্বিতীয়ত, চিনে একটা ধারণা তৈরি হয়েছে যে নেতৃত্ব শুধু অর্থনৈতিক বিষয়েই ব্যর্থ নয় ৷ যেখানে বেকারত্ব 20 মিলিয়ন থেকে 70-80 মিলিয়নে পৌঁছেছে, অর্থাৎ, মাথা পিছু রোজগার বৃদ্ধিতেও ব্যর্থ, খাবারের দামও বৃদ্ধি পাচ্ছে ৷ এছাড়া মানুষ মনে করছেন যে, 2049 সালের মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে টপকে যাওয়ার চিনের স্বপ্ন সফল করার জন্য সামর্থ তৈরি করতে নেতৃত্ব সফল হতে পারছে না ৷ শি জিনপিং নিজের সম্মান ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছেন ৷ তা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে চাইছেন ৷ কারণ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও 2049-এর বিষয়ে বলার সময় তিনি নিজের সম্মান বাজি রেখেছিলেন ৷ তিনি এখন দেখাতে চাইছেন যে তাঁর কর্তৃত্ব একই রকম রয়েছে ও তাঁর স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে এবং চিনের কমিউনিস্ট পার্টি সামনে থেকে নেতৃত্ব দেবে ৷ সেইজন্যই আমরা হংকংয়ের বিরুদ্ধে কড়া অবস্থান নিতে দেখছি, তাইওয়ানের বিরুদ্ধেও কড়া অবস্থান নেওয়া হচ্ছে আর আমরা LAC-তেও উত্তপ্ত পরিস্থিতি প্রত্যক্ষ করছি ৷

আমরা LAC-তে যা দেখছি, তা পরিকল্পনা করে এবং শীর্ষ নেতৃত্বের সম্মতিতে করা হচ্ছে ৷ শীর্ষ নেতৃত্বের সম্মতি ছাড়া এটা হতে পারে না ৷ ওয়েস্টার্ন থিয়েটার কমান্ডের অন্তত তিনটি সেনা উপ-জেলা এর সঙ্গে জড়িত ৷

প্রশ্ন : ঘরোয়া বৈঠকের মতো কি নতুন কোনও পদ্ধতির প্রয়োজন রয়েছে ? বর্তমান সীমান্ত প্রোটোকল কি কার্যকর হচ্ছে না ?

আমাদের এই ধরনের অনেক পদ্ধতি ও আরও অনেক কিছু থাকতে পারে ৷ কিন্তু যদি এক পক্ষ সেটাকে মানতে না চায়, তাহলে সেটার কার্যকারিতা থাকে না ৷ আমরা এখনও প্রোটোকল মেনে এগিয়ে চলার চেষ্টা করছি ৷ যা সবকিছুর অনুপস্থিতিতে একেবারে সেরা উপায় ৷

এটা বরাবরের চিনা ছক, শীর্ষস্তরে বৈঠক করো ও ভালো ভালো কথা বলো, কিন্তু করো একেবারে অন্যরকম কিছু ৷ সুতরাং, এমন একজন যে কৌশলগত স্থায়িত্বের কথা সামনে রেখে কৌশলে সমস্যা তৈরি করে ৷ আমরা এখানে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি এবং সর্বোচ্চ স্তরে বজায় রয়েছে একটা স্মিত হাসি ৷ এটাই আসল কথা ৷

প্রশ্ন : তাইওয়ান, বাণিজ্য ও তিব্বত ভারতের জন্য সুবিধাজনক হবে ?

BRI (বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ) ইতিমধ্যেই সমস্যায় পড়েছে ৷ আন্তর্জাতিক পিপলস’ কংগ্রেস, যা আজ শেষ হয়েছে , সেখানে 2000 অতিথির সামনে যাঁরা শি জিনপিংয়ের সমালোচনা করছেন, তাঁদের কয়েকজন বক্তৃতা দিয়েছেন ৷ কেউ একজন প্রশ্ন তুলেছেন যে এই প্রকল্পের অর্থ কে বরাদ্দ করল ৷ চিনের সঙ্গে তাইওয়ানের যোগাযোগ ও বাণিজ্য রয়েছে ৷ এটা একটা আর্থিক সুযোগ, যা আমরা সদ্ব্যবহার করতে সক্ষম হয়নি ৷ চিনের সঙ্গে আমাদের কী ধরনের সম্পর্ক এটা না ভেবে, আমাদের নিজেদের লাভের জন্য এটা করা উচিত ৷ উচ্চস্তরের প্রযুক্তি-সহ একাধিক বিষয়ে আমাদের লাভ হবে ৷

প্রশ্ন : LoC, উপত্যকা ও LAC-র ঘটনা একে অপরের সঙ্গে কতটা সংযুক্ত এবং এটা ভারতীয় সেনাবাহিনীর জন্য কতটা চ্যালেঞ্জের ?

একজন নাগরিক হিসেবে এটা সত্যিই খুব ভয়ের ৷ কারণ, এর খারাপ প্রভাব একটা শান্তিপূর্ণ ও স্থিতিশীল পরিস্থিতির উপর এবং সেখানকার মানুষের উপর প্রভাব পড়বে ৷ আমরা এমন একটা পরিস্থিতি অবশ্যই পছন্দ করব না যেখানে চিন ও ভারত একে অপরের বিরুদ্ধে অবস্থান করবে এবং যার প্রভাব আমাদের উপর পড়বে ৷ কিন্তু আমরা এর জন্য প্রস্তুত রয়েছি ৷ আমাদের বাহিনীর প্রধানেরা এই বিষয়ে কথা বলছেন, মানে তাঁরা প্রস্তুত রয়েছেন ৷ কিন্তু আমরা যখন অনুচ্ছেদ 370 ও 35A সংশোধন করেছি এবং নতুন মানচিত্র প্রকাশ করেছি, যেখানে আমাদের সঠিক সীমানার উল্লেখ রয়েছে ৷ তার পর থেকেই চিন কিছুটা মনোঃক্ষুণ্ণ ৷ তাদের ও পাকিস্তানের স্বার্থ অবশ্য এক ৷ কিন্তু তা আরও একত্রীভূত হয়েছে ৷ তাই চিন কাশ্মীরের বিষয়কে অন্তত চারবার UNSC-তে উপস্থাপিত করেছে ৷ এখানে একটা সাধারণ বিষয় কাজ করছে ৷ যদিও পুরো নজর লাদাখের উপর রয়েছে ৷ কিন্তু CPEC ও পাকিস্তানের অধীকৃত কাশ্মীর, গিলগিট-বালটিস্তান, যা আমাদের এলাকার মধ্যে পড়ে, সেখানে চিনের কৌশলগত ও অর্থনৈতিক আগ্রহও এটা কারণ ৷ তারা উদ্বিগ্ন ৷ তারা কারাকোরাম অঞ্চলে নিজেদের অবস্থান সুরক্ষিত করতে চায় ৷ এটা বৃহৎ অঞ্চল, তাই এখানে অবস্থান সুরক্ষিত করলে, তাদের চাহিদা মিটবে বলেই তারা মনে করে ৷

ABOUT THE AUTHOR

...view details