অসামরিক পারমাণবিক শক্তিতে এক যোগে কাজ করতে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে ভারত ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ৷ 13 বছরের দীর্ঘ আলোচনার পর দু’তরফে এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় ৷
পারমাণবিক শক্তি
By
Published : Jul 16, 2020, 7:51 PM IST
বিশ্বে একমাত্র ভারত ও চিন তাদের পারমাণবিক শক্তির উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ানোর চেষ্টা করছে ৷ বাকি দেশগুলি তাদের পারমাণবিক শক্তি উৎপাদন হয় কমিয়ে দিয়েছে অথবা বন্ধ করে দিয়েছে ৷
ভারতের পারমাণবিক শক্তির ক্ষেত্র এক নজরে-
দেশে 22টি বাণিজ্যিক পারমাণবিক শক্তির প্ল্যান্ট রয়েছে ৷ এই প্ল্যান্টগুলিতে মোট ছ’হাজার 780 মেগাওয়াট শক্তি উৎপাদিত হয় ৷ এরপর অতিরিক্ত 12টি পারমাণবিক চুল্লি তৈরির পরিকল্পনা করেছে কেন্দ্রীয় সরকার ৷ যেখানে ন’হাজার মেগাওয়াট শক্তি উৎপাদিত হবে ৷ ন’টি চুল্লি তৈরির কাজ ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে ৷ সেগুলির কাজ সম্পন্ন হলে ছ’হাজার 700 মেগাওয়াট শক্তি উৎপাদিত হবে ৷ দেশের পাঁচ জায়গায় 25 হাজার 248 মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন পারমাণবিক চুল্লি তৈরির পরিকল্পনা করেছে কেন্দ্রীয় সরকার ৷
ভারতে পারমাণবিক শক্তি উৎপাদনের লক্ষ্য-
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জিতেন্দ্র সিং চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে সংসদে বলেন, ‘‘বর্তমানে দেশে ছ’হাজার 780 মেগাওয়াট শক্তি উৎপাদিত হয় ৷ 2031-এর মধ্যে তা বাড়িয়ে 22 হাজার 480 মেগাওয়াট করা হবে ৷ ’’
পারমাণবিক শক্তির অনুমান ও বাস্তব ছবি-
ভারতের পারমাণবিক প্রোগ্রামের প্রতিষ্ঠাতা হোমি ভাবা 1980 সালে আনুমানিক আট হাজার মেগাওয়াট শক্তি উৎপাদনের কথা বলেছিলেন ৷ ওই সময় আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা বা IAEA জানিয়েছিল, ভারত 43 হাজার 500 মেগাওয়াট পারমাণবিক শক্তি উৎপাদন করতে পারে ৷ কিন্তু 1980 সালে ভারত মাত্র 600 মেগাওয়াট পারমাণবিক শক্তি উৎপাদন করেছিল ৷ 2000 সালে তা বেড়ে হয় দু’হাজার 720 মেগাওয়াট ৷ নিউক্লিয়ার পাওয়ার কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া লিমিটেড বা NPCIL এবছরের মধ্যে 20 গিগাওয়াট এবং 2032 সালের মধ্যে 60 গিগাওয়াট পারমাণবিক শক্তি উৎপাদন করবে ভারত ৷ 2010-এ তা পরিবর্তন হয় এবং 2011 সালে 63 গিগাওয়াট পার মাণবিক শক্তি উৎপাদন করে ভারত ৷ অ্যামেরিকার সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তি এবং ফ্রান্স, রাশিয়া, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, ব্রিটেন ও জাপানের মতো গোষ্ঠীর থেকে ছাড় পাওয়ায়, পারমাণবিক শক্তি বিভাগ (DAE) 2052 সালের মধ্যে 470 গিগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের কথা জানিয়েছে ৷
NDA সরকার আরও এক ধাপ এগিয়ে জানিয়েছে, ভারত 2032 সালের মধ্যে 63 হাজার মেগাওয়াট পারমাণবিক শক্তি উৎপাদন করবে ৷ NPCIL-এর তথ্য অনুযায়ী ভারত ছ’হাজার 780 মেগাওয়াট পারমাণবিক শক্তি উৎপাদন করে ৷ 22 টি পারমাণবিক চুল্লির মাধ্যমে এই পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয় ৷
পারমাণবিক শক্তি উৎপাদন (2010-’11 থেকে 2020-’21)
বছরে মোট উৎপাদন (মিলিয়ন ইউনিট-MU)
2020-21 (মে মাস পর্যন্ত)- 7658
2019-20- 46472
2018-19- 37813
2017-18- 38336
2016-17- 37674
2015-16- 37456
2014-15- 37835
2013-14- 35333
2012-13- 32863
2011-12- 32455
2010-11- 26472
রাজ্য অনুযায়ী পারমাণবিক শক্তি উৎপাদন-
রাজ্য
প্ল্যান্ট
ইউনিট
ক্ষমতা (মেগাওয়াট)
মহারাষ্ট্র
তারাপুর পরমাণু শক্তি কেন্দ্র
4
1,400
রাজস্থান
রাজস্থান পরমাণু শক্তি কেন্দ্র
6
1,180
তামিলনাড়ু
মাদ্রাজ় পরমাণু শক্তি কেন্দ্র
2
440
কর্নাটক
কাইগা জেনারেটিং স্টেশন
4
880
তামিলনাড়ু
কুড়ানকুলাম পারমাণবিক শক্তি কেন্দ্র
2
2000
উত্তরপ্রদেশ
নারোরা পরমাণু শক্তি কেন্দ্র
2
440
গুজরাত
কাকরাপার পরমাণু শক্তি কেন্দ্র
22
6,870
অন্য দেশের সঙ্গে ভারতের অসামরিক পারমাণবিক চুক্তি - 2019 সাল পর্যন্ত অ্যামেরিকা, ফ্রান্স, রাশিয়া, কানাডা, আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়া, শ্রীলংকা, ব্রিটেন, জাপান, ভিয়েতনাম, বাংলাদেশ, কাজাখস্তান, দক্ষিণ কোরিয়া এবং চেক রিপাবলিকের সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তি স্বাক্ষর করেছে ভারত ৷
ভারতীয় পারমাণবিক উৎপাদনের লক্ষ্যে প্রতিকূলতা-
পারমাণবিক শক্তি কেন্দ্র তৈরিতে দেরি
তামিলনাড়ুর কুড়ানকুলাম পারমাণবিক শক্তি কেন্দ্র চালু হতে 30 বছরের বেশি সময় লেগে যায়
অন্য পারমাণবিক শক্তি কেন্দ্রগুলির অবস্থা-
মহারাষ্ট্রের কোঙ্কনে জাইতাপুর পারমাণবিক শক্তি কেন্দ্র তৈরির কাজ 2010 সালে শুরু হয় ৷ কিন্তু এখনও তার কাজ সম্পন্ন হতে পারেনি ৷ ওই কেন্দ্র তৈরি হলে ন’হাজার 900 মেগাওয়াট শক্তি উৎপন্ন হবে ৷ গুজরাতের কাকরাপার পরমাণু শক্তি কেন্দ্রের অবস্থাও এক ৷ কুড়ানকুলাম পারমাণবিক শক্তি কেন্দ্রের তিন ও চার নম্বর ইউনিট চালু হয়েছে ৷
CAG-র রিপোর্ট অনুযায়ী ভারতের পারমাণবিক কেন্দ্র তৈরিতে ক্ষমতার বাইরে গিয়ে অর্থ ব্যয় করা হয় ৷ এমনকী তাদের পরিকাঠামো পর্যন্ত দুর্বল ৷ কুড়ানকুলাম পারমাণবিক শক্তি কেন্দ্রের এক ও দু’নম্বর ইউনিট তৈরিতে খরচ ধরা হয়েছিল 13,171 কোটি টাকা ৷ পরে তা বেড়ে দাঁড়ায় 22,462 ৷
এর পাশাপাশি আরও অন্যান্য কারণে পারমাণবিক কেন্দ্র তৈরিতে দেরি হয় ৷ প্রয়োজনীয় সামগ্রী সরবরাহে দেরি, বিদেশি সহযোগীদের থেকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পেতে দেরি হয় ৷ ডিজ়াইনে পরিবর্তন ৷ পারমাণবিক শক্তির বিরুদ্ধে গণ আন্দোলনের ফলে অনেক সময় দেরি হয় ৷
তামিলনাড়ুতে গণ আন্দোলনের ফলে কুড়ানকুলাম পারমাণবিক শক্তি কেন্দ্র তৈরিতে দেরি হয় ৷ এই ঘটনায় আট হাজার 952 জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের এবং 11 হাজার জনকে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধের অভিযোগে মামলা করা হয় ৷ মহারাষ্ট্রের জাইতাপুর পারমাণবিক শক্তি কেন্দ্রে দু’জনের মৃত্যু হয় ৷ এই ঘটনায় স্থানীয় মানুষজন বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন ৷ অন্ধ্রপ্রদেশের কোভাড়ায় প্রস্তাবিত পারমাণবিক শক্তি কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষ প্রতিবাদ জানান ৷
হরিয়ানার গোরখপুরে দু’হাজার 800 মেগাওয়াটের প্রস্তাবিত পারমাণবিক শক্তি কেন্দ্রের বিরুদ্ধে কৃষকরা রাস্তায় নামেন ৷ মধ্যপ্রদেশের চুটকায় একভাবে প্রস্তাবিত এক হাজার 400 মেগাওয়াট পারমাণবিক শক্তি কেন্দ্রের বিরোধিতা করা হয় ৷ গুজরাত, কর্নাটক, পশ্চিমবঙ্গের হরিপুরে পারমাণবিক শক্তি কেন্দ্র তৈরিতে বাধার মুখে পড়ে রাজ্য সরকারগুলি ৷ ফুকুশিমা দুর্ঘটনার পর পারমাণবিক শক্তি কেন্দ্র তৈরির সময় সাধারণ মানুষের সুরক্ষা ও নিরাপত্তার বিষয়টি লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন ৷