পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / bharat

লকডাউনের সময় সন্তানদের সঙ্গে সদর্থক সময় কাটাতে হবে বাবা-মাকে

এই কঠিন সময়ে সন্তানদের গুরুত্বপূর্ণ অনুভব করাতে, এবং ভালোবাসার বোধ সঞ্চারিত করতে বাবা-মায়েদের জন্য কিছু পরামর্শ দিচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা(WHO), ইউনিসেফ, পেরেন্টিং ফর লাইফলং হেলথ, ইন্টারনেট অফ গুড থিংস, CDC এবং অ্যাক্সিলারেট ।

By

Published : Apr 2, 2020, 11:30 AM IST

Updated : Apr 2, 2020, 7:13 PM IST

lockdown
lockdown

দিল্লি, 2 এপ্রিল : তিন সপ্তাহ ধরে ঘরের মধ্যে থাকা কারও কাছেই সুখের ব্যাপার নয় । শিশু, কিশোর-কিশোরীদের কাছে, যারা স্কুল, টিউশন বা বন্ধুদের সঙ্গে বাইরে বেরোতে অভ্যস্ত, এটা তাদের কাছে আরও কঠিন । যখন স্কুলগুলি বন্ধ, আর বাচ্চারা বাইরে যেতে পারছে না, তখন তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে । বাচ্চারা অস্থির, বিমর্ষ এবং খিটখিটে হয়ে পড়ছে । তাই বাবা-মা-র ওপর দায়িত্ব বেড়েছে, আরও ভালোবাসা, যত্ন ও ধৈর্য নিয়ে বাচ্চাদের দেখাশোনা করার । স্কুল বন্ধ হওয়ায় বাচ্চা এবং কিশোর- কিশোরীদের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতি ঘটানোর সুযোগও তৈরি হয়েছে । অনেকটা সময় যখন আছে, তখন বাবা-মা-রা সেটা বাচ্চাদের আরও ভালোবাসা ও নিরাপত্তাবোধ দেওয়ার কাজে ব্যবহার করতে পারেন । এই কঠিন সময়ে সন্তানদের গুরুত্বপূর্ণ অনুভব করাতে, এবং ভালোবাসার বোধ সঞ্চারিত করতে বাবা-মায়েদের জন্য কিছু পরামর্শ দিচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা(WHO), ইউনিসেফ, পেরেন্টিং ফর লাইফলং হেলথ, ইন্টারনেট অফ গুড থিংস, CDC এবং অ্যাক্সিলারেট ।

তাঁদের তরফে বাবা-মায়েদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, বলা হয়েছে সন্তানের জন্য আলাদাভাবে সময় বার করার । সেটা কুড়ি মিনিট বা তার বেশিও হতে পারে, যেখানে বাচ্চাটিকে জিজ্ঞেস করা উচিত, যে সামাজিক দূরত্বের নিয়ম অনুসরণ করে তার কী করতে ইচ্ছে করছে । শিশুদের ক্ষেত্রে গান গাওয়া, পাত্র ও চামচ দিয়ে বাজনা বাজানো, স্ট্যাক আর ব্লক নিয়ে খেলা, বই থেকে গল্প পড়ে শোনানোও ভাল হবে । কিশোর- কিশোরীদের মন ভালো রাখতে তাদের সঙ্গে এমন বিষয় নিয়ে আলোচনা করা যেতে পারে, যা তাদের ভালোলাগে, যেমন খেলা, টিভি শো, বা তার বন্ধুদের নিয়ে । বাড়ির চারপাশে বা ভেতরে হাঁটাহাটি বা একসঙ্গে ওয়ার্কআউট করলে তো খুবই ভালো হয় । টিভি আর মোবাইল ফোন কিছুক্ষণ বন্ধ রেখে, সেই সময়টা বই পড়া, ছবি দেখা বা নাচের জন্য ব্যয় করলে ভাল হয় । সাফাই বা রান্নার মতো ঘরের কাজে বাচ্চাদের যুক্ত করলে তা তাদের ভালো লাগবে । কিন্তু পড়াশোনা বা হোমওয়ার্কে তাদের সাহায্য করাটা গুরুত্বপূর্ণ ।

বাচ্চাদের সঙ্গে সময় কাটানোর এটাই উপযুক্ত সময়

সন্তানদের সঙ্গে আদানপ্রদানের ক্ষেত্রে এই সময়টা বাবা-মার কাছে সমান কঠিন । বাবা-মা প্রায়ই বাচ্চাদের নানা জিনিস নিষেধ করেন, এমনকী তাদের ওপর চেঁচামেচিও করেন । যদি তাঁরা তাঁদের সন্তানদের প্রতি আরও 'সদর্থক' মনোভাব দেখান, এবং ভালো ব্যবহারের জন্য তাদের প্রশংসা করেন, তাহলে ভাল হয় । বাচ্চাদের প্রশংসা করা শুধু যে তাদের অনুপ্রেরণা জোগাবে তাই নয়, তারা এই ভেবেও আশ্বস্ত হবে যে তাদের প্রতি মনোযোগ দেওয়া হচ্ছে । তাদের কোনও কিছু করতে বলার থেকে তাদের অনুরোধ করাটা গুরুত্বপূর্ণ । চিৎকার করলে বাচ্চাদের মধ্যে চাপ ও রাগ আরও বাড়বে । শান্ত গলায় কথা বলুন । যুবক-যুবতিরা যাতে বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে পারে, সেটাও দেখতে হবে । তাঁদের নিজেদের ব্যক্ত করার সময় ও জায়গা দিন, বিশেষ করে তাঁরা যদি তাদের ভয় বা উদ্বেগ নিয়ে কথা বলতে চায় ।

পরামর্শে বাবা-মা-দের এও বলা হয়েছে, যে সন্তানদের জন্য নির্দিষ্ট কাজ এবং ফাঁকা সময়, দুয়েরই নির্ঘণ্ট তৈরি করুন । এতে বাচ্চারা আরও নিরাপদ বোধ করবে এবং ভাল আচরণ করবে । প্রত্যেকদিন ব্যায়াম করলে স্ট্রেস কমবে এবং ছোটরাও অনেক উৎসাহ নিয়ে বাড়িতে থাকতে পারবে । আরও একটা কাজ হল, বাচ্চাদের চিঠি লেখা ও ছবি আঁকায় সাহায্য করা এবং সেই সঙ্গে সেগুলি অনেকের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়া ৷ এগুলির ছবি তুলেও পাঠানো যেতে পারে । হাত ধোয়া এবং পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখাকে মজাদার করে তুলুন, যাতে বাচ্চারা তা নিজের অভ্যেস করে নিতে পারে । কেন হাত ধোয়া আর সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলা দরকার, সেটা তাদের বলাটাও গুরুত্বপূর্ণ । বাবা-মাকে বাচ্চাদের কাছে মডেল হতে হবে, এবং তাঁদের নিজেদেরও এই অভ্যেস মেনে চলতে হবে । প্রত্যেকটা দিনের শেষে, এক মিনিট সময় নিয়ে সেই দিনটার কথা ভাবুন । বাচ্চারা যে সদর্থক বা মজার জিনিসটা করেছে, সেটা সম্পর্কে তাদের বলুন । খারাপ আচরণও নতুন কিছু নয় । বিশেষ করে তখন, যখন বাচ্চারা ক্লান্ত, ক্ষুধার্ত বা ভীত হয় । ঘরে থাকা খারাপ ব্যবহারকে বাড়াতে পারে । ভালো সময় কাটানো, ভালো করলে প্রশংসা করা এবং নিয়মিত রুটিন মেনে চলা বাচ্চাদের খারাপ ব্যবহার কমাবে ।

বাবা-মাকেও নিজেদের যত্ন নিতে হবে, এবং শান্ত থেকে চাপকে ম্যানেজ করতে হবে । এর জন্য বাচ্চাদের সঙ্গে খোলামেলা আচরণ এবং তাদের কথা শোনা দরকার ৷ কারণ তারা সমর্থন ও আশ্বাসের জন্য আপনাদের দিকেই তাকিয়ে থাকে । বাচ্চারা যখন তাদের অনুভূতির কথা বলছে, তখন শুনুন । আপনাকে আতঙ্কগ্রস্ত করতে পারে, এমন সোশাল মিডিয়া এড়িয়ে চলুন । যখন পরিবার একসঙ্গে রয়েছে, তখন রিল্যাক্স করা বা চাপ কমানোর অন্যান্য পথ খুঁজে বার করাই সবথেকে ভালো । অ্যালকোহল মানুষকে দিয়ে চেঁচামেচি করায়, মারামারি করায় এবং ক্রুদ্ধ অনুভব করায় । মনকে শান্ত করতে, আত্মবিশ্লেষণ করতে এবং নিজের অনুভূতিগুলিকে লক্ষ্য করতে, ঘরেই এক মিনিটের রিল্যাক্সেশন অ্যাকটিভিটি করা যেতে পারে । সমস্ত বিষয়ে কথা বলার জন্য ইচ্ছুক থাকুন । বাচ্চারা হয়তো কিছু শুনে ফেলে থাকতে পারে । নীরবতা ও গোপনীয়তা ছোটদের রক্ষা করে না, করে সততা ও খোলামেলা মনোভাব । ভাবুন, কতখানি ওরা বুঝতে পারবে । প্রশ্নের উত্তর সততার সঙ্গেই দেওয়া ভালো, এবং উত্তর না জানা থাকলেও কোনও ক্ষতি নেই ।

Last Updated : Apr 2, 2020, 7:13 PM IST

ABOUT THE AUTHOR

...view details