বর্তমানে শিশুদের ভবিষ্যতের দক্ষ মানব সম্পদের রূপ দিতে, সুষম আহারের গুরুত্ব অপরিসীম । কিন্তু বিশ্বব্যাপী পুষ্টির নিরিখে ভারতের স্থান ক্রমশ নিচের দিকে নামছে । 2018 সালের মার্চ মাসে কেন্দ্রের তরফে ‘পোষণ অভিযান’ (ন্যাশনাল নিউট্রিশন মিশন) চালু করা হয়েছিল । যাতে মহিলা ও শিশুদের সার্বিক এবং যথাযথ পুষ্টির চাহিদা মেটানো সম্ভব হয় । সেই প্রকল্পের সূচনা হওয়ার পর থেকে সেপ্টেম্বর মাসটিকে "ন্যাশনাল নিউট্রিশন মান্থ" তথা জাতীয় পুষ্টি মাস হিসাবে উদযাপন করা হয় । "মন কি বাত" সম্প্রচারে প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেছিলেন যে , সরকার এই বছরও এই কর্মসূচি পালন করবে ।
ইতিমধ্যে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর মেডিকেল রিসার্চ (ICMR) একটি ডায়েট সংক্রান্ত নির্দেশিকা প্রকাশ করেছে । যেখানে মিলেটজাতীয় শস্য, ডাল ও মটরশুঁটি জাতীয় খাদ্য, দুধ ও দুগ্ধজাত খাদ্য, শাক-সবজি এবং ফলের উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে । বিশেষ করে অন্তঃসত্ত্বা মহিলা , মা এবং শিশুদের খাদ্যতালিকা নিয়ে বিস্তারিত তথ্য দিয়েছে কাউন্সিল । দুর্ভাগ্যবশত, বেশিরভাগ ভারতীয় পুষ্টিকর খাবার পান না । অতীতে, ন্যাশনাল নিউট্রিশন সার্ভে-র তরফে দেশজুড়ে এক লাখ 12 হাজার জনের রক্ত এবং মূত্রের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল । এটা পরীক্ষা করে শিশুদের মধ্যে ভিটামিন, আয়োডিন, জ়িংক , ফোলেট এবং আয়রনের ঘাটতির হার বোঝার চেষ্টা করা হয়েছিল । রিপোর্টে শিশুদের বৃদ্ধি ব্যাহত হওয়া , ক্ষয় এবং প্রয়োজনের তুলনায় কম ওজন সম্পন্ন হওয়ার প্রমাণ মিলেছে । আগে থেকেই যে বেকারত্ব এবং খাদ্যের অভাবের সমস্যা ছিল, প্যানডেমিকের ফলে তা আরও বেড়েছে । এই পরিস্থিতিতে সরকারের পক্ষে জরুরি হল , সমাজের বঞ্চিত , অবহেলিতদের জন্য সুষম আহারের বন্দোবস্ত করা ।
গ্লোবাল নিউট্রিশন রিপোর্ট 2017-এ জানা গিয়েছিল যে , ভারতীয় মহিলাদের মধ্যে 51 শতাংশই রক্তাল্পতায় ভুগছেন । রাষ্ট্রসংঘের একটি রিপোর্টে জানা গিয়েছে যে , 19 কোটি ভারতীয় বড় ধরনের পুষ্টিগত ঘাটতিতে আক্রান্ত । দেশের মোট জনসংখ্যার অন্তত 70 শতাংশ "মাসল মাস"-এর অভাব রয়েছে , যার কারণ পুষ্টির ঘাটতি । নীতি আয়োগের তরফে একটি ন্যাশনাল নিউট্রিশন স্ট্র্যাটেজি প্রকাশ করা হয়েছিল । যাতে পুষ্টির বিষয়টিকে জাতীয় উন্নয়ন কর্মসূচির তালিকার অন্তর্ভুক্ত করা যায় । আমাদের দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই রক্তাল্পতা এবং অপুষ্টি, এই দুই স্বাস্থ্য সমস্যায় জর্জরিত । জলাশয়ের দূষিত জল থেকে লাখ লাখ শিশু এমনকী , বড়রাও পেটের সমস্যা , ডায়েরিয়া এবং ফিতাকৃমির সংক্রমণে ভোগেন । পুষ্টিকর খাবার না পাওয়ায় 14 থেকে 49 বছর বয়সি মহিলাদের রক্তাল্পতা দেখা দেয় । যদিও নীতি আয়োগের কৌশলে অপুষ্টির মূল কারণগুলিকে চিহ্নিত করা গিয়েছে । তবু তাকে কাজে লাগিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষেত্রে বেশি দূর এগোনো যায়নি ।
কোরোনা যেখানে অসহায় এবং আর্থিক অস্বচ্ছ্বল পরিবারগুলিকে আরও দুর্দশার দিকে ঠেলে দিয়েছে, সেখানেই খিদের জ্বালা মেটানো এখনও কোটি কোটি ভারতীয়-র সবচেয়ে বড় প্রয়োজনীয়তা । এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্র জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তা আইনে পরিযায়ী শ্রমিকেদেরও অন্তর্ভুক্ত করেছে । যেখানে তাঁদের প্রতি মাসে পাঁচ কেজি খাদ্যশস্যের রেশন দেওয়া নিশ্চিত করা হয়েছে । অনুরূপভাবে, কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারগুলিকেও চাষিদের উৎপাদনকে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে এবং চাষিদের পাশে দাঁড়াতে হবে । সেটা অবশ্যই তাঁদের থেকে গ্রহণ করা ফসলের যথাযথ মূল্য প্রদান করে । ফলে চাহিদা ও সরবাহের শৃঙ্খল কখনও ভাঙবে না । পাশাপাশি সার্বিক পুষ্টির ধারণাকে বাস্তবায়িত করতে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলিকেও মজবুত করতে হবে ।