COVID-19 প্যানডেমিক এখনও পর্যন্ত 25 লাখ মানুষকে সংক্রমিত করেছে ৷ বিশ্বব্যাপী এক লাখ 70 হাজার মানুষের জীবনও কেড়ে নিয়েছে ৷ এটা এই মুহূর্তে মানবতার জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ । সংক্রমিতদের শরীরে দুই সপ্তাহ পর্যন্ত কোনও লক্ষণ ধরা পড়ে না ৷ লক্ষণ যতক্ষণে সামনে আসে, ততক্ষণে ওই রোগ আরও অনেকের মধ্যে সংক্রমিত হয়ে যেতে পারে । নেচার মেডিসিনে (একটি প্রকৃতি গবেষণা সংক্রান্ত জার্নাল) প্রকাশিত একটি গবেষণা থেকে জানা গিয়েছে যে, যাঁরা SARS-COV-2 তে আক্রান্ত হয়েছিলেন, তাঁদের শরীরে লক্ষণ দেখা দেওয়ার আগেই রোগ হু হু করে ছড়িয়ে যায় ৷ বর্তমান রোগীদের 44 শতাংশ এইভাবে সংক্রমিত হয়েছেন ।
অন্য একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে যে চিনে আক্রান্তের 79 শতাংশ এবং সিঙ্গাপুরে আক্রান্তের 48 শতাংশের মধ্যে রোগের কোনও লক্ষণই দেখা যায়নি ৷ 2002 সালের SARS রোগকে জ্বরের লক্ষণ দেখে সনাক্ত করার কাজ করা হয়েছিল বলে বেশ কয়েকটি রিপোর্ট থেকে জানা যায় ৷ একটা বড় জনগোষ্ঠীর মধ্যে নির্দিষ্ট লক্ষণগুলি দেখা যাওয়ার পরই এটাকে মহামারী হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছিল । অন্যদিকে নভেল কোরোনা ভাইরাস উল্লেখযোগ্যভাবে ছড়িয়ে পড়ছে । দিল্লিতে 186 জনের শরীরে COVID-19 এর অস্তিত্ব মিলেছে, যাঁদের শরীরে এই রোগের কোনও লক্ষণই দেখা যায়নি ৷ মহারাষ্ট্রের 65 শতাংশ এবং উত্তরপ্রদেশের 75 শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রে শরীরে কোনও লক্ষণই ছিল না ৷ কিছু কিছু ক্ষেত্রে 14 দিনের কোয়ারানটাইন পিরিয়ড কেটে যাওয়ার পর লক্ষণ দেখা দিয়েছে ৷ এই ভাইরাসের সঙ্গে লড়াই করতে এবং ভারতে এর প্রাদুর্ভাব আটকাতে গেলে প্রচুর পরিমাণে শারীরিক পরীক্ষার প্রয়োজন আছে ৷
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের তরফে জানানো হয়েছে যে, দেশব্যাপী লকডাউনের মাধ্যমে সরকার এই রোগের সংক্রমণ অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আনতে পেরেছে ৷ যদিও ডোনাল্ড ট্রাম্প গর্বের সঙ্গে ঘোষণা করেছিলেন যে, তাঁরা এখনও অবধি 43 লাখ অ্যামেরিকানকে পরীক্ষা করেছেন ৷ এই সংখ্যাটা ভারত-সহ 10টি দেশের তুলনায় বেশি ৷ তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মৃত্যুর সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে । COVID-19 মোকাবিলায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভয়ঙ্কর প্রতিক্রিয়ার কথা মাথায় রেখে ভারতকে এই প্যানডেমিক নিয়ন্ত্রণে একটা দীর্ঘ পথ পার করার জন্য প্রস্তুত হতে হবে ৷ দ্য ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর মেডিকেল রিসার্চের তরফে জানানো হয়েছে যে, এখনও পর্যন্ত চার লাখ লোককে পরীক্ষা করা হয়েছে ৷ তবে 130 কোটি জনসংখ্যার দেশে এটা খুবই কম একটা সংখ্যা ৷ ইজরায়েলের একটি সমীক্ষায় জানা গিয়েছে যে, নয় বছরের কম বয়সী শিশুদের মধ্যে 27 শতাংশ কোনও লক্ষণ ছাড়াই আক্রান্ত হচ্ছে ৷ এর থেকেই বোঝা যাচ্ছে শিশুদের জন্য এই ভাইরাসের সংক্রমণ ঠিক কতটা মারাত্মক ৷ ভাইরাসের শৃঙ্খল ভাঙার জন্য ভারতের তরফে বিদেশ থেকে আসা মানুষদের ও তাঁদের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের কোয়ারানটাইন করা হয় এবং তাঁদের শারীরিক পরীক্ষা করানো হয় ৷
দ্বিতীয় পদক্ষেপ হিসাবে সরকার নজিরবিহীনভাবে দেশব্যাপী লকডাউন কার্যকর করেছে । GOI ট্রেসিং ও টেস্টিংয়ের জন্য কিট প্রস্তুত করার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে ৷ অবশেষে চিন থেকে পাঁচ লাখ ব়্যাপিড অ্যান্টিবডি টেস্টিং কিট এসেছে । কেন্দ্রের তরফে জানানো হয়েছে যে, মে মাস থেকে দেশীয় সংস্থাগুলি মাসে 20 লাখ কিট প্রস্তুত করবে ৷ ভারতীয় বড় বড় ফার্মাসিউটিক্যাল সংস্থাগুলি টেস্টিং কিট তৈরির কাজ শুরু করেছে ৷ অব্যাহতি দেওয়া হলেও ফার্মা শিল্প মাত্র 50 শতাংশ দক্ষতার সঙ্গে এই কাজ করছে । যেহেতু আমাদের কাছে টেস্টিং কিটের সংখ্যা কম, তাই ভারতে COVID-19 রোগীর সঠিক সংখ্যাও অজানা ৷ তাই সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা ছাড়া আমাদের হাতে আর কোনও উপায় নেই ৷